Beta
মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫

জি এম কাদেরের ভাগ্যের শিকে এবার ছিঁড়ছে

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। গত ১০ জানুয়ারি তিনি দ্বাদশ সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেন।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। গত ১০ জানুয়ারি তিনি দ্বাদশ সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেন।
[publishpress_authors_box]

একাদশ সংসদেও বিরোধীদলীয় নেতা হতে চেয়েছিলেন জি এম কাদের; দলে বিবাদের মধ্যে স্পিকারের কাছে চিঠিও দিয়েছিলেন জাতীয় পার্টির একদল সংসদ সদস্য। তবে শেষমেষ রওশন এরশাদই থেকে যান বিরোধীদলীয় নেতার আসনে।

জি এম কাদেরের সেই অপূর্ণ আশা এবার পূরণ হতে যাচ্ছে, তেমন ইঙ্গিতই এবার মিলছে। জাতীয় পার্টি এরই মধ্যে দ্বাদশ সংসদে তাকে বিরোধীদলীয় নেতা বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার যার, সেই স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এখনও কোনো সিদ্ধান্ত দেননি।

তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কথায় স্পষ্ট, জাতীয় পার্টিই বসতে যাচ্ছে প্রধান বিরোধী দলের আসনে। সেক্ষেত্রে জি এম কাদেরই হবেন বিরোধীদলীয় নেতা।

বিএনপিবিহীন সংসদে এবার জাতীয় পার্টির আসন স্বতন্ত্র প্রার্থীদের চেয়ে কমে গেলে বিরোধী দল কে হবে, তা নিয়ে ওঠে প্রশ্ন। কারণ জাতীয় পার্টির চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি আসনধারী স্বতন্ত্র এমপিরা জোট বাঁধলে তাদেরও প্রধান বিরোধী দলের আসন নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়।

একাদশ সংসদের সদস্যদের শপথ নেওয়ার এক সপ্তাহ পর প্রধান বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টিকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন স্পিকার। এবার শপথের পর প্রায় দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।

এ বিষয়ে আলাচনার মধ্যেই জাতীয় পার্টি বিরোধী দলের নেতা হিসাবে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে মনোনীত করে স্পিকারকে চিঠি পাঠায়।

বিষয়টি জানতে চাইলে শিরীন শারমিন জাতীয় পার্টির এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাওয়ার কথা সোমবার সাংবাদিকদের জানান। তিনি বলেন, এ বিষয়ে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংসদের কার্যপ্রণালী বিধিতে ‘বিরোধীদলীয় নেতা’র সংজ্ঞায় বলা হয়েছে- ‘স্পিকারের বিবেচনামতে যে সংসদ সদস্য সংসদে সরকারি দলের বিরোধিতাকারী সর্বোচ্চসংখ্যক সদস্য লইয়া গঠিত ক্ষেত্রমত দল বা অধিসঙ্ঘের নেতা।’

সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা মন্ত্রীর মর্যাদা পান। তাদের কিছু সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। সংসদ ভবনে তার জন্য কার্যালয়ও রয়েছে।

স্পিকার সরাসরি না বললেও সংসদ সচিবালয় থেকে আসন বিন্যাসের যে খসড়া তৈরি হয়েছে, তাতে অধিবেশন কক্ষের বিরোধী বেঞ্চের প্রথম সারির প্রথম আসনটিই জি এম কাদেরের জন্য রাখা হয়েছে।

জাতীয় পার্টির ১১জন এমপিদের প্রথম সারির পাশাপাশি পেছনের দুটি সারির মধ্যেই আসন দেওয়া হচ্ছে। বিরোধী বেঞ্চের সামনের সারিতে দু একজন স্বতন্ত্র এমপির নামও আছে। আসন বিন্যাস বিষয়ে জানতে চাইলে স্পিকার বলেন, “আসন বিন্যাসের একটি খসড়া তালিকা করা হয়েছে। সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শক্রমে এটি চূড়ান্ত করা হবে।”

স্পিকারের কথা বলার দিনই আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ নেতারা সংসদে স্বতন্ত্র হিসেবেই থাকবেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি জাতীয় পার্টিকেই প্রধান বিরোধী দল হিসাবে ধরে নিতে বলেন।

ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের পর জি এম কাদেরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “ওবায়দুল কাদেরের সাহেব যেটা বলেছেন, যৌক্তিক কথা বলেছেন।

“বিরোধী হিসেবে আমরা বাদে তো কেউ আর নেই। বাকি সবাই তো আওয়ামী লীগ। ফলে,নিয়ম অনুসারে আমরাই তো বিরোধী দল। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিরোধী দল তো শুধু আমরাই।”

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের সংখ্যা এবার যেখানে ৬২, সেখানে জাতীয় পার্টির আসন ১১টি। এর বাইরে ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও কল্যাণ পার্টির একটি করে আসন রয়েছে।

জি এম কাদের বলেন, “বাকি দুটি পার্টি ক্ষমতাসীনদের সাথে জোটে আছে, আর একটি দল কল্যাণ পার্টি, তারাও তো আসলে আওয়ামী লীগেরই অংশ।”

জাতীয় পার্টির নেতারা জানান, জি এম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা, দলের কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে বিরোধীদলীয় উপনেতা এবং মহাসচিব মজিবুল চুন্নুকে বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ মনোনীত করে রবিবার স্পিকারের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

তবে সিদ্ধান্ত জানিয়ে সংসদ থেকে কোনো চিঠি এখনও আসেনি বলে জি এম কাদের জানান।

এইচ এম এরশাদের দল জাতীয় পার্টিতে বড় কোন্দল দেখা দেয় তার মৃত্যুর পর। এক পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন স্ত্রী রওশন এরশাদ, অন্য পক্ষে ভাই জি এম কাদের।

দলের কর্তৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ২০২২ সালে জাতীয় পার্টির একদল সংসদ সদস্য রওশনকে সরিয়ে কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা করতে স্পিকারকে চিঠি দিয়েছিলেন।

পরে জাতীয় পার্টির শীর্ষনেতাদের মধ্যস্থতায় রফা হলে রওশনের বিরোধীদলীয় নেতার আসন টিকে যায়, আর জি এম কাদের নেন দলের চেয়ারম্যানের পদ।

কোন্দলের জেরে এবার রওশন ভোটেই অংশ নেননি। উল্টো জাতীয় পার্টিকে জোটে না নিতে বা আসন সমঝোতা না করতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধও করেছিলেন। তবে তার কথা রাখেনি আওয়ামী লীগ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত