ক্ষমতা নয়, দায়িত্ব নিয়েছেন বলে জানালেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে যে জন আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে তা পূরণ করাই সরকারের অঙ্গীকার।
সোমবার বিকালে বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে একটি বইয়ের পাঠ পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে তা পূরণ করা আমাদের অঙ্গীকার। আমরা ক্ষমতা নিইনি, একটা দায়িত্ব নিয়েছি। এই দায়িত্বটা নেওয়ার পর কেউ আমরা শান্তি মতো নিঃশ্বাস নিতে পারছি না। টানা দায়িত্ব পালন করে চলেছি।”
সাংবাদিক এহ্সান মাহমুদের লেখা ‘স্বাধীনতা গণতন্ত্র মানবাধিকার’ বইটি প্রকাশ করেছে আদর্শ প্রকাশন। আওয়ামী লীগের শাসনামলে সরকারের বিভিন্ন কাজের সমালোচনা করে দৈনিক সমকালে প্রকাশিত লেখা কলামের সংকলন এটি।
আলোচনায় আরও অংশ নেন সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান, দৈনিক প্রথম আালোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, নেত্র নিউজের প্রধান সম্পাদক তাসনিম খলিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরীন এবং লেখক গবেষক ও শিক্ষক পারসা সানজানা সাজিদ।
অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, “এতদিন যে শাসন তারা করে গেছে সেটা হচ্ছে রাজতন্ত্রের আদলে পরিবারতন্ত্র। কোনো সমালোচনা করার অধিকার সেখানে ছিল না।
“এহ্সানের বইয়ে যে কথাগুলো উঠে এসেছে, আমরা চাই আগামীর বাংলাদেশ সেই জিনিসগুলো না থাকুক। অন্তর্বর্তী সরকার বা আগামীর অন্য কোনও সরকার এই ভুলগুলো আর না করুক। কোনও দল নয়, আমরা চাই জনগণই ক্ষমতায় থাকুক।”
লেখক গবেষক পারসা সানজানা সাজিদ বলেন, “এখন ফ্যাসিস্ট উৎখাতের নামে আবার দমন-পীড়নের একটা ট্রেন্ড যেন চালু না হয়ে যায়। সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে সবার।”
ড. গীতি আরা নাসরীন বলেন, ১১৫ পৃষ্ঠার এই বইতে ২০২২ও ২০২৩ সালে লেখা তার কলামগুলো সমকালে প্রকাশিত হয়েছে।
“ওই সময়টায় মত প্রকাশের স্বাধীনতা ছিল না, কিন্তু এরপরও মানুষ কথা বলেছে। বইয়ের লেখাগুলোই তার প্রমাণ। লেখাগুলো পড়ার সময় একটা জার্নির মতো মনে হবে। সময়টা চোখের সামনে ভাসে।”
যারা দেশ চালায় তাদের মধ্যে সাধারণ মানুষের চেয়েও বেশি রাজনৈতিক প্রজ্ঞার অভাব রয়েছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক। তিনি বলেন, “ক্ষমতাবানরা ভাবে আমরা যেভাবে বলবো মানুষ সেভাবেই চলবে। তাই তারা মিডিয়াকে ব্যবহার করে নিজের কথা বলে। আর মিডিয়া ভাবে তারা যা বলবে মানুষ সেটাই বিশ্বাস করবে। কিন্তু তারা জানে না সাধারণ মানুষ সব জানে। এই বইটি তার প্রমাণ। বইটি আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে।”
সাংবাদিক তাসনিম খলিল বলেন, “বইটি একটি দলিল, একটি নির্দিষ্ট সময়ের। তিনি ডেস্কে বসে মন্তব্য লিখেননি, একেবারে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন। তবে বইটি পড়বেন অতীত জানার জন্য নয়। বইটিতে ২০২৫ ২০২৬; সালে সরকারের কাছ থেকে আমার কী পাবো তার গাইডলাইন আছে।”
সাংবাদিক সোহরাব হাসান বলেন, “পুরো বইটিই খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমাকে বেশি আকৃষ্ট করেছে বইয়ের উৎসর্গপত্র। লেখাগুলো একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। অনেকেই বলেন আন্দোলন, বিপ্লবে গণমাধ্যমের কোনো ভূমিকা নেই। কিন্তু এহ্সান মাহমুদের এই লেখাগুলো প্রমাণ করে তাদের দাবি ভুল। সবকিছুতে গণমাধ্যমেরও ভূমিকা ছিল।
“এই বইয়ে ক্ষমতাসীন দলের আচরণ ও অত্যাচারের কথা বলা আছে। তাদের ফ্যাসিবাদীর কথা বলা আছে। একই সঙ্গে বলা হয়েছে বিরোধী দলের ওপর দমন-পীড়নের কথা।”
সাংবাদিক আবু সাঈদ খান বলেন, “কবি সাহিত্যকরা সাধারণত রাজপথের আন্দোলনে যান না, এহ্সান সেখানে ব্যতিক্রম। তিনি লেখালেখি করেই দায়িত্ব সারেননি, রাজপথেও থেকেছেন।
“বইটি পড়ে মনে হতে পারে এহ্সান হয়তো বিএনপির পক্ষে লিখেছে। কিন্তু আসলে তা নয়। এহ্সান বিএনপির কথা বলে তখনকার বিরোধীদের দমন নিপীড়নের কথা তুলে ধরেছেন। এহ্সান যখন লেখাগুলো লিখেছেন, তখন কিন্তু আর কেউ লিখছিল না।”
সবশেষে লেখক এহ্সান মাহমুদ সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, “৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশ কেমন হবে সেটা ঠিক করতে হবে আমাদের। বর্তমান বাংলাদেশ নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখছে সবাই। সেসব স্বপ্ন আমাদের পূরণ করতে হবে।”