Beta
বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

কমিশনের কাজ শেষের আগেই ইসি গঠনে সার্চ কমিটির তোড়জোড়

নির্বাচন ভবন।
নির্বাচন ভবন।
[publishpress_authors_box]

নির্বাচন সংস্কারে কমিশন গঠিত হয়েছে, সেই কমিশন কাজও শুরু করেছে। কিন্তু তাদের সুপারিশ চূড়ান্ত হওয়ার আগেই নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটির তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

সরকারের এক উপদেষ্টা নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে সার্চ কমিটি গঠনে তাদের পছন্দের নাম চেয়েছে।

এনিয়ে প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। কারণ এই প্রক্রিয়ায় বেশিরভাগ দলের কাছে আবার নাম জানতে চাওয়া হয়নি।

এই প্রেক্ষাপটে তবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে বলা হয়েছে কোনও উপদেষ্টা ব্যক্তিগত উদ্যোগে এটা করতে পারেন।

এবি পার্টি পেয়েছে নাম দেওয়ার প্রস্তাব

অন্তর্বর্তী সরকারের একজন উপদেষ্টা সার্চ কমিটি গঠনে আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) কাছ থেকে নাম চেয়েছেন।

ওই উপদেষ্টার নাম প্রকাশ না করে প্রস্তাব চেয়েছেন জানিয়ে এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমরা দুটো নাম প্রস্তাব করেছি।”

জামায়াতে ইসলামীতে সংস্কারের দাবি তুলে বেরিয়ে আসা একদল ২০২০ সালে এবি পার্টি গঠন করে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দলটি সম্প্রতি ইসির নিবন্ধন পায়।

সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া ২০১২ সাল থেকে শুরু হলেও তা আইনি ভিত্তি পায় ২০২২ সালে।

কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন ইসিই প্রথম আইন অনুযায়ী সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত হয়। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর হাবিবুল আউয়ালসহ নির্বাচন কমিশনাররা পদত্যাগ করেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারে ছয়টি কমিশন গঠন করেছে। তার মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে গঠিত কমিশন হয়েছে বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বে।

ওই কমিশন তাদের সুপারিশ দেওয়ার পর নির্বাচনের পথে এগোনোর কথা জানিয়ে আসছিল সরকার।

তার মধ্যেই সার্চ কমিটি গঠনে নাম চাওয়া হলো এবি পার্টির কাছে। তবে ড. ইউনূস অন্য যে কয়টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের কারও কাছে নাম চাওয়া হয়নি।

যা বলছে রাজনৈতিক দলগুলো

সংস্কার কমিশনের কাজ চলার মধ্যে সার্চ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়াতে কোনও সমস্যা দেখছেন না এবি পার্টির সদস্য সচিব মঞ্জু।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “নির্বাচন কমিশন সংস্কারের বিষয়ে তাড়াহুড়োর বিষয় না। প্যারালালি সবগুলো কাজ একসঙ্গে এগিয়ে নেওয়া যায়।”

বিএনপি সার্চ কমিটির জন্য নাম দেওয়ার কোনও প্রস্তাব পায়নি বলে জানান দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান।

তবে অন্তর্বর্তী সরকারকে সবধরনের সহযোগিতা করতে চান জানিয়ে তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমরা চাই সরকারে যাতে কোনও সংকট দেখা না দেয়। তবে ওনাদের উচিৎ হবে দলগুলোর সঙ্গে আলাপ করে করা।”

বর্তমান আইনে সার্চ কমিটি গঠনের যে পদ্ধতি রয়েছে, তা নিয়ে আপত্তি রয়েছে জামায়াতে ইসলামীর।

দলটির প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমরা সার্চ কমিটির পদ্ধতি পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছি।”

তবে সংস্কার কমিশন যে প্রতিবেদন দেবে, তা দেখে চূড়ান্ত মতামত দেবেন বলেও জানান তিনি।

সার্চ কমিটি গঠনে জামায়াতের কাছে নাম চাওয়া হয়েছে কি না- প্রশ্নে তিনি বলেন, “এই ধরনের কোনও তথ্য আমাদের জানা নেই।”

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স এখনই সার্চ কমিটি গঠনে নাম চাওয়ার উদ্যোগে বিস্ময় প্রকাশ করেন।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “সংলাপে বলা হয়েছিল আগে সংস্কার কমিশন প্রস্তাব পেশ করবে, তারপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলবে। তখন আমি বলেছিলাম রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ করে সংস্কারের কথা। প্রেস উইং থেকে বলা হচ্ছে, সংস্কার ও নির্বাচন কমিশন গঠনের কাজ একসঙ্গে চলবে। তাদের কথা তো সাংঘর্ষিক।”

বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনার নিয়োগ আইনে সার্চ কমিটির যে বিধান রয়েছে, তা যথাযথ নয় বলেও দাবি করেন প্রিন্স। তিনি বলেন, “এই আইন দিয়ে যদি ইসি গঠন করে, তাহলে তো প্রশ্নবিদ্ধ হবে।”

গণসংহতি আন্দোলনও সার্চ কমিটি গঠনে নাম দেওয়ার কোনও প্রস্তাব পায়নি বলে জানান দলটির প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে আরও বলেন, “কমিশন গঠনের বিষয় নিয়ে সরকারের উচিৎ হবে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করা।”

সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের আগে সার্চ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরুকে ‘অনিয়ম’ হিসাবে দেখছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব ইউনুস আহমেদ।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “এটা বিতর্কের মধ্যেই পড়বে।”

ইসি গঠনে বর্তমান যে আইন আছে, তা সংস্কার করেই সার্চ কমিটি করতে হবে, চাওয়া ইসলামী আন্দোলনের।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আপত্তির মুখে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দ্বিতীয় দফা সংলাপে আমন্ত্রণ না পাওয়া জাতীয় পার্টিও মনে করছে, সংস্কার কমিশনের সুপারিশ আসার পরই ইসি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হোক।

দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু সকাল সন্ধ্যার কাছে এই প্রতিক্রিয়া জানানোর পাশাপাশি বলেন, “সরকার আসলে আমাদের কাছ থেকে উপদেশ নেয় না। তাই কী হলে ভালো হতো, সেটা বলার ইচ্ছাও জাগে না।”

কী আছে আইনে

স্বাধীনতার ৫০ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনার নিয়োগ আইনটি প্রণীত হয়। ২০২০ সালে আইনটি করার সময়ই অভিযোগ উঠেছিল, তড়িঘড়ি করে তা করা হচ্ছে।

ইসি নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। এই আইনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারগণের শূন্য পদে নিয়োগ দিতে ৬ (ছয়) জনের সমন্বয়ে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেন রাষ্ট্রপতি।

সার্চ কমিটির প্রধান হবেন প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারক। কমিটিতে সদস্য থাকবেন হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক, মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান এবং রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত দুজন বিশিষ্ট নাগরিক, যাদের একজন হবেন নারী।

সার্চ কমিটি কাজ শুরুর ১৫ দিনের মধ্যে পাঁচ সদস্যের ইসি গঠনে ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবে। তাদের মধ্য থেকে একজনকে সিইসি এবং বাকি চারজনকে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি।

সরকার কী বলছে

নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটি গঠন নিয়ে প্রথম কথা আসে গত ১৯ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমের সংবাদ সম্মেলনে। তিনি বলেছিলেন, ইসি পুনর্গঠনে ‘খুব দ্রুতই’ সার্চ কমিটি গঠিত হবে।

“স্যার (ইউনূস) একটি বিষয় স্পষ্টভাবে বলেছেন, খুব দ্রুতই ইলেকশন কমিশন পুনর্গঠনের জন্য সার্চ কমিশন গঠিত হবে। বিধি অনুযায়ী সার্চ কমিটিতে ছয়জন সদস্য থাকার কথা এবং যেই বিধিমালা অনুযায়ী যা যা করার দরকার করা হবে।”

“ইলেকশন কমিশন পুনর্গঠনের পরবর্তী কার্যক্রম হিসাবে কবে কীভাবে ইলেকশন হবে, ভোটার তালিকা হালনাগাদ থেকে শুরু করে পদ্ধতিগত জিনিসগুলো আছে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। এর সমান্তরালেই রিফর্মস কমিটিগুলো কাজ করে যাবে,” বলেছিলেন তিনি।

এরপর গত ২৩ অক্টোবর আবার এনিয়ে কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।

তিনি বলেন, “সার্চ কমিটি নিয়ে একটি আইন আছে। আইনে বলা হয়েছে কারা কারা থাকবেন। যেহেতু আইনটি বলবৎ আছে। আইনের এখনও পরিবর্তন হয়নি। সার্চ কমিটি গঠন করতে হলে এই আইনটা অনুসরণ করেই করতে হবে। এই বাইরে অন্য কোনও বিকল্প নেই।”

রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা সার্চ কমিটির জন্য নাম প্রস্তাব করেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সেটা ব্যক্তিগতভাবে নাম চাইতেই পারে। আইনে একটা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া বলা আছে। সেই পদ্ধতি অনুসরণ করেই সার্চ কমিটি গঠন হবে।”

তাহলে সংস্কার কমিশনের কাজ কী হবে- প্রশ্ন করা হলে আজাদ মজুমদার বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর একটা দাবি আছে দ্রুত নির্বাচনের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা। নির্বাচন প্রক্রিয়ারই একটা অংশ সার্চ কমিটি। সংস্কার এবং সার্চ কমিটি দুটো প্রক্রিয়া আলাদা আলাদাভাবে চলছে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত