নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের স্কুল শিক্ষার্থী রোমান মিয়া হত্যা মামলায় সাবেক মন্ত্রী এবং গাজী গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম দস্তগীর গাজীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।
রবিবার বিকালে নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক কাজী মুহাম্মদ মোহসেন শুনানি শেষে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে ঢাকায় গেরিলা আক্রমণ পরিচালনাকারী তরুণ মুক্তিযোদ্ধাদের দল ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্য ছিলেন তিনি। একাদশ জাতীয় সংসদে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
শনিবার দিবাগত রাতে ঢাকার শান্তিনগরের বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে সাবেক এই মন্ত্রীকে নারায়ণগঞ্জ আদালতে নেওয়া হয়। এসময় বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন। আদালত প্রাঙ্গণে ছিল উৎসুক জনতার ভিড়, যাদের মধ্যে কেউ একজন তাকে লক্ষ্য করে ডিম ছুড়ে মারে।
রূপগঞ্জে রোমান মিয়া নামের দশম শ্রেণির এক ছাত্রকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে গত ২১ আগস্ট দায়ের করা মামলায় গোলাম দস্তগীর গাজীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয় বলে জানান রূপগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জোবায়ের হোসেন।
তিনি বলেন, এই মামলায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়।
মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন খান জানান, গত ২০ আগস্ট নিহতের খালা রিনা খান বাদী হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীকসহ ৪৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৬০ জনকে আসামি করে হত্যা রূপগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেছিলেন। সে মামলাতেই গোলাম দস্তগীর গাজীকে ছয় দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন, গোলাম দস্তগীর গাজীর ছেলে গাজী গোলাম মূর্তজা, পাটমন্ত্রীর পিএস এমদাদুল হক, ফিরোজ ভূঁইয়া, সদ্য সাবেক রূপগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানসহ কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ এবং দলটির সহযোগী অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
মামলার এজাহারে বলা হয়, নিহত রোমান মিয়া (১৭) উপজেলার চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রের আনোয়ার হোসেনের ছেলে। সে পুনর্বাসন কেন্দ্রের নব কিশলয় উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিল। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর সন্ধ্যায় চনপাড়ায় ছাত্র-জনতার একটি আনন্দ মিছিল বের হয়। মিছিলটি পণ্ড করতে শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, গোলাম দস্তগীর ও গোলাম মূর্তজার নির্দেশে আওয়ামী লীগের লোকজন আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি করে।
এ সময় নিহত রোমানের গলা, ঘাড়, হাত, বুক ও পিঠে কয়েকটি গুলি লাগে। তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে বিনা ময়নাতদন্তেই তাকে দাফন করা হয়।