Beta
বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০২৫

তুলাকে কৃষিপণ্য ঘোষণায় ২ মাসে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে সরকার : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ইআরএফ মিলনায়তনে ‘বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে বাংলাদেশ তুলা চাষের গুরুত্ব ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
ইআরএফ মিলনায়তনে ‘বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে বাংলাদেশ তুলা চাষের গুরুত্ব ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

তুলাকে কৃষিপণ্য হিসেবে ঘোষণা দিয়ে দেশে তামাক চাষ হয়- এমন জমির একটা অংশে তুলা উৎপাদনে দুই মাসের মধ্যে সরকার কার্যকর ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।

সোমবার রাজধানী ঢাকায় এক অনুষ্ঠনে একথা জানিয়ে তুলা উৎপাদন খাতে ব্যাংক ঋণ ও ভর্তুকির ব্যবস্থা করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

পল্টনে ইকোনমিক রিপোটর্স ফোরাম (ইআরএফ) মিলনায়তনে ‘বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে বাংলাদেশ তুলা চাষের গুরুত্ব ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।

ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালার স্বাগত বক্তব্যে শুরু হওয়া অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম। ইআরএফ, বাংলাদেশ কটন জিনার্স এ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ সুদান কটন জিনিং ইন্ডাস্ট্রিজ এ সেমিনার আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য হচ্ছে পোশাক খাত। এই খাতের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুতা তৈরির কাঁচা পণ্য তুলা সম্পূর্ণভাবে আমদানি নির্ভর। অথচ বাংলাদেশে উৎপাদনের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সরকারের বিভিন্ন স্তরের অসহযোগিতার কারণে সম্ভব হচ্ছে না।

“এমনকি সম্পূর্ণভাবে কৃষিপণ্য হলেও এই পণ্যটিকে এখনও কৃষিপণ্য হিসেবে ঘোষণাই করেনি। অথচ সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য ক্ষতির মধ্যেও পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের বিশাল এলাকা জুড়ে তামাক চাষ হচ্ছে।”

তৌহিদ হোসেন বলেন, “দেশের যেসব জায়গায় তামাক উৎপন্ন হচ্ছে। তার একটা অংশ খুব তাড়াতাড়ি তুলা চাষে নিয়ে যাব। কারণ লাভের দিক দিয়েও তুলা সম্ভাবনাময়।”

তিনি বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যাপকভাবে তামাক উৎপাদন হচ্ছে। তামাক চাষের কারণে জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। তামাক চাষের জমির কিছু অংশে তুলা চাষ করলে কৃষকও লাভবান হবেন, দেশও অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হবে।”

তৌহিদ হোসেন বলেন, “দেশের জন্য ভালো, তা কোনও গোষ্ঠীর বিপক্ষে গেলেও সেই সিদ্ধান্ত নিতে পিছপা হবে না ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার।”

তুলা চাষ বাড়াতে নীতি সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “তুলা চাষে আমি কিন্তু সাবসিডি (ভর্তুকি) দেওয়ার পক্ষপাতি। সমস্ত পৃথিবীতে সাবসিডি দিচ্ছে, যাদের সামর্থ্য আছে।”

এসময় তিনি সরকারের নীতি প্রণয়ন নিয়ে হাতাশা প্রকাশ করে বলেন, “পোশাক শিল্পের জন্য বিশেষ বিবেচনায় তুলা আমদানির জন্য কোনও আমদানি শুল্ক নেই। দেশীয় তুলার ওপর ভ্যাট-ট্যাক্স বসানো হয়েছে।”

দেশীয় তুলার ওপর আরোপিত এই ট্যাক্স কমানোর জন্য সভায় উপস্থিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (কাস্টম বন্ড)মোয়াজ্জেম হোসেনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

অনুষ্ঠানে দ্রুতই দেশীয় তুলার ওপরে আরোপিত ট্যাক্স-ভ্যাট প্রত্যাহারের সুখবর আসবে আশা প্রকাশ করেন এনবিআর সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন তুলা কেন কৃষিপণ্য নয়- সরকারের এমন নীতির নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “এটা যে একটা কৃষিপণ্য তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কোনও ক্ষতিকর পণ্য না। এটা খুবই প্রয়োজনীয় পণ্য। এটা কৃষিপণ্য স্বীকৃতি দিলে এই খাতের চাষিরাও অন্যন্যা কৃষিপণ্যের মতো ঋণ সুবিধা পাবে।

তিনি বলেন, “দেশে চাহিদার মাত্র ২ শতাংশ তুলা চাষ হচ্ছে। অথচ সরকারের যথাযথ নীতি সহায়তা পেলে এটা ২৫ শতাংশ পর্যন্ত উন্নীত করা সম্ভব। তখন এটা আমাদের পোশাক খাতের তুলনামুলক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়িয়ে তুলবে।”

তৌহিদ হোসেন বলেন, “দেশীয় তুলা চাষীদের মাধ্যমে আমাদের পোশাক রপ্তানি খাতের সক্ষমতা ৫-১০ শতাংশ বাড়ানো সম্ভব। সামনের দিনগুলোতে যেভাবে প্রতিযোগিতা আসছে তাতে এটা খুবই প্রয়োজন হবে।”

যুক্তরাষ্ট্রের করযুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানির চিন্তা করছি। এতে তারা যেন খানিকটা সুবিধা পান। তাহলে তারা আমাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে দ্বিধা করবে।”

তুলাকে কৃষিপণ্য হিসেবে ঘোষণা করতে এবং দেশে তুলা উৎপাদন বৃদ্ধিতে দুই মাসের মধ্যে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে বলে জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।

বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের নির্ধারিত সময়সীমা পিছিয়ে দেওয়ার চিন্তা থেকে সরে এসেছে সরকার। নির্ধারিত সময় অনুযায়ী আগামী বছরেই এলডিসি থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে গত ১৩ মার্চ উপদেষ্টা পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে।

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের ২০২৬ সালে এলডিসির তালিকা থেকে উত্তরণের যে সময়সীমা আছে তা পেছানো উচিত হবে না।

তিনি বলেন, “উত্তরণের জন্য সরকার ও ব্যবসায়ীরা আগে তেমন কোনও প্রস্তুতি নেয়নি। তাই বলে থেমে থাকা যাবে না। উত্তরণ পরবর্তী তিন বছর সময় পাওয়া যাবে, তখনই ব্যবসায়ীরা প্রস্তুতি নেবেন।”

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ কটন জিনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক গোলাম সাবের বলেন, বাংলাদেশে তামাক কৃষিপণ্য। অথচ তুলাকে এখনও কৃষিপণ্য হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ফলে তুলা চাষীরা কৃষি ঋণ নেওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। ঋণ নিতে দিতে হয় বাড়তি সুদ।”

সরকারের নীতি সহায়তা পেলে অন্তত দুই লাখ হেক্টর জমিতে তুলা চাষ করে আমদানিকৃত তুলার চার ভাগের এক ভাগ দেশে উৎপাদন করা সম্ভব বলে জানান তিনি।

গোলাম সাবের বলেন, “চামড়ার মৌসুমে ট্যানার্সদের যেভাবে স্বল্প সুদের ঋণ দেওয়া হয়। তুলাতেও স্বল্প সুদের ঋণ দেওয়া হলে কৃষকরা তুলা উৎপাদন করে দাম পাওয়ার অনিশ্চয়তা থেকে বের হয়ে আসতে পারবে।”

প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকার তুলা আমদানি করতে হয় জানিয়ে তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী পরিচালক ড. ফকরে আলম ইবনে তাবিব বলেন, বিপুল এই বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে এক-চতুর্থাংশ দেশে উৎপাদন করা সম্ভব।

তিনি বলেন, “ধানের জমিতে তুলা চাষ হয় না। মূলত চরাঞ্চল, বরেন্দ্র এলাকা, দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত এলাকা, পাহাড়ি এলাকাসহ উচুঁ জমিতে তুলা চাষ করা হয়। নীতি সহাযোগিতা দেওয়া হলে খাদ্য নিরাপত্তা ব্যাহত না করেই দেশে ২০ থেকে ২৫ লাখ টন তুলা উৎপাদন করা সম্ভব।

“তুলা বীজ থেকে ভোজ্য তেল ও গবাদি পশুর খাদ্য খৈল পাওয়া যায়। ফলে তুলা চাষ বাড়লে আমদানি নির্ভর ভোজ্য তেল ও খৈল আমদানি কমবে”, বলেন তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক।

সুদানে তুলা চাষে সফল প্রবাসী উদ্যোক্তা মো. আবুল খায়ের বাংলাদেশ-সুদান কটন জিনিং ইন্ডস্ট্রির ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

তিনি জানান, বাংলাদেশে তুলা চাষ বাড়াতে সহায়তা করবেন। ইতোমধ্যে উচ্চ ফলনশীল তিনটি উন্নত জাতের তুলা বীজ পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করা হয়েছে। এই নতুন জাতের চাষাবাদ শুরু হলে কম জমি থেকে বেশি তুলা উৎপাদন করার সম্ভব হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালা বলেন, তুলা এখনও কৃষিপণ্য নয় বা দেশি তুলার ওপর বৈষম্যমূলক কর আছে, অনেকে তা জানত না। দেশের এই গুরুত্বপূর্ণ খাতটিকে বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় নীতি সহযোগিতা দেওয়া প্রয়োজন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত