Beta
শুক্রবার, ১৬ মে, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ১৬ মে, ২০২৫

২১৭ বার কোভিডের টিকা নিয়েছেন তিনি!

কোভিডের টিকা মানবদেহে সংক্রমণ ঘটাতে পারে না, তবে শরীরকে রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করা শেখাতে পারে। ছবি : বিবিসি
কোভিডের টিকা মানবদেহে সংক্রমণ ঘটাতে পারে না, তবে শরীরকে রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করা শেখাতে পারে। ছবি : বিবিসি
[publishpress_authors_box]

বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পর সুরক্ষার জন্য টিকা নেওয়ার কথা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাই বলেছিলেন। পরামর্শ মেনে দেশে দেশে মানুষ টিকাও নিয়েছেন। কোভিডজনিত মৃত্যু ঠেকাতে টিকার এক বা দুটি ডোজই যথেষ্ট হলেও বাড়তি সতর্কতা হিসেবে একটি বা দুটি বুস্টার ডোজও নিয়েছেন অনেকে। তাই বলে ২১৭ বার টিকা নেওয়ার কথা ভাবা যায়!

আর কেউ ভেবেছেন কিনা জানা না গেলেও জার্মানির এক ব্যক্তি শুধু এমনটি ভেবেই ক্ষান্ত হননি, গুনে গুনে ২১৭ বার টিকাও নিয়েছেন।

এই অদ্ভূত এক ঘটনার কথাই দ্য ল্যানসেট ইনফেকশাস ডিজিজেস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে বলে বুধবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, ৬২ বছর বয়সী জার্মানির ওই নাগরিক ব্যক্তিগতভাবে টিকাগুলো কেনেন এবং চিকিৎসকদের পরামর্শ না মেনে ২৯ মাসের মধ্যে ২১৭ বার টিকা নেন।

এরল্যাঙ্গেন-নুরেমবার্গ ইউনিভার্সিটির গবেষকরা জানিয়েছেন, এতবার টিকা নিলেও জার্মানির এই নাগরিকের শরীরের এর কোনও খারাপ প্রভাব পড়েনি বলেই মনে হচ্ছে।

খুব আগ্রহী’

এরল্যাঙ্গেন-নুরেমবার্গ ইউনিভার্সিটির মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ডা. কিলিয়ান স্কোবার বলেন, “আমরা সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনের মাধ্যমে তার ঘটনাটি সম্পর্কে জানতে পারি। তারপরে আমরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং শারীরিক বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য তাকে এরল্যাঙ্গেনে আমন্ত্রণ জানাই। তিনিও পরীক্ষাগুলো করার ব্যাপারে খুব আগ্রহী ছিলেন।”

পরে পরীক্ষার জন্য জার্মানির ওই নাগরিকের রক্ত ও লালার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। গবেষকরা ওই লোকের জমাট বাঁধা রক্তের কিছু নমুনাও পরীক্ষা করেন, যেসব নমুনা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সংরক্ষণ করা হয়েছিল।

ডা. স্কোবার বলেন, “তাকে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলাকালেই তিনি একডোজ টিকা নেন এবং তখনও আমরা তার রক্তের নমুনা সংগ্রহ করি। আমরা তার রক্তের নমুনাগুলো ব্যবহার করি এটা জানার জন্য যে, টিকা নেওয়ার পর তার দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ঠিক কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়।”

ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ উঠলে তদন্তে নেমে ম্যাগডেবার্গ শহরের সরকারি কৌঁসুলি তার বিরুদ্ধে ১৩০ বার টিকা নেওয়ার প্রমাণ সংগ্রহ করতে সক্ষম হন, তবে ওই লোকের বিরুদ্ধে কোনও ফৌজদারি অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা

চিকিৎসকদের মতে, কোভিডের টিকা মানবদেহে সংক্রমণ ঘটাতে পারে না, তবে শরীরকে রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করা শেখাতে পারে।

মেসেঞ্জার রাইবোনিউক্লিক এসিড (এমআরএনএস) টিকাগুলো মানবদেহের কোষকে ভাইরাসের কিছু জিনগত কোড দেখিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে কাজ করে।

এ কারণে টিকা নেওয়া কোনও ব্যক্তির দেহে কোভিডের সংক্রমণ হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা তা শনাক্ত করতে এবং ওই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।

ডা. স্কোবারের আশঙ্কা ছিল, বারবার কোভিডের টিকা নেওয়ার কারণে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অতিরিক্ত মাত্রায় উদ্দীপিত হয়ে শরীরের নির্দিষ্ট কিছু কোষকে ক্লান্ত করে দিতে পারে। কিন্তু ওই ব্যক্তির ওপর ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেও গবেষকরা এমন কোনও প্রমাণ পাননি। আর তিনি কখনও কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন— এমন প্রমাণও মেলেনি।

‘অতিরিক্ত টিকার দরকার নেই’

গবেষকরা বলেন, “গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, অভিযোজিত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির কৌশল হিসেবে আমরা অতিরিক্তমাত্রায় টিকাদানকে সমর্থন করি না।”

তারা বলেন, “বর্তমান গবেষণায় দেখা গেছে, সাধারণ মানুষের জন্য দুই ডোজ এবং অরক্ষিত বা ঝুঁকির মুখে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য এর সঙ্গে বাড়তি এক ডোজ, সবমিলিয়ে সর্বোচ্চ তিন ডোজ টিকা নেওয়ার পদ্ধতিটিই ভালো। আরও টিকার প্রয়োজন আছে— এমন কোনও ইঙ্গিত মেলেনি।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত