Beta
মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

এখন শক্ত হাতে দমন, সিদ্ধান্ত সরকারের

অসহযোগ আন্দোলন শুরুর দিন মতিঝিলে পুলিশের অবস্থান। ছবি : হারুন অর রশীদ
অসহযোগ আন্দোলন শুরুর দিন মতিঝিলে পুলিশের অবস্থান। ছবি : হারুন অর রশীদ
Picture of সকাল সন্ধ্যা প্রতিবেদন

সকাল সন্ধ্যা প্রতিবেদন

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এখন আর তাদের হাতে নেই বলে মনে করছে সরকার, সেই কারণে কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচি শুরুর দিন রবিবার ব্যাপক সহিংসতার প্রেক্ষাপটে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপে কঠোর হওয়ার বার্তা পাওয়া গেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এদিন গণভবনে নিরাপত্তাবিষয়ক জাতীয় কমিটির বৈঠকে কঠোর বার্তা দেন বলে তার সহকারী প্রেস সচিব এ বি এম সরওয়ার-ই-আলম সরকার সাংবাদিকদের জানান।

এরপর সরকারের কাছ থেকে পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়, “ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবক সকলকে নিরাপদে ঘরে ফিরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় জঙ্গি হামলা হচ্ছে। জঙ্গি হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

কোটা সংস্কারের দাবিতে গত জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীদের যে আন্দোলন শুরু হয়, ব্যাপক সহিংসতায় দুই শতাধিক মানুষের প্রাণহানির পর তা সরকার পতনের আন্দোলনে গড়িয়েছে।

শনিবার শহীদ মিনারে আন্দোলনকারীদের সমাবেশ থেকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি তোলা হয়।

রবিবার তাদের অসহযোগ কর্মসূচি শুরুর পর ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সহিংসতা হয়। ক্ষমতাসীন দল সমর্থক ও পুলিশের হামলায় অর্ধ শতাধিক নিহত হয়েছে বলে আন্দোলনকারীদের দাবি।

সরকার হঠাতে সোমবার ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করে সারাদেশ থেকে মানুষকে রাজধানীতে আসার আহ্বান জানিয়েছে আন্দোলনকারীরা।

গণভবনে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এখন যারা নাশকতা করছে, তারা কেউই ছাত্র নয়, তারা সন্ত্রাসী। এই সন্ত্রাসীদের শক্ত হাতে দমন করার জন্য আমি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাই।”

জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতি-২০১৮ অনুমোদিত হওয়ার পর ২০১৯ সালের মার্চে গঠিত ২৭ সদস্যের এই কমিটি ২০২৩ সালের পর এই প্রথম বৈঠকে বসল।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে এখন আর বিএনপি-জামায়াতের কোনও ফারাক নেই দাবি করে তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাতও সরকারের কঠোর হওয়ার বার্তা দেন।

তিনি সংসদ ভবনে সাংবাদিকদের বলেন, “এটা তো এখন পরিষ্কার, তারা কী চাচ্ছে। সেই ঘোষণা তো গতকাল তারা দিয়েছে।

“এই ঘোষণা দেওয়ার পরে এটা অর্জন করতে যাচ্ছে তারা সন্ত্রাস এবং সহিংসতার পথে। যদি তা না হয়, তাহলে কেন বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আক্রমণ করতে হবে?”

আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্কের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে আরাফাত বলেন, “বিএনপির তো আগেরই দাবি এটা। তারা বিএনপির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করল গতকাল। এখন আর তারা আলাদা থাকল না। এটা এখন বিএনপি-জামায়াতই হয়ে গেল।

“বেসিক্যালি এতদিন তাদের দাবি ছিল কোটা। সেটা পূরণ হলো। তারপরে দাবি ছিল আলোচনা। সেটার দ্বার খুলে দেওয়া হলো। তারপর দাবি ছিল বিচার। সেটাও বলা হলো যে জুডিশিয়াল কমিশন গঠন করা হলো, কাজ শুরু করল। বলা হলো বিদেশ থেকে এক্সপার্ট আনব। সকল দাবি পূরণ হয়ে গেল। তারপর এখন হচ্ছে এক দফা দাবি। মানে ওখানে তারা যেতেই চাইবে।”

আন্দোলনকারীদের ওপর আওয়ামী লীগের হামলার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “আজকে সন্ত্রাসীরা নেমে হসপিটাল থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের ওপর যে আক্রমণ করছে, এটা তো পরিষ্কার। ভাই গতকাল তো আপনার এই কাজ করতে হয় নাই। আমরা তো বলে দিয়েছি যে করেন। তারা সমস্ত শক্তি নিয়ে শহীদ মিনারে গেল। তারপর যাওয়ার পরে তো ভাবল যে দুই তিন লক্ষ লোক জড়ো হবে। দেখা গেল ৩০-৩৫ হাজার। বা খুব বেশি হলে ৪০ হাজার।

“তারপরে তো এখন এইটাতে তারা জনগণের মধ্যে সাড়া ফেলতে না পেরে আজকে সহিংসতার পথ বেছে নিল। সকাল থেকেই তো মারামারি শুরু করল। আগুন লাগানো শুরু করল।”

ঢাকার বিভিন্ন স্থানে রবিবার আওয়ামী লীগ মিছিল বের করে।

আওয়ামী লীগ সংঘাত চাইছে না বলে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আরাফাত বলেন, “আমরা ধৈর্য ধরেছি, এখনও ধরতে চাই। আওয়ামী লীগের গোটা বাংলাদেশে নেতাকর্মী প্রচুর আছে, অনেক জনসমর্থন। বঙ্গবন্ধুকন্যা ডাক দিলে তারা রাস্তায় নামবেন।

“কিন্তু আমরা কিন্তু সংঘাত এড়ানোর জন্য আলোচনার দরজা খোলা রেখেছি। আমরা সংঘাতে যেতে চাচ্ছি না। কিন্তু একই সাথে এটা বলতে চাই, সন্ত্রাসীরা সন্ত্রাস করলে আইনের প্রয়োগও ঘটাতে হবে।”

সরকারের পদক্ষেপ কী হবে- প্রশ্ন করা হলে আরাফাত যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের দাঙ্গা দমনে নির্দেশকে নজির হিসাবে দেখান।

“যারা রায়ট করছে, সংঘাত সহিংসতা করছে আইনের পূর্ণাঙ্গ প্রয়োগ, তাদের ওপর করা হবে। একথা তো তারাও (যুক্তরাজ্য) বলছে। গোটা দুনিয়াতে তাই বলে। আমাদেরও কথা হচ্ছে, আইনের প্রয়োগ হবে এবং সন্ত্রাসকে দমন করব। অশান্তি সৃষ্টি করা হলে সেটা শক্ত হাতে দমন করা হবে আইনের মাধ্যমে, আইন প্রয়োগ করা হবে।”

পুলিশ আবার ‘অ্যাকশনে’ যাবে কি না- এক সাংবাদিকের প্রশ্নে তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আইনের প্রয়োগ বলতে আপনি কী বোঝেন? সেটাই। কিয়ার স্টারমার যেটা বলেছেন, rioters will face the full force of Law. ওইটা একটু পড়ে দ্যাখেন। ওটাকেই ফলো করব। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন আমরা ওটাই ফলো করব।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এসন বার্তা দিয়েছেন বলে জানান আরাফাত।

“মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সন্ত্রাসীদের দমন করার জন্য জনগণের প্রতি তিনি আহ্বান জানিয়েছেন।”

ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকও সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি-জামায়াত জঙ্গিগোষ্ঠী যে অরাজকতা করছে, তা প্রতিহত করতে হবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত