এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেওয়া মোট ২০ লাখ ১৩ হাজার ৫৯৭ শিক্ষার্থীর অংশ নেয়। এর মধ্যে ৮ লাখ ৬ হাজার ৫৫৩ ছাত্র ও ৮ লাখ ৬৫ হাজার ৬০০ ছাত্রী পাস করেছে।
শতকরা হিসাবে এবার ৮১ দশমিক ৫৭ ভাগ ছাত্র উত্তীর্ণ হয়েছে। আর ছাত্রীদের পাসের হার ৮৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ। অর্থাৎ ছাত্রদের চেয়ে ছাত্রীরা এবার ভালো করেছে। ছাত্রীদের পাসের হার প্রায় ৩ শতাংশ বেশি।
গণভবনে রবিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার সারসংক্ষেপ তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এরপর ফলাফল প্রকাশ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিন বেলা ১১টার দিকে সংশ্লিষ্ট সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অনলাইনে একযোগে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়।
এবার গড় পাসের হার ৮৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ, যা গত বছরের চেয়ে ২ দশমিক ৬৫ শতাংশ পয়েন্ট বেশি।
গত বছর গড় পাসের হার ছিল ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
ফেব্রুয়ারির ১৫ তারিখে শুরু হয় এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা। ৯টি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এসএসসি, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দাখিল এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) পরীক্ষার ফল বলছে, এসব পরীক্ষার সবগুলোতে এবার ছেলেদের পেছনে ফেলেছে মেয়েরা।
এ বছরের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৮৫ শতাংশ ছাত্রী পাস করেছে। আর ছাত্রদের মধ্যে পাসের হার ৮২ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
দাখিল পরীক্ষাতেও ছাত্রদের চেয়ে ছাত্রীরা এগিয়ে। সেখানে ছাত্র ও ছাত্রীদের পাসের হার যথাক্রমে ৭৮ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং ৮০ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় যথারীতি ছাত্রীরা এগিয়ে আছে। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এই পরীক্ষায় ৭৯ দশমিক ১৯ শতাংশ ছাত্র উত্তীর্ণ হয়েছে এবং ৮৮ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ ছাত্রী পাস করেছে।
অবশ্য কেবল এবার নয়। গত বছরও ছাত্রীরা ছাত্রদের থেকে এগিয়ে ছিল। সে বছর ছাত্রী পাসের হার ছিল ৮১ দশমিক ৮৮ শতাংশ। অন্যদিকে ছাত্র পাসের হার ছিল ৭৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
কারণ খোঁজার নির্দেশ
এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ছাত্ররা কেন ছাত্রীদের থেকে পিছিয়ে পড়ছে, তার কারণ খুঁজে বের করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পরীক্ষার ফল প্রকাশ উপলক্ষে রবিবার সকালে গণভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাক্ষরতার হার বেড়েছে। শিক্ষায় অংশ নেওয়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও অনেক বেড়েছে। মেয়েদের হার অনেক বেড়েছে। প্রাথমিকে একসময় ৫৪ শতাংশ ছাত্রী যেত। এখন ৯৮ শতাংশ মেয়ে স্কুলে যায়।
ফলের পরিসংখ্যানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ফলাফল দেখে আমি হিসাব করছিলাম, প্রত্যেকটা বোর্ডে আমাদের শিক্ষার্থীর সংখ্যা কত। মাত্র তিনটা বোর্ডে ছাত্রের সংখ্যা একটু বেশি। অধিকাংশ জায়গায় ছাত্রীদের সংখ্যা বেশি।
“এটা একদিকে খুশির খবর, কারণ নারীশিক্ষার ওপর আমরা বেশি জোর দিয়েছি। এইচএসসি পর্যন্ত মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক করেছি।”
মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রসংখ্যা ৯ লাখ ৯৯ হাজার ৩৬৪ জন আর ছাত্রীসংখ্যা ১০ লাখ ৩৮ হাজার ৭০০ জন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “কেন ছাত্র সংখ্যা কমে যাচ্ছে সেই কারণ আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। কী কারণে ছাত্র কমে যাচ্ছে?”
তিনি বলেন, “পাসের হারে মেয়েরা এগিয়ে, সেটা খুব ভালো কথা। কিন্তু তারপরও আমি বলব, এই বিষয়টায় আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। বিনামূল্যে বই দিচ্ছি, বৃত্তি দিচ্ছি, প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত বৃত্তি দিয়ে যাচ্ছি।”
প্রধানমন্ত্রী ছেলেশিক্ষার্থীর সংখ্যা কমার কারণ জানতে পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়ে বলেন, “বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে (বিবিএস) বলতে পারি, জরিপের সময় এটা জানার চেষ্টা করতে। কী কারণে ছেলেরা কমবে?
“মেয়েরা বাড়লে খুশি হই, সমান সমান হলে ভালো। কিন্তু ছেলে কেন কমল, এটা জানতে হবে। ছেলেরা পিছিয়ে আছে কেন জানতেই হবে। এটা যার যার বোর্ডে খোঁজ নেবেন। কিশোর গ্যাং কালচার দেখতে পাচ্ছি। কাজেই এটা খতিয়ে দেখতে হবে।”