সোনার দাম আরও বেড়েছে। অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে দেশের বাজারে সোনার ভরি দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ লাখ ৪২ হাজার টাকায়।
বুধবার থেকে সবচেয়ে ভালো মানের (২২ ক্যারেট) প্রতিভরি সোনা এই দরে বিক্রি হবে।
মঙ্গলবার পর্যন্ত এই মানের সোনা ১ লাখ ৪০ হাজার ৬১ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ হিসাবে প্রতিভরিতে বেড়েছে ১ হাজার ৮৯০ টাকা।
অন্যান্য মানের সোনার দরও প্রায় একই হারে বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।
চার দফায় ২২ ক্যারেট সোনার দাম ভরিতে সাড়ে ১২ হাজার টাকা বাড়ানোর পর গত ২৮ সেপ্টেম্বর ১ হাজার ২৬০ টাকা কমিয়েছিল বাজুস। ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ওই দর কার্যকর হয়।
তিন সপ্তাহ পর গত ১৯ অক্টোবর প্রতিভরি ২২ ক্যারেট সোনার দাম ভরিতে ২ হাজার ৬১৩ টাকা বাড়ানো হয়। ২০ অক্টোবর থেকে ওই কার্যকর হয়।
দুই দিনের ব্যবধানে মঙ্গলবার এই মানের সোনার দাম ভরিতে আরও ১ হাজার ৮৯০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। বুধবার থেকে এই দর কার্যকর হয়।
বাজুসের নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, বুধবার থেকে দেশের বাজারে এক গ্রাম ২২ ক্যারেট সোনা কিনতে ১২ হাজার ১৭০ টাকা লাগবে। ১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রামে এক ভরি হিসাবে প্রতি ভরি কিনতে লাগবে ১ লাখ ৪১ হাজার ৯৫১ টাকা।
২১ ক্যারেটের প্রতিভরি সোনা কিনতে লাগবে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৫০১ টাকা। ১৮ ক্যারেটে লাগবে ১ লাখ ১৬ হাজার ১৩৮ টাকা।
আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনা বিক্রি হবে ৯৫ হাজার ৪২৩ টাকায়।
মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশের বাজারে এক গ্রাম ২২ ক্যারেট সোনা কিনতে ১২ হাজার ৮ টাকা লেগেছে। ১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রামে এক ভরি হিসাবে প্রতি ভরি কিনতে খরচ হয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার ৬১ টাকা।
২১ ক্যারেটের প্রতিভরি সোনা কিনতে লেগেছে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৭০৪ টাকা। ১৮ ক্যারেটে লেগেছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৫৯৯ টাকা।
আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনা বিক্রি হয়েছে ৯৪ হাজার ১১৭ টাকায়।
হিসাব বলছে, দুই দিনের ব্যবধানে প্রতিভরি ২২ ক্যারেট সোনার দাম বেড়েছে ১ হাজার ৮৯০ টাকা। ২১ ক্যারেটের দাম বেড়েছে ১ হাজার ৭৯৬ টাকা। ১৮ ক্যারেটের বেড়েছে ১ হাজার ৫৪০ টাকা।
সনাতন পদ্ধতির প্রতিভরি সোনার দাম বেড়েছে ১ হাজার ৩০৬ টাকা।
মঙ্গলবার রাতে বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
বুধবার থেকে নতুন দর কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বাজুস।
বিশ্ববাজারেও রেকর্ড, প্রতি আউন্স ২,৭৪২ ডলারে উঠেছে
বিশ্ববাজারেও সোনার দামে রেকর্ডের পর রেকর্ড হচ্ছে। অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে সর্বকালের সর্বোচ্চ উচ্চতায় উঠেছে মূল্যবান এই ধাতুর দর।
ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রতি আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম) সোনার দাম ২ হাজার ৭০০ ডলার ছাড়িয়ে ২ হাজার ৭৪২ ডলারে উঠেছে।
গত ১৯ অক্টোবর রাতে যখন সোনার দাম বাড়ানো হয় তখন বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম) সোনার দাম ছিল ২ হাজার ৭২২ ডলার ৩ সেন্ট।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে হত্যা করার পর মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সোনায় ঝুঁকছেন। মূলত এ জন্যই সোনার দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।
বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার স্পট মার্কেটে সোনার দাম ছিল আউন্সপ্রতি ২ হাজার ৬৮৮ দশমিক ৮৩ মার্কিন ডলার। শুক্রবার সকালে তা ২ হাজার ৭০৪ ডলার ৮৯ সেন্টে ওঠে। যা কিনা সর্বকালের সর্বোচ্চ।
মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার পাশাপাশি সোনার দর বৃদ্ধির পেছনে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের নীতি সুদহার বড় ব্যবধানে কমানোর বিষয়টি ভূমিকা রেখেছে।
মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘ সময় ধরে সংঘাত চলছে। সংঘাত চলছে বিশ্বের আরও অনেক দেশে। ফলে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, তা থেকে বিনিয়োগ নিরাপদ রাখতে অনেকেই সোনার দিকে ঝুঁকছেন বলে এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়।
বিশ্বে যে কোনও অনিশ্চয়তা দেখা দিলেই সোনার দাম চড়তে থাকে। বিশ্ববাজারের প্রভাব তখন স্থানীয় বাজারেও পড়ে।
কোভিড মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে সোনার দাম বাড়লেও পরে স্থিতিশীল হয়েছিল।
গত ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝিতে প্রতি আউন্সের দাম ছিল ২ হাজার ডলারের নিচে।
রুপা অপরিবর্তিত
তবে সোনার দাম বাড়লে অপরিবর্তিত রয়েছে রুপার দাম।
২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ২ হাজার ১০০ টাকা, ২১ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ২ হাজার ৬ টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ১ হাজার ৭১৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি রূপা ১ হাজার ২৮৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।