ফ্রিল্যান্সার বানানোর দ্বিতীয় দফার প্রকল্পে বাকি ৪৮ জেলার প্রায় ২৯ হাজার তরুণকে প্রশিক্ষণ দেবে সরকার। তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের ব্যয় ৩০০ কোটি টাকা।
‘দেশের ৪৮টি জেলায় শিক্ষিত কর্মপ্রত্যাশী যুবদের ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি প্রকল্প’ শিরোনামের প্রকল্পটি মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদিত হয়।
এই প্রশিক্ষণ নিতে প্রশিক্ষণার্থীদের কোনও খরচ করতে হবে না। উল্টো প্রতিদিন খাওয়া ও যাতায়াত ভাতা দেওয়া হবে।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। সভা শেষে পরিকল্পনা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব সত্যজিত কর্মকার সিদ্ধান্তগুলোর বিস্তারিত তুলে ধরেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ফ্রিল্যন্সিংয়ের দ্বিতীয় দফার প্রকল্পটিতে ব্যয় হবে ৩০০ কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই প্রকল্পে কোনও বিদেশি ঋণ বা অর্থায়ন নেই। অর্থাৎ পুরো টাকাই সরকারকে রাজস্ব থেকে ব্যয় করতে হবে।
আড়াই বছর আগে ১৬ জেলার (ঢাকা, গোপালগঞ্জ, গাজীপুর, মাদারিপুর, শরিয়তপুর, রাজবাড়ী, কুমিল্লা, লক্ষীপুর, চাঁদপুর, রাজশাহী, নড়াইল, ঠাকুরগাঁও, শেরপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ ও ভোলা) ৬ হাজার ৫০০ তরুণকে একই ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রকল্প হাতে নিয়েছিল সরকার। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে।
দ্বিতীয় ধাপের এই প্রকল্পে ৪৮ জেলায় উচ্চগতির ইন্টারনেট-সংবলিত দুটি করে ল্যাব স্থাপন করা হবে। প্রতিটি ল্যাবে ২৫ জন করে প্রশিক্ষণার্থী প্রশিক্ষণের সুযোগ পাবেন। প্রতি জেলায় একেক ব্যাচে ৫০ জন প্রশিক্ষণার্থী ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবেন। এ জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হবে। ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি পাস। ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী যেকোনো নারী-পুরুষ আবেদন করতে পারবে।
এর আগে ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত তিন বছর মেয়াদে ১৬ জেলায় প্রকল্পটির খরচ ধরা হয় সাড়ে ৪৭ কোটি টাকা। এর আওতায় যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, তাদের মধ্যে ৬৪ শতাংশ বা ৮১৩ জন এখন অর্থ উপার্জনের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন। এছাড়া ২৬৩ জন বা ২১ শতাংশ বিভিন্ন ধরনের চাকরিতে রয়েছেন বলে সরকার জানিয়েছে।
বর্তমানে বিশ্বের মোট ফ্রিল্যান্সারের মধ্যে ১৪ শতাংশই বাংলাদেশের। ঘরে বসেই অনলাইনে বিভিন্ন দেশের কাজ করে থাকেন তারা। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড রিপোর্ট ২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় ১০ লাখ তরুণ-তরুণী ফ্রিল্যান্সিংয়ের সঙ্গে যুক্ত।
নতুন সরকারের প্রথম একনেক সভায় এই প্রকল্পটি ছাড়া আরও ৯টি প্রকল্প অনুমোদিত হয়। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৩ হাজার ৬০৯ কোটি টাকা, বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ২৯০ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ সহায়তা থেকে ২৫৪ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।
সত্যজিত কর্মকার বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরীর পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা স্থাপন প্রথম সংশোধিত প্রকল্পটি স্থানীয় সরকার বিভাগ তুলে নিয়েছে। এর কারণ হচ্ছে ডলারের দাম বাড়ায় এটির ব্যয় সংশোধন করতে হবে। তাই এটি ইচ্ছে করলেই একনেকে অনুমোদন দেওয়া যেতে পারতো। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কারণে বাদ দেওয়া হয়েছে।
একনেকে অনুমোদিত অন্য ৯টি প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএইউ) অধীনে সুপার স্পেশিয়ালাইজড হাসপাতাল স্থাপন (দ্বিতীয় সংশোধিত); পল্লী দারিদ্র বিমোচন ফান্ডের (পিডিবিএফ) কার্যক্রম সম্প্রসারণ প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়); ঢাকা জেলার গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ইনফ্রাক্টচার মিনিন্সটারমিং প্রজেক্ট; ইন্ট্রিগেটিং ক্লাইমেট চেঞ্জ এ্যাডাপশন ইনটু সাসটেইনেবল ডেভলপমেন্ট পাথওয়েজ অব বাংলাদেশ প্রকল্প; ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটারিং (দ্বিতীয় পর্যায়); দুদকের খুলনা, রংপুর, রাজশাহী, বরিশাল এবং সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের ভবন নির্মাণ এবং ময়মনসিংহ বিভাগীয় কার্যালয়ের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ; আরবান রেজিলিয়েন্স প্রজেক্ট (ইউআরপি) : প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেশন অ্যান্ড মনিটরিং ইউনিট (পিসিএমইউ) (চতুর্থ সংশোধীত) প্রকল্প।
এছাড়া মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য উপস্থাপিত সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (সেসিপ) প্রকল্পটিও অনুমোদন পেয়েছে একনেক সভায়।