Beta
সোমবার, ১২ মে, ২০২৫
Beta
সোমবার, ১২ মে, ২০২৫

প্রতিরক্ষা কূটনীতিতে সক্ষমতা বাড়াতে আরও বাজেট চান সেনাপ্রধান

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) এর আলোচনা অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) এর আলোচনা অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।
[publishpress_authors_box]

প্রতিরক্ষা কূটনীতিতে সাফল্য আনতে এই খাতে অর্থ বরাদ্দ বাড়ানোর প্রয়োজন বলে মনে করেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন।

তিনি বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্র প্রতিরক্ষা কূটনীতি এগিয়ে থাকে, কারণ তাদের বাজেট অনেক। ফলে ওরা অনেকের সাথে কাজ করতে পারে। আমরা জানি আমাদের কী করতে হবে, কিন্তু তা করার সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। এর জন্য আমাদের প্রয়োজন রিসোর্স এবং বাজেট।”

বৃহস্পতিবার ‘প্রতিরক্ষা কূটনীতিঃ বাংলাদেশের কৌশল’ শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে একথা বলেন সেনাপ্রধান। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) এই আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজন করে।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ ছিল প্রায় ৫ শতাংশ। এ খােত বরাদ্দ ৪১ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা আগের অর্থবছরের তুলনায় ১ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা বেশি। ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৭ হাজার ২৮০ কোটি টাকা।

প্রতিরক্ষা কূটনীতি বজায় রাখার জন্য দেশের অবস্থানও যে গুরুত্বপূর্ণ, তাও বলেন জেনারেল শফিউদ্দিন। তিনি বলেন, “প্রতিরক্ষা কূটনীতিতে প্রথম বিশ্বের একজনের বক্তব্য এবং তৃতীয় বিশ্বের আরেকজনের কথার গুরুত্ব কিন্তু দুইরকম। ফলে, চাইলেই অনেক কিছু অনেক সময় পারা যায় না।”

প্রতিরক্ষা কূটনীতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিজস্ব উপায়ে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান সেনাপ্রধান।

সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, “২০১৪ সালে আমি যখন যাই, তখন সেখানে প্রথমে আমি অ্যামবুশের শিকার হয়েছিলাম। বুলেটপ্রুফ গাড়ি থাকায় বেঁচে যাই। আজ সেই দেশের সেনার জন্য আমাদের দেশ থেকে সেনা পোশাক যাচ্ছে। দেশটিকে স্থিতিশীল করতে আমাদের সময় লেগেছে, কিন্তু আজকে আমরা তার ফল পাচ্ছি।”

প্রতিরক্ষা কূটনীতিতে সফলতার জন্য বিভিন্ন দেশের সেনার সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার ওপরও জোর দেন তিনি।

শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, “দেশের স্বার্থে সামরিক কৌশল দরকার এবং এর মাধ্যমে বিভিন্ন ইস্যুতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমাদের অবস্থান ঠিক করি। বিচ্ছিন্নভাবে এটি অর্জন করার সুযোগ নেই। মাঝে মাঝে আমাদের তাই ভাবনা আসে, কে নেতৃত্ব দেবে বা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব কার হাতে থাকবে? এটা কখনও কখনও সমস্যা তৈরি করে।”

সরকারি কাজে সমন্বয়ের জন্য একটি নির্দিষ্ট সংস্থার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, “অনেক বিষয় আছে, যেটা আমরা শুরু করেছিলাম, কিন্তু শেষ করতে পারিনি। কারণ পরবর্তীতে সেটি আমাদের হাতে থাকেনি।

“যখনই আমি ব্যবসা খাতের জন্য একটি সম্ভাবনা খুঁজে বের করলাম, সেটি পরবর্তীতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে চলে যায়। কাজেই এখানে যে প্রস্তাব এসেছে, সেটি আমি সমর্থন করি এবং মনে করি একটি সংস্থা দরকার যেটি সমন্বিত উদ্যোগ নিশ্চিত করবে, যার মাধ্যমে যেটি অর্জন করা হয়েছে সেটি হারিয়ে যাবে না এবং এর ভবিষ্যৎ কার্যক্রম ঠিক করবে।”

অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, জাতিসংঘ মিশনে আফ্রিকায় সেনাবাহিনী সফল হলেও অন্যান্য কূটনীতিতে সফলতা আসেনি।

“সেখানকার সরকাররা আমাদের দু হাত খুলে বরণ করে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল। কিন্তু আমরা তাদের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক শক্তিশালী করতে পারিনি। এটা আমাদের ব্যর্থতা হিসেবেই আপনি নিতে পারেন।”

‘কাউকে খুশি করতে গিয়ে কারও বিরাগভাজন হতে পারি না’

অনুষ্ঠানে বিভিন্নজনের আলোচনায় বার বার উঠে এসেছে মিয়ানমার এবং রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ। মুক্ত আলোচনায় বেশ কয়েকজন সাবেক সেনা সদস্য বলেন, মিয়ানমারে যেহেতু সামরিক বাহিনী দেশ শাসন করছে, সেহেতু সেনাবাহিনী আলোচনায় ভূমিকা নিতে পারে।

তার পরিপ্রেক্ষিতে সেনাপ্রধান শফিউদ্দিন বলেন, “মিয়ানমারের নেতৃত্বের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। কিন্তু আপনার জানেন, মিয়ানমারের অনেক সেনা কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

“এমন পরিস্থিতিতে তাদের সঙ্গে বসা নিজেদের ঝুঁকিতে ফেলে দেওয়া হবে। কারণ সব দেশই আমাদের বন্ধু। কাজেই একটি বন্ধু রাষ্ট্রকে খুশি করতে গিয়ে অন্য কারও বিরাগভাজন হতে পারি না। এই বাস্তবতা আমাদের মাথায় রাখতে হয়।”

সেনাবাহিনীর নিজস্ব সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, “অভিপ্রায় হঠাৎ করে বদলে যেতে পারে, কিন্তু সক্ষমতা হঠাৎ করে বদলায় না। আজ একজন বন্ধু আছে, কিন্তু কাল সে বন্ধু নাও থাকতে পারে।

“জাতীয় স্বার্থ ও মাতৃভূমি সুরক্ষার জন্য আমাদের তৈরি থাকতে হবে। পররাষ্ট্রনীতির মূল মন্ত্র ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এবং সামরিক বাহিনী পররাষ্ট্র নীতির উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য সবকিছু করছে। সামরিক বাহিনীর মূল কাজ হচ্ছে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা এবং আমরা এটি কখনও ভুলি না। আমরা সব সময় এর জন্য তৈরি।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত