অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে জার্মানি তার সমস্ত স্থল সীমান্তে কড়া নিয়ন্ত্রণ শুরু করেছে। ইউরোপজুড়ে বিস্তৃত সেনজেন অঞ্চলেও অবাধ চলাচলের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এতে দেশটির প্রতিবেশীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
আগে থেকেই অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড, চেক প্রজাতন্ত্র ও পোল্যান্ডের সঙ্গে সীমান্ত কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল জার্মানি। সোমবার থেকে ফ্রান্স, লুক্সেমবুর্গ, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম ও ডেনমার্কের সঙ্গে সীমান্তেও কড়া নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়।
জার্মান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বার্লিনের হাতে সমস্ত স্থল সীমান্তে অভিবাসন প্রত্যাশীদের প্রবেশাধিকার প্রত্যাখ্যান করার ক্ষমতা থাকবে । নতুন নিয়ম প্রাথমিকভাবে ছয় মাস চলবে।
অভিবাসনের ফ্ল্যাশপয়েন্ট ইস্যুতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জার্মানি কতটা এগিয়েছে তা চিহ্নিত করছে এই পদক্ষেপ।
অ্যাঙ্গেলা মের্কেলের অধীনে জার্মান সরকার ২০১৫-২০১৬ সালের অভিবাসী সঙ্কটের সময় ১০ লাখেরও বেশি নতুন অভিবাসীকে স্বাগত জানিয়েছিল। এরপর ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরু করলে আরও ১০ লাখ ইউক্রেনীয় অভিবাসীকে আশ্রয় দেয়।
কিন্তু এখন ডানপন্থীদের ক্রমবর্ধমান বিরোধিতার মুখোমুখি হওয়ায় অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোর অনুসরণে অভিবাসন নীতি কঠোর করছে। সম্প্রতি ছুরি হামলার কয়েকটি ঘটনায় ডানপন্থীরা অভিবাসন সীমিত করার দাবি তোলে।
এতে দেশটির উগ্র ডানপন্থী শক্তির প্রতি ভোটারদের সমর্থনও বাড়ছে। গত মাসে অভিবাসন বিরোধী অতি-ডানপন্থী দল অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি) থুরিনিজিয়া রাজ্য নির্বাচনে জিতেছে এবং স্যাক্সনিতে দ্বিতীয় হয়েছে।
ব্র্যান্ডেনবুর্গের আসন্ন রাজ্য নির্বাচনের আগেও জরিপে এএফডি এগিয়ে রয়েছে। ফেসারের সোশাল ডেমোক্রেটরা বর্তমানে গ্রিনস এবং ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে রাজ্যটি শাসন করছে।
জার্মানি গত শুক্রবার কেনিয়ার সঙ্গে একটি নিয়ন্ত্রিত অভিবাসন চুক্তি করেছে। আর তারপরই দেশটি নতুন করে সীমান্তে এই কড়া নিয়ন্ত্রণ আরোপের ঘোষণা দিল। ওই চুক্তির মাধ্যমে কেনিয়া থেকে আসা দক্ষ এবং আধা-দক্ষ কর্মীদের জন্য জার্মানি তার দরজা খুলেছে।
পরিবর্তনগুলো ঘোষণা করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেসার বলেছেন, জার্মানি বাস্তব পদক্ষেপের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা জোরদার করছে এবং অনিয়মিত অভিবাসনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে।
তিনি ইঙ্গিত দেন যে, এই পদক্ষেপের লক্ষ্য হলো জার্মান নাগরিকদের ইসলামি সন্ত্রাসবাদের পাশাপাশি গুরুতর আন্তঃসীমান্ত অপরাধের বিপদ থেকে রক্ষা করা।
কিন্তু এই পদক্ষেপ ইউরোপীয় ব্লকের ঐক্যকে পরীক্ষায় ফেলে দিয়েছে এবং জার্মানি প্রতিবেশীদের সমালোচনার মুখে পড়েছে।
জার্মানিও ইউরোপের ভিসামুক্ত অঞ্চল সেনজেনের অংশ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিয়ম অনুযায়ী, এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সরকারি নীতি বা অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকির ক্ষেত্রে সীমান্তে অস্থায়ীভাবে কড়া নিয়ন্ত্রণ পুনরায় আরোপ করার অধিকার রয়েছে। তবে, তা শুধু আর কোনও উপায় না থাকলেই প্রয়োগ করা উচিৎ।
পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক বলেছেন, জার্মানির স্থল সীমান্তে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ পোল্যান্ডের জন্য অগ্রহণযোগ্য।
তিনি বলেন, ওয়ারশ ক্ষতিগ্রস্ত সমস্ত দেশের সঙ্গে জরুরি আলোচনার অনুরোধ করবে। গ্রিস ও অস্ট্রিয়া উভয়ই সতর্ক করেছে যে তারা জার্মানির কাছে প্রত্যাখ্যাত অভিবাসীদের গ্রহণ করবে না।
জার্মানির অভিবাসন কাউন্সিল সতর্ক করেছে, জার্মান সরকারের এই পরিকল্পনায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইন লঙ্ঘনের ঝুঁকি রয়েছে।
তথ্যসূত্র : সিএনএন, আল জাজিরা