দ্বাদশ জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার চেয়ারটি পেলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী রবিবার তাকে এ স্বীকৃতি দিয়েছেন।
স্বতন্ত্র না জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা বিরোধী দলের আসনে বসতে যাচ্ছেন তা নিয়ে আলোচনার মধ্যেই এই সিদ্ধান্ত এলো। দ্বাদশ সংসদে দলের কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বিরোধীদলীয় উপনেতার চেয়ারে বসতে যাচ্ছেন।
একাদশ সংসদেও বিরোধীদলীয় নেতা হতে চেয়েছিলেন জি এম কাদের; দলে বিবাদের মধ্যে স্পিকারের কাছে চিঠিও দিয়েছিলেন জাতীয় পার্টির একদল সংসদ সদস্য। তবে শেষমেষ রওশন এরশাদই থেকে যান বিরোধীদলীয় নেতার আসনে।
আরও পড়ুন জি এম কাদেরের ভাগ্যের শিকে এবার ছিঁড়ছে
জিএম কাদের এমন দিনে সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচিত হলেন যেদিন দলের জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ নিজেকে দলটির চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন। জাপার চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে তাদের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
তবে জাতীয় পার্টির শীর্ষ পদধারী কাউকে অব্যাহতি দেওয়ার এখতিয়ার রওশন এরশাদের আছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।
আরও পড়ুন রওশনের কথা আমলেই নিচ্ছেন না জি এম কাদের
সংসদ সচিবালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সংসদে সরকারি দলের বিরোধীতাকারী সর্বোচ্চ সংখ্যক সদস্য লইয়া গঠিত ক্ষেত্রমতো দল বা অধিসঙ্ঘের নেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের (২১ রংপুর-৩)-কে জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালী-বিধির ২(১)(ট) অনুযায়ী বিরোধীদলের নেতা এবং বিরোধীদলের নেতা এবং উপনেতা (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) আইন, ২০২১ মোতাবেক ২৮২ চট্টগ্রাম-৫ হতে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে বিরোধীদলের উপনেতা হিসেবে স্পিকার স্বীকৃতি প্রদান করিলেন।
বিএনপিবিহীন সংসদে এবার জাতীয় পার্টির আসন স্বতন্ত্র প্রার্থীদের চেয়ে কমে গেলে বিরোধী দল কে হবে, তা নিয়ে ওঠে প্রশ্ন। কারণ জাতীয় পার্টির চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি আসনধারী স্বতন্ত্র এমপিরা জোট বাঁধলে তাদেরও প্রধান বিরোধী দলের আসন নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়।
একাদশ সংসদের সদস্যদের শপথ নেওয়ার এক সপ্তাহ পর প্রধান বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টিকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন স্পিকার। এবার শপথ হয়েছে গত ১০ জানুয়ারি। সংসদ অধিবেশন বসছে আগামী ৩০ জানুয়ারি।
স্বতন্ত্র না জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা বিরোধী দলের আসনে বসছেন সে আলোচনার মধ্যে গত ২২ জানুয়ারি জিএম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা বানানোর সিদ্ধান্ত নেয় দলটি। জাতীয় পার্টি বিরোধী দলের নেতা হিসেবে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে মনোনীত করে স্পিকারকে চিঠিও পাঠায়। সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার ছিল স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, জাতীয় পার্টিই বসতে যাচ্ছে প্রধান বিরোধী দলের আসনে। সেক্ষেত্রে জি এম কাদেরই হবেন বিরোধীদলীয় নেতা।
সংসদের কার্যপ্রণালী বিধিতে ‘বিরোধীদলীয় নেতা’র সংজ্ঞায় বলা হয়েছে- ‘স্পিকারের বিবেচনামতে যে সংসদ সদস্য সংসদে সরকারি দলের বিরোধিতাকারী সর্বোচ্চসংখ্যক সদস্য লইয়া গঠিত ক্ষেত্রমত দল বা অধিসঙ্ঘের নেতা।’
সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা মন্ত্রীর মর্যাদা পান। তাদের কিছু সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। সংসদ ভবনে তার জন্য কার্যালয়ও রয়েছে।
স্পিকার সরাসরি না বললেও সংসদ সচিবালয় থেকে আসন বিন্যাসের যে খসড়া তৈরি হয়েছে, তাতে অধিবেশন কক্ষের বিরোধী বেঞ্চের প্রথম সারির প্রথম আসনটিই জি এম কাদেরের জন্য রাখা হয়েছে।
জাতীয় পার্টির ১১ জন এমপির প্রথম সারির পাশাপাশি পেছনের দুটি সারির মধ্যেই আসন দেওয়া হচ্ছে। বিরোধী বেঞ্চের সামনের সারিতে দু একজন স্বতন্ত্র এমপির নামও আছে।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের সংখ্যা এবার যেখানে ৬২, সেখানে জাতীয় পার্টির আসন ১১টি। এর বাইরে ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও কল্যাণ পার্টির একটি করে আসন রয়েছে।
এইচ এম এরশাদের দল জাতীয় পার্টিতে বড় কোন্দল দেখা দেয় তার মৃত্যুর পর। এক পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন স্ত্রী রওশন এরশাদ, অন্য পক্ষে ভাই জি এম কাদের।
দলের কর্তৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ২০২২ সালে জাতীয় পার্টির একদল সংসদ সদস্য রওশনকে সরিয়ে কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা করতে স্পিকারকে চিঠি দিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন নিজেকে জাপার চেয়ারম্যান ঘোষণা করলেন রওশন
পরে জাতীয় পার্টির শীর্ষনেতাদের মধ্যস্থতায় রফা হলে রওশনের বিরোধীদলীয় নেতার আসন টিকে যায়, আর জি এম কাদের নেন দলের চেয়ারম্যানের পদ।
কোন্দলের জেরে এবার রওশন ভোটেই অংশ নেননি। উল্টো জাতীয় পার্টিকে জোটে না নিতে বা আসন সমঝোতা না করতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধও করেছিলেন। তবে তার কথা রাখেনি আওয়ামী লীগ।