Beta
শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫
ভোটের পরে যুবক নিহত

গোপালগঞ্জে বিক্ষোভ, ঢাকায় চেয়ারম্যানের সংবাদ সম্মেলন

ওসিকুর ভুইয়ার খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বৃহস্পতিবার গোপালগঞ্জে সড়ক অবরোধ করে স্থানীয় একদল।
ওসিকুর ভুইয়ার খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বৃহস্পতিবার গোপালগঞ্জে সড়ক অবরোধ করে স্থানীয় একদল।
[publishpress_authors_box]

গোপালগঞ্জে উপজেলা নির্বাচনের পর সহিংসতায় গুলিবিদ্ধ হয়ে যুবক নিহতের প্রতিবাদ দ্বিতীয় দিনে গড়াল।

বৃহস্পতিবার প্রায় তিন ঘণ্টা ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধকরে রেখেছিল এলাকাবাসী। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার না করা হলে আগামী রবিবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাওয়ের ঘোষণা দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা।

বেলা ১১টার চন্দ্রদিঘলীয়া বাজার এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ করে। তারা নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান ভূইয়া লুটুল, প্রধানমন্ত্রীর এপিএস গাজী হাফিজুর রহমান লিকুর বিরুদ্ধেও স্লোগান তোলে।

অবরোধের কারণে মহাসড়কে চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে দূরপাল্লার অসংখ্য যানবাহন আটকা পড়ে। ফলে ভোগান্তিতে পড়ে শত শত যাত্রী।

বেলা ১টার দিকে বিক্ষুব্ধরা অবরোধ তুলে নিলে যান চলাচল পুনরায় শুরু হয়।

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে গত ৮ মে প্রথম ধাপে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায়ও ভোট হয়। শান্তিপূর্ণভাবে ভোট শেষ হলেও এক সপ্তাহ বাদে গত মঙ্গলবার ঘটে সহিংসতা।

সেই রাতে চা-সিগারেট পান করা নিয়ে বিজয়ী প্রার্থী কামরুজ্জামান ভুইয়া এবং পরাজিত প্রার্থী বি এম লিয়াকত আলীর সমর্থকদের মধ্যে চন্দ্রদিঘলীয়া এলাকায় সংঘর্ষ হয়। তখন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন ওসিকুর ভুইয়া নামে এক যুবক। আহত হয় কমপক্ষে ১৫ জন।

হত্যাকাণ্ডের পর দুদিন পার হলেও এখনও কোনও মামলা হয়নি। গ্রেপ্তার হয়নি জড়িত কেউ।

গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মোহাম্মদ আনিচুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

বিক্ষোভে যোগ দিয়ে নিহতের মা জবেদা বেগম (৬৭) বলেন, “আমার ওসিকুরের চার মাসের ছেলেকে যারা এতিম করল, তাদের ফাঁসি চাই। আমার ছেলের খুনিদের পুলিশ গ্রেপ্তার না করলে আমি বাড়ি ফিরব না।”

এখনও খুনিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিক্ষোভে নেতৃত্বদানকারী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক ছবেদ আলি ভূঁইয়া।

নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী বিএম লিয়াকত আলী বলেন, “নিহত ওসিকুর ভূঁইয়া ছিল আমার নির্বাচনী এজেন্ট। তাকে পরিকল্পিতভাবে গুলি করে হত্যা করে আমার প্রতিপক্ষ। দোষীদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।”

গোপালগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের নির্দেশে অবরোধ তুলে নেওয়ার কথা জানান তিনি।

তবে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও আসামি গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে লিয়াকত বলেন, “প্রশাসন এতে ব্যর্থ হলে আগামী রবিবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হবে।”

বিজয়ী চেয়ারম্যানের ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন

এলাকায় তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলার মধ্যে কামরুজ্জামান বৃহস্পতিবার ঢাকার সেগুনবাগিচায় রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে ওয়াছিকুর হত্যাকাণ্ডে তার জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

তিনি বলেন, “বিগত ৮ মে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ ভোটের মাধ্যমে জনগণ আমাকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছেন। নির্বাচনের পরে নির্বাচনী এলাকায় শুভেচ্ছা বিনিময় করেছি। এর মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী টুঙ্গীপাড়ায় গেলে আমি দিনব্যাপী সেখানেই সময় দিয়েছি।”

গত ১২ মে রাতে ব্যবসায়িক কাজে ঢাকায় চলে আসেন জানিয়ে কামরুজ্জামান বলেন, “এর মধ্যে গোপালগঞ্জে নির্বাচন পরবর্তী কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু অতি দুঃখের বিষয় গত ১৪ মে আমাার নিজ গ্রামে মুরুব্বিদের সামনে ধূমপান করাকে কেন্দ্র করে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়।

“আমি জানতে পারি, একটি স্বার্থান্বেষী মহল প্রতিহিংসাপরায়ন হয়ে ওই ঘটনাকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। কারণ এতে প্রকৃত ঘটনা আড়ালে পড়ে যেতে পারে।”

ওসিকুর হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করে তিনি বলেন, “আমি নিহতের রুহের মাগফেরাত কামনা করছি। সেইসাথে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।”

গোপালগঞ্জ জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি শফিকুর রহমান টুয়েল, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আশারুল হক লিটু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল হামিদ, গোবরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য কাজী সালাউদ্দিন সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত