বাংলাদেশে অবৈধভাবে অবস্থানকারী বিদেশি নাগরিকদের আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে বৈধতা অর্জনের সময় বেঁধে দিয়েছে সরকার।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলেছে, অন্যথায় অবৈধভাবে অবস্থানকারী বিদেশি নাগরিক ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অনেক বিদেশি নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন/কর্মরত রয়েছেন। বিজ্ঞপ্তিতে তাদেরকে আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশে অবস্থানের বা কর্মরত থাকার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বৈধতা অর্জনের অনুরোধ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সব দপ্তর/প্রতিষ্ঠানকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে অনুরোধ করা হয়েছে।
প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে কূটনীতিক টানাপড়েনের মধ্যে এর আগে গত ১২ ডিসেম্বর অবৈধ বিদেশিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেয় বাংলাদেশ সরকার।
সেদিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বৈধ বিদেশি নিয়ে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়। তাতে অবৈধভাবে যারা বাংলাদেশে রয়েছেন, তাদের দ্রুত বৈধতার কাগজপত্র সংগ্রহ করতে বলা হয়, নইলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
একইদিন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, কোনও বিদেশিকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না।
কত বিদেশি আছে?
বাংলাদেশে এখন কী পরিমাণ বিদেশি এবং তার মধ্যে কত সংখ্যক অবৈধ, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্য সরকারের কাছেও নেই বলে স্বীকার করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই সতর্কবার্তায় বলা হয়, “বিভিন্ন সূত্রে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে যে অনেক ভিনদেশি নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন এবং অবৈধভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন।”
বাংলাদেশে থাকা বিদেশি নাগরিকদের বড় অংশ ভারতীয় বলেই ধারণা করা হয়।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবশ্য কোনও দেশের নাম না নিয়ে বলেন, অনেক দেশেরই নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন বলে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে।
এই সংখ্যাটি কত, সেই বিষয়ে নানা তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
২০২০ সালে প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১০৮টি দেশের সাড়ে ১২ হাজারের বেশি মানুষ অবৈধভাবে বাংলাদেশে রয়েছে।
পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) তথ্য উদ্ধৃত করে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈধ ভিনদেশিদের মধ্যে ভারতীয়দের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। সংখ্যাটি ৯ হাজার ২৭১ জন।
এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ার ৫৪৮ জন, চীনের ৪৮২ জন, যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪৫ জন, যুক্তরাজ্যের ২০৮ জন, নেপালের ২১০ জন, কানাডার ১২৭ জন, শ্রীলঙ্কার ১১০ জন, জাপানের ৭২ জন অবৈধভাবে বাংলাদেশে রয়েছেন।
২০২৪ সালে আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও অন্তত ৫০ হাজার বিদেশি নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছে। পর্যটন, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজসহ বিভিন্ন ভিসায় তারা বাংলাদেশে এসে পরে অবৈধ হয়ে পড়েন।
এবছরই বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, বাংলাদেশে অবৈধ ভিনদেশীর সংখ্যা ১০ লাখ। বিহারি, রোহিঙ্গা মিলিয়ে সংখ্যাটি ৩০ লাখের বেশি।
এই প্রতিবেদন ধরে গত মে মাসে হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন হয়েছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৮ মে দেশে থাকা বৈধ ও অবৈধ বিদেশি কর্মীর প্রকৃত সংখ্যা নিরূপণের নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট।
তবে সেই সংখ্যা নিরূপণের কোনও অগ্রগতির কোনও খবর পাওয়া যায়নি।
