Beta
শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Beta
শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

বাজেট সাপোর্ট মিলছে ১২০ কোটি ডলারের

SS-US-dollars-120824
Picture of সকাল সন্ধ্যা প্রতিবেদন

সকাল সন্ধ্যা প্রতিবেদন

চলতি অর্থবছরে (২০২৪-২৫) চার আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা বাংলাদেশকে ১২০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা দেবে। সরকারের প্রয়োজন অনুযায়ী অর্থবছরের যেকোনো মুহূর্তে এই অর্থ ছাড় দেওয়া হতে পারে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) একজন শীর্ষ কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “চলতি অর্থবছরের জন্য বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে বাজেট সাপোর্ট হিসেবে পাওয়া যাবে ৫০ কোটি ডলার। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছ থেকে ৪০ কোটি ডলার, চীনের নেতৃত্বাধীন এশীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাংক (এআইআইবি) দেবে ২০ কোটি ডলার এবং দক্ষিণ কোরিয়ার কাছ থেকে পাওয়া যাবে আরও ১০ কোটি ডলার। সবমিলে চলতি অর্থবছরের জন্য মোট ১২০ কোটি ডলার পাওয়া যাবে।

“কোভিড-১৯ এর চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠার মুহূর্তে ২০২২ সালের শুরুতেই ইউক্রেইন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের রপ্তানিখাতসহ সার্বিক অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফর্মের ডাকে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে গত জুলাইয়ে শুরু হওয়া আন্দোলন আগস্টে এসে গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। এর মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর শূণ্যতা পূরণে দায়িত্ব নিয়েছে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

আন্দোলনের মধ্যে ইন্টারনেট বন্ধ ছিল বেশ কয়েকদিন, এতে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স বাধাগ্রস্ত হয়। অন্যদিকে আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি জুলাইয়ের মাঝ থেকেই রেমিটেন্স পাঠানো বন্ধ রাখেন। আর রপ্তানি আয়ের প্রবাহ কমেছে। এতে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ২০ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলারের নেমেছে।

বৈশ্বিক প্রভাব ও অভ্যন্তরীণ অব্যবস্থাপনার কারণে গত দুই বছর ধরে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ চাপে পড়েছে।

বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে শেখ হাসিনা সরকারের ‘গ্রিন অ্যান্ড ক্লাইমেট রেসিলিয়েন্ট ডেভেলপমেন্ট কর্মসূচি’র আওতায় বাজেট সাপোর্টের একটি সমঝোতা সম্পাদন করা আছে। ওই সমাঝতোর আওতায় বিশ্বব্যাংকের তিন অর্থবছরে মোট ১৫০ কোটি ডলারের বাজেট সাপোর্ট দেওয়ার কথা।

ওই সমঝোতার আওতায় গত অর্থবছরে ৫০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা পেয়েছে। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরেও সমপরিমাণ বাজেট সাপোর্ট পেতে পারে।

ইআরডির ওই কর্মকর্তা জানান, চলতি অর্থবছরের অর্থনৈতিক চাপ বিশেষ করে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন ভারসাম্য রক্ষায় চলতি অর্থবছরের বাজেট সাপোর্ট হিসেবে এডিবির কাছ থেকে পাওয়া যাবে ৪০ কোটি ডলার। এছাড়া এআইআইবি থেকে ২০ কোটি ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে পাওয়া যাবে আরও ১০ কোটি ডলার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইআরডি সচিব মো. শাহ্‌রিয়ার কাদের ছিদ্দিকী বিস্তারিত কিছু জানাতে অপারগতা জানালেও চলতি অর্থবছরের জন্য উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ১২০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা পাওয়া যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বিগত ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও সরকার বড় ধরনের বাজেট সহায়তা গ্রহণ করেছে। গেল অর্থবছরে সরকার মোট ২০৬ কোটি ১০ লাখ ডলারের বাজেট সহায়তা নিয়েছিল। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকার সর্বোচ্চ ২৫৯ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা নিয়েছিল।

সরকারের কৌশল বুঝে প্রকল্পে অগ্রাধিকার  

রাষ্ট্রক্ষমতার পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড আগের গতিতে পরিচালনা করা সম্ভব নাও হতে পারে। আবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেরও উন্নয়ন অগ্রাধিকার থাকতে পারে। তাই নতুন সরকারের নীতি কৌশল জেনে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প অনুমোদন প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হবে।

পরিকল্পনা কমিশন ইতিমধ্যে সারাদেশে চলমান উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন ও অগ্রগতি পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি শুরু করেছে। এই প্রতিবেদন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদের কাছে তুলে ধরা হবে।

শিগগির পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টার সঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বৈঠকের কথা রয়েছে। ওই বৈঠকে উপদেষ্টার পরামর্শ অনুযায়ী উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন ও অর্থায়নে পরবর্তী কৌশল গ্রহণ করা হতে পারে। পরিকল্পনা কমিশনের একজন সদস্য এসব তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশ অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলা করছে। এবার পরিবর্তিত এই পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতি আরও চ্যালেঞ্জে পড়েছে।

“আগে যে অর্থনৈতিক মন্দা ছিল সেটার চাইতে কিন্তু এখন আমরা আরও চ্যালেঞ্জে পড়লাম” বলেন তিনি।

এই কর্মকর্তা বলেন, “আগে আমাদের অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার নীতি ছিল ‘সামাজিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চিন্তা। কিন্তু এবার সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং বাস্তবতাকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রকল্প ও উন্নয়ন এগিয়ে নিতে হবে।”

তিনি বলেন, আগের সরকার অনেকগুলো মেগা প্রকল্প অনুমোদন দিয়ে বাস্তবায়ন শুরু করেছে। ওই সময়ে ব্যাপকভাবে বিদেশি ঋণ নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এখন সেসব ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে গিয়েও চাপে পড়ছে অর্থনীতি।

আবার নতুন পরিস্থিতির চ্যালেঞ্জে পড়ে যদি অর্থনীতি আরও চাপে পড়ে যায়, সে ক্ষেত্রে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের লাগাম টানতে হতে পারে।

আগের সরকার যেসব উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অগ্রাধিকার অন্য রকম হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অগ্রাধিকার কেমন হবে—তা জানার জন্য শিগগির অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টার সঙ্গে পরিকল্পনা কমিশন ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

“উপদেষ্টাকে দেশের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের গতিপ্রকৃতি জানানোর জন্য একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে। উপদেষ্টার সঙ্গে সম্ভাব্য বৈঠকে এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে। সেখান থেকে সরকারের পরবর্তী নীতি কৌশল জেনে পরবর্তী অগ্রাধিকার ও অর্থায়ন কৌশল গ্রহণ করা হবে।”

কোভিড-১৯ মহামারী, ইউক্রেন যুদ্ধ ও অভ্যন্তরীণ অব্যবস্থাপনার কারণে কয়েক বছর ধরেই দেশের অর্থনীতিতে অস্থিরতা রয়েছে।

চাহিদা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় না করতে পারায় শেখ হাসিনার সরকার গত দুই অর্থবছর ধরে চলমান প্রকল্পগুলোকে উচ্চ অগ্রাধিকার, অগ্রাধিকার ও কম অগ্রাধিকার- এই তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে অর্থায়ন করে আসছিল।

পরিকল্পনা কমিশনের একজন সদস্য বলেন, বর্তমানে দেশে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থায়ন চাহিদার ভিত্তিতে প্রকল্পের একটি তালিকা তৈরির কাজ চলছে। ওই তালিকায় কোন প্রকল্পে বিদেশি ঋণ কত, দেশি অর্থায়ন কত এবং কোন বছর শেষ হবে- সেসব তথ্য সংযোজন করা হবে।

“এরপর সরকার যে নির্দেশনা দেবে আমরা সেই অনুযায়ী কাজ করব” বলেন তিনি।

এসময় তিনি আরও বলেন, “এখন নতুনভাবে প্রকল্প অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার কোন খাতের প্রকল্পে বা উন্নয়ন কৌশল কী হবে সেসব বিষয় আমাদের জানানো হলে আমরা সেই অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করব।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত