পূর্ব জার্মানির দুটি প্রাদেশিক আইনসভার নির্বাচনে উগ্র ডানপন্থী দল অল্টারনেটিভ ফর জার্মানির (এএফডি) উত্থান ঘটেছে। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দেশটির ক্ষমতাসীন সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এসপিডি) নেতৃত্বাধীন জোট সরকার।
জোট সরকারের প্রধান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস এই ফলাফলকে ‘তিক্ত’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। পাশাপাশি মূলধারার দলগুলোর প্রতি ‘ডানপন্থী চরমপন্থী’দের ছাড়াই সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি) প্রথম ডানপন্থী দল যারা কোনও প্রাদেশিক আইনসভার নির্বাচনে জয়ী হল। এটি একটি উগ্র জাতীয়তাবাদী, অভিবাসন বিরোধী এবং রাশিয়া-বান্ধব দল। দলটিকে একবার একটি নাৎসি স্লোগান ব্যবহার করায় জরিমানাও করা হয়েছে। দলটিরও নাৎসিদের মতো কিছু নীতি আছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
রবিবার পূর্ব জার্মানির থুরিংগিয়া প্রদেশে অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক আইনসভার নির্বাচনে জয়ী হয়েছে দলটি। আর স্যাক্সনি প্রদেশে রক্ষণশীলরা জয়ী হলেও এএফডি সামান্য ব্যবধানে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।
তবে এএফডি জয়ী হলেও সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। কারণ অন্যান্য দলগুলো তাদের সঙ্গে সহযোগিতা বা জোট গঠন করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
কিন্তু সরকার গঠন করতে না পারলেও এএফডি দুটি রাজ্যেই শক্তিশালী অবস্থানে থাকবে এবং অভূতপূর্ব ক্ষমতা চর্চা করতে পারবে।
তাদের বাদ দিয়ে বাকি দলগুলো জোট করে সরকার গঠন করতে পারলেও দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। এতে বিচারক বা শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের নিয়োগের মতো সিদ্ধান্তগুলো আটকে দিতে পারবে এএফডি।
রয়টার্সকে দেওয়া এক বিবৃতিতে শলৎস বলেছেন, “স্যাক্সনি ও থুরিংগিয়ায় এএফডির ফলাফল উদ্বেগজনক।” তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, তিনি তার মধ্য-বাম সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটস (এসপিডি) এর একজন আইন প্রণেতা হিসেবে কথা বলছেন।
শলৎস বলেন, “আমাদের দেশ এটিতে অভ্যস্ত হতে পারে না এবং হওয়া উচিতও নয়। এএফডি জার্মানির ক্ষতি করছে। এটি অর্থনীতিকে দুর্বল করছে, সমাজকে বিভক্ত করছে এবং আমাদের দেশের সুনাম নষ্ট করছে।”
জার্মানির পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের আর এক বছর বাকি আছে। তার আগে প্রাদেশিক নির্বাচনের এই ফলাফল শলৎসের বিভক্ত জোটের জন্য শাস্তি স্বরূপ। এতে তার জোট সরকারে অন্তর্কোন্দল আরও বাড়বে। জনমত জরিপগুলোতে দেখা গেছে, জাতীয় নির্বাচনেও এএফডি দ্বিতীয় স্থানে থাকবে।
ক্ষমতাসীন জোটের তিনটি দলই ভোট হারিয়েছে। এসপিডি শুধুমাত্র দুটি রাজ্যের সংসদে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় ৫ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পেরেছে।
শলৎস বলেন, “রবিবার নির্বাচনের ফলাফল তিক্ত, আমাদের জন্যও।” তবে তিনি এও উল্লেখ করেন যে, আরও ভয়ঙ্কর ভবিষ্যদ্বাণী ছিল। এসপিডি প্রথমবারের মতো রাজ্য পার্লামেন্ট থেকে ছিটকে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করা হয়েছিল। সেটা সত্য হয়নি।
রবিবারের এই ফলাফলে অভিবাসন বিষয়ে আরও কঠোর হতে এবং ইউক্রেনের পক্ষে সমর্থন নিয়ে বিতর্ক তীব্র করতে সরকারের ওপর চাপ বাড়তে পারে। নির্বাচনের আগে ভোটের প্রচারভিযানে এই দুটি ইস্যু সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছিল।
তৃতীয় পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ব্র্যান্ডেনবার্গেও আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে ভোট হতে চলেছে। সেখানেও এএফডিকে জনমত জরিপে এগিয়ে থাকতে দেখা গেছে। তবে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট এবং রক্ষণশীলরা মাত্র কয়েক পয়েন্ট পিছিয়ে রয়েছে।
থুরিংগিয়ায় এএফডি জয়ী হওয়ায় সেখানকার অনেক বাসিন্দা বিক্ষোভও করেছেন। প্রতিবাদকারীদের একজন স্থানীয় ছাত্রী হান্না বলেন, তিনি ফলাফল নিয়ে খুব চিন্তিত।
“দলটির কিছু নাৎসি নীতি রয়েছে এবং এ ব্যাপারে তারা কোনও পরোয়া করে না। অথচ নাৎসিবাদ মোকাবেলায় জার্মানির দায়িত্ব রয়েছে।”
তথ্যসূত্র: বিবিসি, রয়টার্স