বিশ্ববাজারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে স্থানীয় বাজারেও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সোনার দাম। রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়ছে মূল্যবান এই ধাতুর দর।
বুধবার থেকে সবচেয়ে ভালো মানের (২২ ক্যারেট) প্রতি ভরি সোনা ১ লাখ ৩৫ হাজার ৬৬৪ টাকায় বিক্রি হবে। এর আগে কখনোই দেশের বাজারে এত বেশি দামে সোনা বিক্রি হয়নি।
মঙ্গলবার পর্যন্ত এই মানের সোনা ১ লাখ ৩৩ হাজার ৫১ টাকায় টাকায় বিক্রি হয়েছে। হিসাব বলছে, ১০ দিনের ব্যবধানে ২২ ক্যারেট সোনার দাম প্রতি ভরিতে বেড়েছে ৯ হাজার ৩৪৩ টাকা।
অন্যান্য মানের সোনার দরও প্রায় একই হারে বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।
বাজুসের নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, বুধবার থেকে দেশের বাজারে এক গ্রাম ২২ ক্যারেট সোনা কিনতে ১১ হাজার ৬৩১ টাকা লাগবে। সে হিসাবে ১১.৬৬৪ গ্রামে এক ভরি কিনতে লাগবে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৬৬৪ টাকা।
২১ ক্যারেটের প্রতিভরি সোনা কিনতে লাগবে ১ লাখ ২৯ হাজার ৫০৫ টাকা। ১৮ ক্যারেটে লাগবে ১ লাখ ১০ হাজার ৯৯৫ টাকা। আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনা বিক্রি হবে ৯১ হাজার ৩৮ টাকায়।
মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশের বাজারে এক গ্রাম ২২ ক্যারেট সোনা কিনতে লেগেছে ১১ হাজার ৪০৭ টাকা। এক ভরি কিনতে খরচ হয়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৫১ টাকা। ২১ ক্যারেটের প্রতিভরি সোনা কিনতে লেগেছে ১ লাখ ২৬ হাজার ৯৯৮ টাকা। ১৮ ক্যারেটে লেগেছে ১ লাখ ৮ হাজার ৮৬০ টাকা।
আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনা বিক্রি হয়েছে ৮৯ হাজার ২১৮ টাকায়।
হিসাব করে দেখা যাচ্ছে, তিন দিনের ব্যবধানে প্রতিভরি ২২ ক্যারেট সোনার দাম বেড়েছে ২ হাজার ৬১৩ টাকা। ২১ ক্যারেটের দাম বেড়েছে ২ হাজার ৫০৮ টাকা। ১৮ ক্যারেটের বেড়েছে ২ হাজার ১৩৫ টাকা।
সনাতন পদ্ধতির প্রতিভরি সোনার দাম বেড়েছে ১ হাজার ৮২০ টাকা।
টানা কয়েক দফা বাড়ার পর গত ১ সেপ্টেম্বর ২২ ক্যারেট সোনার দাম ভরিতে এক হাজার ৬২১ টাকা কমিয়েছিল বাজুস।
এর দুই সপ্তাহ পর গত ১৪ সেপ্টেম্বর এই মানের সোনার দাম ভরিতে ৩ হাজার ৫৮১ টাকা বাড়ানো হয়। এক সপ্তাহ পর ভরিতে আবার ৩ হাজার ১৪৯ টাকা বাড়ানো হয়। তাতেই হু হু করে বেড়ে যায় সব ধরনের সোনার দাম।
মঙ্গলবার রাতে বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। বুধবার থেকে নতুন দর কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বাজুস।
বিশ্ববাজারেও রেকর্ড
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারেও রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়ছে সোনার দাম। কিছুদিন ধরেই আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম বাড়ছিল। তারই ধারাবাহিকতায় গত ২১ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো এই ধাতুর দাম প্রতি আউন্স ২ হাজার ৬০০ ডলার ছাড়ায়।
মঙ্গলবার রাত ৯টায় বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম) সোনার দাম ১১ ডলার ৬২ সেন্ট বা দশমিক ৪৭ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ৬৩৭ ডলার ৮৯ সেন্টে উঠেছে।
গত ২১ সেপ্টেম্বর রাতে যখন দেশের বাজারে সোনার বাড়ানো হয়, তখন বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল ২ হাজার ৬২২ ডলার ৩০ সেন্ট।
এবার সোনার দাম বাড়ার মূল কারণ যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার হ্রাস ও মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা।
বিশ্বে যে কোনও অনিশ্চয়তা দেখা দিলেই সোনার দাম চড়তে থাকে। বিশ্ববাজারের প্রভাব তখন স্থানীয় বাজারেও পড়ে।
কোভিড-১৯ মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে সোনার দাম বাড়লেও পরে স্থিতিশীল হয়েছিল।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সোনার দাম এতটা বেড়ে যাওয়ার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে গত ১৮ সেপ্টেম্বর মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের নীতি সুদহার বড় ব্যবধানে কমানোর বিষয়টি। ওই দিন দশমিক ৫০ শতাংশ পয়েন্ট সুদ কমানো হয়। ফলে সোনা কেনার দিকে বিনিয়োগকারীদের ঝোঁক আরও বেড়েছে।
রুপার দাম অপরিবর্তিত
সোনার দাম বাড়লে অপরিবর্তিত রয়েছে রুপার দাম।
২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ২ হাজার ১০০ টাকা, ২১ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ২ হাজার ৬ টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ১ হাজার ৭১৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি রূপা ১ হাজার ২৮৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
