Beta
শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫

ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করুন : সরকারকে সলিমুল্লাহ খান

বুধবার সংহতি সমাবেশে সলিমুল্লাহ খান।
বুধবার সংহতি সমাবেশে সলিমুল্লাহ খান।
[publishpress_authors_box]

বর্তমান সরকারকে নিঃশর্তভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করে পদত্যাগ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন গণবুদ্ধিজীবী সলিমুল্লাহ খান। তিনি এও বলেন, এই পদত্যাগ ছাড়া নতুন কোন রকম ব্যবস্থা আমরা দিতে পারব না।

বুধবার (৩১ জুলাই) বেলা ১১টায় আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তি, মামলা প্রত্যাহার এবং শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতের দাবিতে ইউল্যাবের শিক্ষকদের সংহতি সমাবেশে এ কথা বলেন সলিমুল্লাহ খান। তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউল্যাবের অধ্যাপক।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে দেশজুড়ে যে সহিংসতা ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, সেই প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “দেশের সরকার প্রথমে সেটাকে (আন্দোলন) একপাশে ঠেলে দিতে গিয়েছে, উপেক্ষা করতে গিয়েছে, পরে যে দমন নীতি অবলম্বন করেছে নিজেদের পেটোয়া বাহিনী দিয়ে, সেটা থেকেই এই হত্যাকাণ্ডের শুরু।     

“আমরা প্রথমেই পরিস্কার করে বলতে চাই, এই হত্যাকাণ্ড রাষ্ট্রীয় মদদে হয়েছে, রাষ্ট্রীয় বাহিনীর দ্বারা হয়েছে, এবং রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সহযোগীদের দ্বারা হয়েছে, যাদেরকে আমরা বলতে পারি প্রাইভেট বাহিনী। এর বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের জন্য অবশ্যই বর্তমান পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক তদন্ত দরকার।”

তিনি বলেন, “আমরা আমাদের নিহত, আহত, গুম হওয়া এবং নির্যাতিত জাতিয় জনগণের পক্ষ থেকে এই দাবিটির অকুণ্ঠ সমর্থন জানাই। দ্বিতীয় এখনও হত্যাকাণ্ডকে অস্বীকার করার জন্য… একটা উদাহরণ দিই আপনাদের। গতকাল (মঙ্গলবার) শোক দিবসের নামে একটা প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

“সেখানে দেখবেন… নিহত ও আহতদের জন্য শোক পালনের জন্য কালো ব্যাজ পরিধাণ করতে বলেছেন, আমরা কিন্তু সেটা প্রত্যাখ্যান করেছি। আমরা লাল ব্যাজ পরেছি। এবং তাদেরকে তারা শহীদ বলতে রাজি নন। তারা যদি শহীদ না হন, কেবল নিহত হন তাহলে তাদের জন্য প্রার্থনা করা দরকার কী?”

সলিমুল্লাহ খান বলেন, “এই ধরনের একটা নয়, এই ধরনের অজস্র স্ববিরোধ আপনারা পাবেন। সরকার এইভাবে হত্যাকে জায়েজ করবার জন্য যে অজুহাত ব্যবহার করছেন যে, তারা মেট্রোরেল স্টেশনে হামলা করেছে, সেতু ভবনে হামলা করেছে, অথবা বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনে হরণ করেছে।”

“আমাকে জ্ঞানী বিশ্লেষকরা যেমন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন- তারা পরিস্কার করেছেন, এইগুলোকে বলা হয় কি পয়েন্ট ইনস্টলেশনস- কেপিআই—এইগুলো রক্ষার জন্য সরকার কোনও পূর্ব ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। অথবা করলেও যাথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করার ফলে এর দায় কে বহন করবে- তাদেরকে বহন করতে হবে। আর যেখানে গুলি হয়েছে- ধরুন প্রথমে আবু সাঈদ যেখানে নিহত হয়েছে রংপুরে, সেখানে ফোর কেপিআই আক্রমন করেছিল তারা।”

এই সমাজ ভাষ্যকার বলেন, “এখনও সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে বলা হচ্ছে- আমাদের উন্নয়নের প্রতীকগুলোকে ধ্বংস করার জন্যে আমাদের রাজনৈতিক বিরোধীরা এ আন্দোলনের ঢুকে পড়েছে। কথাটা যদি ঠিক ধরে নেই, যুক্তির খাতিরে, তাহলে বলতে হবে দেশের মানুষ এসে সেই মুহূর্তে সমর্থন করলে কেন?

“ধরুন মিরপুরে… মিরপুর ১০ এ মেট্রোরেলে আক্রমন করল কেন? আমাদের দেশের অথবা যেকোনো উপনিবেশিক দেশের ইতিহাসের সঙ্গে যারা পরিচিত, এমনকি ইউরোপেরর দেশের ইতিহাসের সঙ্গে পরিচিত, তারা জানেন- মানুষ যাকে ক্ষমতার দম্ভের প্রতীক মনে করে, সেটিকে হামলা করে।”  

“যেমন আপনার ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের সময় উত্তর ভারতে যেটাকে উত্তর প্রদেশ বলি, সেখানে সর্বত্র কৃষকেরা তহশিল অফিসগুলো আক্রমণ শুরু করেছিল, এবং তারা তাদের রেকর্ড, দস্তা, দলিলগুলোয় আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। আপনারা এখন বলতে পারেন, এটা ইতিহাসের জন্য ভালো কাজ হয়নি; দলিল দস্তা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ওই দলিল, দস্তা ছিল ইংরেজ সরকারের অত্যাচারের এবং তাদের ক্ষমতা প্রতীক।”

তিনি বলেন, “এখন কেউ যদি মেট্রোরেলে হামলা করে থাকে, এটাকে তারা প্রতীকী হামলা করেছে। এটা বুঝতে হবে, সরকার এটা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে। এটা হচ্ছে প্রতীকী ভাষা। সরকারের লেজিটিমেসির একমাত্র দাবি হচ্ছে, বৈধতায় একমাত্র দাবি হচ্ছে- আমরা উন্নয়ন করেছি গত দেড় দশকে। আয়ুব খান সাহেবের এক দশক ছিল। এখন শেখ হাসিনার দেড় দশক হয়েছে।”

“এই উন্নয়নকে মানুষ যে প্রত্যাখ্যান করেছে, সেটা দেখা যায়। ঢাকা শহরের সমস্যাটা কী ছিল? গণযোগাযোগ ব্যবস্থা একটা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি, পাবলিক ট্রান্সপোর্টেশন সিস্টেম- মেট্রো সেটার সমাধান করে না। তাদের প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, এটা যখন সম্পূর্ণ চালু হবে, তখন এটা থেকে ৭ থেকে ৯ ভাগ লোক এর উপকার পাবেন। যাকে… এইটাকে প্রতীকী করে দেশের সমস্ত বাজেটের টাকাকে একখাতে নিয়ে যাওয়া—এই ম্যান্ডেট কে দিয়েছে? এটা কি জনগণের সাথে আলোচনা করে করা হয়েছে?”

“সুতরাং মানুষ যখন তথাকথিত উন্নয়নের প্রতীকগুলোতে আক্রমন করে সেটাকে আপনি… প্রথমে মনে হবে দুর্ঘটনা, কিন্তু না, এর পিছনে একটা কারণ আছে। এইটা যদি আমরা বুঝতে পারি, তাহলে সরকারের বোঝা উচিৎ। সরকার বলছে যে তিনটা নির্বাচনে জিতে এসেছি, এবং এটা তারা বোঝেন জানেন যে তাদের আর বৈধতা নেই।”

‘কাজেই আমরা যখন বলেছি অন্তত এক সপ্তাহ আগে একটা বিবৃতি দিয়ে ৩৩ জন নাগরিক, তাতে আমিও ছিলাম’ উল্লেখ করে সলিমুল্লাহ খান বলেন, “আমরা বলেছি, সরকারকে ক্ষমা চাইতে হবে, এখন সে পর্যায় পার হয়ে গেছে। এখন জনগণের পক্ষ থেকে ক্রমশ ধ্বনি উঠবে, এই সরকারের ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় আপনারা কি কেউ বিশ্বাস করেন, তারা ন্যায়বিচার করতে পারবেন? তারা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার করবেন না। কারণ, তারা নিজেরাই হত্যাকারী। আপনি হত্যাকারীর কাছে কী করে অধিকার চাবেন?

“যারা নিজেরা রাজাকার তারা অপরকে বলে রাজাকার—পৃথিবীতে এর চেয়ে বড় পরিহাস আর কী আছে? মানে যারা খুনি তারা আজ আমাদের বলে খুন! যারা বিশ্বাসঘাতক, তারা আমাদের বলে বিশ্বাসঘাতক! ক্ষমতার সর্বোচ্চ কেন্দ্রের চারদিকে তো রাজাকাররা বসে আছে। এবং যে ছাত্র যারা ২০০০ সালের পরে জন্মগ্রহণ করেছে, তাদেরকেও তারা রাজাকার বলছেন।”  

“আশ্চর্য লাগে কোনও সরকার যখন অগণতান্ত্রিক, স্বৈরতান্ত্রিক এবং গণবিরোধী হয়, তখন দেখা যায় তার যে রসবোধ সর্ম্পূর্ণ হারিয়ে যায়। ছাত্ররা যখন বলেছে, ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’ এটি তারা ব্যঙ্গ করছে প্রধানমন্ত্রীকে—এই খবর বুঝতে তারা অক্ষম? এইটুকু উদ্ধৃত করে বাকিটা তারা বলে না- ‘কে বলেছে কে বলেছে, স্বৈরাচার স্বৈরাচার’।

তিনি বলেন, “বলা হচ্ছে এটা ছাত্র-যুবকদের আন্দোলন, আসলে এটা ছাত্র-যুবকদের আন্দোলন নয়, এটা সারাদেশের আন্দোলনে পরিণত হয়েছে এবং পরিণত হতে চলেছে। আন্দোলন বন্ধ হয় নাই, আন্দোলন বন্ধ হবে না; আমরা আছি, শিক্ষক হিসেবে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু শিক্ষকতার বাইরেও আমাদের সামাজিক ভূমিকা আছে। আমরা তো ভোটারও বটে।  

“এই সমাবেশ, অতিক্ষুদ্র সমাবেশ এটা। কিন্তু এটা সংহতি সমাবেশ। আমরা বিশাল জনস্রোতের সঙ্গে আছি। কিন্তু আমরা ভেসে যাওয়ার জন্য আসিনি। আমাদের… বুদ্ধিজীবী হিসেবে আমাদের আত্মসমালোচনা দরকার।”                

“এই সংকটের উৎপত্তি কোথায় সেদিকে না গিয়ে সরকার এখন বলছে, এই দল সেই দলকে নিষিদ্ধ করব। সেটায় কিন্তু মূল সমস্যার পা কেন, হাতিও আটবে না। সেটায় কিন্তু সমস্যাকে আরও বাড়াবে, আরও ক্যান্সারের সৃষ্টি করবে। এজন্য এখন যা দরকার, পুরনো কথা ধার করে বলি, রাজনৈতিক সমাধান। রাজনৈতিক সমাধানের প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে, বর্তমান সরকারকে নিঃশর্তভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করে পদত্যাগ করতে হবে। এই পদত্যাগ ছাড়া নতুন কোন রকমের ব্যবস্থা আমরা দিতে পারব না।

“হয় তো আমার কথা আপনাদের কাছে এখনও মনে হবে খানিকটা ইউটোপিয়ান…। কিন্তু আপনারা দেখবেন, আজ না হোক কাল হোক যত দ্রুত সম্ভব এই অবস্থার পরিসমাপ্তি হবে, তখন আমরা বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে পারব। আমরা দেখেছি.. শিক্ষার্থীরা গ্রেপ্তার কেন অবিলম্বে মুক্তি দাও— সেটা আমাদের দাবি। আমরা বলছি, বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপদ শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। যদি আমাদের ছাত্রছাত্রীরা আসতে না পারে আমরা কী পড়াব, কাকে পড়াব?”  

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত