বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে শান্তি পদক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। শান্তি প্রতিষ্ঠায় কয়েকটি ক্ষেত্রে অবদানের জন্য দেশি বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের একজন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পাবে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শান্তি পদক’ নামের এই পদক। যা দেওয়া হবে প্রতি দুই বছর পরপর।
বিশেষ এই পদকের জন্য ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শান্তি পদক নীতিমালা-২০২৪’-এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ নীতিমালার অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে বিকালে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন।
নীতিমালা অনুযায়ী এই পদকের অর্থমূল্য হবে এক লাখ মার্কিন ডলার। এর সঙ্গে থাকবে ১৮ ক্যারেটের ৫০ গ্রাম ওজনের একটি স্বর্ণপদক ও একটি সনদ।
মাহবুব হোসেন বলেন, চলতি বছর থেকেই কার্যক্রম শুরু হবে, সব ঠিক থাকলে আগামী বছর থেকে দেওয়া হবে পদক।
মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত নীতিমালা অনুযায়ী, প্রতি বছর ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্ম দিবস ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে এই পদকের জন্য মনোনীত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম ঘোষণা করা হবে। তারপর ২৩ মে বা কাছাকাছি সময়ে সেই পুরস্কার প্রদান করা হবে।
২৩ মে দিন নির্ধারণ করা হয়েছে কারণ এই দিনে বঙ্গবন্ধু জুলিও কুরি পদক পেয়েছিলেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “এখন নীতিমালা দিয়ে এই কাজটি শুরু করা হবে। তবে মন্ত্রিসভা পরামর্শ দিয়েছে এ বিষয়ে যেন আইন করা হয়। আইনের মধ্যে একটি তহবিল করতে বলা হয়েছে। যে তহবিলে সরকার বা বাইরের যে কেউ অনুদান দিতে পারবে। পরবর্তীতে সেই অনুদানের টাকা থেকেই পদকের ব্যয়ভার বহন করা হবে।”
তবে সেটি না হওয়া পর্যন্ত সরকার এর ব্যয়ভার বহন করবে বলেও জানান তিনি।
কারা এই পদকের জন্য নাম প্রস্তাব করতে পারবেন, জুরিবোর্ড কীভাবে হবে; সেসব বিষয় নীতিমালায় ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। তবে এটাও উল্লেখ করা হয়েছে যে, কোনও ব্যক্তি তার নিজের নাম প্রস্তাব করতে পারবেন না।
এছাড়া বৈঠকে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) আইন, ২০২৪’র খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন।
তিনি বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের বেতন কত হবে তা নির্ধারণ করে আইনের খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, সিইসি’র বেতন হবে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা। আর অন্যান্য কমিশনারদের বেতন হবে ৯৫ হাজার টাকা। এই বেতনের পাশাপাশি ৫০ শতাংশ বিশেষ ভাতাসহ অন্যান্য ভাতাও পাবেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “এ বিষয়ে বর্তমানে যে আইনটি আছে সেটি ১৯৮৩ সালের। কিন্তু সামরিক শাসনামলের আইনগুলো পরিবর্তনের বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা আছে। তারই আলোকে এটি (প্রস্তাবিত আইন) করা হয়েছে। এতে মূলত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের সুযোগ-সুবিধা ও বেতনভাতা নির্ধারণ করা হয়েছে। মূলত আগের আইনকেই অনুসরণ করা হয়েছে।”
সোমবারের বৈঠকে আরও কয়েকটি সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, বাজার মনটরিং কঠোরভাবে শুরু করতে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সচিব বলেন, “কিছু পণ্যে বাজারে যোগানের সমস্যা না থাকা সত্ত্বেও মূল্য বৃদ্ধির প্রবণতা দেখেছেন প্রধানমন্ত্রী। এজন্য তিনি কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং শুরু করার জন্য বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীকে নির্দেশনা দিয়েছেন।”
প্রসঙ্গ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা
জীবিকার বিষয়টি উপেক্ষা করে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বলেন সচিব।
অটোরিকশা নিয়ে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনা শেখ হাসিনার নজরে এসেছে জানিয়ে সচিব বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তাদের জীবিকার বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রাখতে হবে। একটি বিধিমালার মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের নির্দিষ্ট এলাকা ভাগ করে দিতে হবে। তার বাইরে তারা যাবে না।”
কোনও অবস্থাতেই যেন মহাসড়ক বা বড় সড়কে না যায় সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সড়ক বিভাগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি ব্যাটারি চালিত রিকশার যন্ত্রের সঙ্গে উপযুক্ত কাঠামো বা মডেল তৈরির ওপরও গুরুত্বারোপ করেছেন তিনি।
বৈঠকে বিমসটেক সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ‘এগ্রিমেন্ট অন মেরিটাইম ট্রান্সপোর্ট কোঅপারেশন ’-শীর্ষক চুক্তির খসড়া, ‘প্রটোকল টু দ্য ডি-৮ পিটিএ অন ডিসপিউট সেটেলমেন্ট মেকানিজম’-এ স্বাক্ষর করার প্রস্তাব এবং এপোসটাইল কনভেনশন, ১৯৬১ এর পক্ষভুক্ত হওয়ার বিষয়টি অনুমোদন দেওয়া হয়।