বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং এর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ জামায়াতের সব অঙ্গসংগঠনকে নিষিদ্ধ করে জারি করা প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হয়েছে।
বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক শাখা-২ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
সরকারের নির্বাহী আদেশে জামায়াতে ইসলামী এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারির ২৮ দিনের মাথায় তা বাতিল করে আরেকটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হলো।
তবে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হলেও দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন বাতিল থাকায় দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ নেই জামায়াতে ইসলামীর।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে জুলাইয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার জন্য জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করে বিগত আওয়ামী লীগের সরকার জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু করে।
এর ধারাবাহিকতায় গত ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামী এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক শাখা-২ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
তবে চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এক পর্যায়ে রূপ নেয় সরকার পতনের আন্দোলনে। এরপর ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতন হয়।
শেখ হাসিনার সরকার পতনের পরপরই নতুন সরকার গঠনের বিষয়ে সেনাপ্রধান যে দলগুলোকে নিয়ে আলোচনায় বসেন তার মধ্যে জামায়াতে ইসলামীও ছিল। পরে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকেও ছিলেন জামায়াতের শীর্ষ নেতারা। এর ধারাবাহিকতায় গত ৮ আগস্ট গঠিত হয় নতুন অন্তর্বর্তী সরকার।
নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই জামায়াতের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি ছিল আলোচনায়।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার ২০ দিনের মাথায় নতুন প্রজ্ঞাপন দিয়ে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দেওয়া আগের প্রজ্ঞাপনটি বাতিলের কথা জানানো হলো।
বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, “যেহেতু বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং উহার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ উহার সকল অঙ্গ সংগঠনের সন্ত্রাস ও সহিংসতায় সম্পৃক্ততার সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায় নাই; এবং
“যেহেতু সরকার বিশ্বাস করে যে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং উহার ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ উহার সকল অঙ্গ সংগঠন সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সাথে জড়িত নহে;
“সেহেতু সরকার, সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯ এর ধারা ১৮ এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং উহার ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ উহার সকল অঙ্গ সংগঠনকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা সংক্রান্ত এ বিভাগের বিগত ১৭ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ মোতাবেক ০১ আগস্ট ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ তারিখের প্রজ্ঞাপন এস, আর, ও. নং. ২৮১-আইন/২০২৪ এতদ্দ্বারা বাতিল করিল এবং উক্ত আইনের তফসিল-২ হইতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং উহার ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ উহার সকল অঙ্গ সংগঠন এর তালিকাভুক্তি বাতিল করিল। ইহা অবিলম্বে কার্যকর হইবে।”
নির্বাহী আদেশে এর আগেও একবার নিষিদ্ধ হয়েছিল জামায়াতে ইসলামী। একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর তৎকালীন মুজিবনগর সরকার জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করেছিল।
এরপর স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকার ধর্মীয় সব দল নিষিদ্ধ করলে জামায়াতও সেই কাতারে পরে নিষিদ্ধ হয়। তবে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশের যে উল্টোযাত্রা শুরু হয়, তাতে পুনর্বাসিত হয় জামায়াত।
জিয়াউর রহমানের আমলে জামায়াত সক্রিয় ওঠার পর এইচ এম এরশাদের আমলে দলটি সংসদেও আসন নেয়।
১৯৮৬ সালের পর থেকে প্রায় প্রতিটি সংসদে জামায়াত ছিল। ২০০৮ সালের সংসদে দুটি আসনে জিতেছিল তারা। উচ্চ আদালতের রায়ে ২০১৩ সালে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন হারায় দলটি। এরপর থেকে দলীয়ভাবে জামায়াত আর কোনও নির্বাচনে অংশ নিতে পারেনি।