দেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একে একে বন্ধ হয়ে গেছে অন্যতম শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বেক্সিমকোর ২৪টি কারখানা। এসব কারখানার শ্রমিকদের অক্টোবর মাসের বেতন বকেয়া পড়েছে। বকেয়া বেতনের দাবিতে পথে নেমেছেন শ্রমিকরা, অবরোধ করেছিলেন গাজীপুরের চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়কও।
এ অবস্থায় পরিস্থিতি সামাল দিতে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধে প্রতিষ্ঠানটিকে ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এই ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং অর্থ বিভাগ বেক্সিমকোকে ঋণ দেবে বলে জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে শ্রমিকদের দ্রুত কাজে যোগদান ও আশুলিয়া-চন্দ্রা এলাকার সকল কারখানার স্বাভাবিক উৎপাদন অব্যাহত রাখতে অনুরোধ জানান সচিব।
বেক্সিমকো গ্রুপের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অর্থ সংকটে পড়ায় সবশেষ বেক্সিমকো গ্রুপের শাইনপুকুর সিরামিক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে শিল্পগোষ্ঠীটির মোট বন্ধ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দাঁড়াল ২৪।
ছাত্র-গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ১৩ আগস্ট গ্রেপ্তার করা হয় বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর নগদ অর্থের সংকটে কাঁচামাল আমদানির জন্য এলসি খুলতে না পারায় গত আগস্ট থেকে এই শিল্পগোষ্ঠীর কারখানাগুলোর উৎপাদন বন্ধ হয়ে পড়ে।
বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকরা টানা পঞ্চম দিনের মতো গাজীপুরের চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়ক অবরোধ করায় দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। এতে কারখানা বন্ধের বিষয়টি আলোচনায় আসে।
এরপরই সরকারের পক্ষ থেকে ঋণ দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।
বেক্সিমকো গ্রুপের পরিচালক (অর্থ ও কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স) ওসমান কায়সার চৌধুরী সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক ঋণের টাকা পেলে আমরা দ্রুত শ্রমিকদের বেতন দিয়ে দেবো। আমরা চাই দেশের এই সম্পদ টিকে থাকুক। আমরা এখানে পেশাদারত্বের সঙ্গে কাজ করতে চেষ্টা করছি। এই প্রতিষ্ঠানে ৪০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। গত ২৮ বছর ধরে আমরা শ্রমিকদের বেতন নিয়মিত দিয়ে এসেছি। সরকারের সহযোগিতা পেলে এই প্রতিষ্ঠানগুলো টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।”
প্রতিষ্ঠানগুলোয় প্রতি মাসে বেতন বাবদ প্রায় ৮০ কোটি টাকা খরচ হয় জানিয়ে এই পরিচালক বলেন, “কিন্তু সে তুলনায় উৎপাদন হচ্ছে না। প্রতি মাসে আমাদের ৩০০ মিলিয়ন ডলারের রপ্তানি ছিল। সেটা এখন শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।”