Beta
শুক্রবার, ১৬ মে, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ১৬ মে, ২০২৫

ইন্টারপোলে রেড নোটিসের আবেদন : এই ১২ জন আছে কোথায়

interpol-red-notice
[publishpress_authors_box]

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ সরকারের ১২ জনকে গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলের শরণ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

তাদের বিরুদ্ধে ‘রেড নোটিস’ জারি করতে প্যারিসভিত্তিক আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থাটির কছে আবেদন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি)কে উদ্ধৃত করে এই খবরটি শনিবার এসেছে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে।

এই ১২ জনের অধিকাংশই আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী। তাদের বিরুদ্ধে জুলাই অভ্যুত্থানে সংঘটিত বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডের মামলায় আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে।

তারা হলেন- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।

তাদের সঙ্গে আরও যাদের নামে র্ডে নোটিস জারির আবেদন হয়েছে, তারা হলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক পুলিশ প্রধান (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।

গত বছরের আগস্টে অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর থেকে তারা লাপাত্তা। তবে যেহেতু এখন ইন্টারপোলের সহায়তা চাইছে বাংলাদেশ পুলিশ, তাতে ধরে নেওয়া যাচ্ছে এরা কেউ দেশে নেই।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ভারতে রয়েছেন, তা জানা। ৫ আগস্ট বিমানে করে ভারতে চলে যাওয়ার পর এখনও নয়া দিল্লিতে বিশেষ নিরাপত্তায় রয়েছেন তিনি। সেখানে থেকে বিদেশে থাকা আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি সভাও করছেন তিনি, সেগুলো আবার দলের ফেইসবুক পাতায় প্রচারও হচ্ছে।

জুলাই গণহত্যার আসামি হিসাবে বিচারের জন্য শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে ভারত সরকারকে গত ডিসেম্বরে চিঠি দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু নয়া দিল্লি এখনও কোনও উত্তর দেয়নি।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতে থেকে শেখ হাসিনার বক্তৃতা-বিবৃতি দেওয়া বন্ধ করতে নয়া দিল্লিকে আহ্বান জানান। তারপরও তা বন্ধ হয়নি।

শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

অভ্যুত্থানের পর ওবায়দুল কাদেরের অবস্থান নিয়ে ছিল ধোঁয়াশা। ধারণা করা হচ্ছিল, তিনি বিদেশে পালিয়েছেন। তবে নভেম্বরে তার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়। অর্থাৎ তার আগ পর্যন্ত তিনি দেশেই লুকিয়ে ছিলেন।

অভ্যুত্থানের দুই মাস পর গত বছরের নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে কাদের ময়মনসিংগের ধোবাউড়া সীমান্ত দিয়ে মেঘালয় হয়ে আসামের গৌহাটিতে পাড়ি জমান বলে জানান আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।

সেখান থেকে কাদের কলকাতায় যান বলে জানা গেছে। তিনি এখন ভারতে আছেন, নাকি দুবাইয়ে পাড়ি জমিয়েছেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অনলাইন-অফলাইনে তার কোনও কার্যক্রমও নেই।

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ভারতের কলকাতায় রয়েছেন বলে গত সেপ্টেম্বরে নিশ্চিত হওয়া যায়। তখন কলকাতার ইকোপার্কে তাকে দেখা গিয়েছিল।

আসাদুজ্জামান কামালের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা অসীম কুমার উকিল, তার স্ত্রী অপু উকিল, হাজি সেলিমের ছেলের একটি ভিডিও প্রকাশ পায়। কামালকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি।

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বেলজিয়ামে রয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। ইউরোপের দেশ এই দেশটিতে এক সময় পড়াশোনা করেছিলেন তিনি।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, দুবাই হয়ে জার্মানি ঘুরে আগস্টের শেষ দিকে বেলজিয়ামে পৌঁছান হাছান মাহমুদ। দেশটির লিমবুর্গের হ্যাসেল্ট সিটিতে নিজের বাড়িতেই থাকছেন তিনি।

আওয়ামী লীগের জার্মানি শাখার সাধারণ সম্পাদক মোবারক আলী ভূঁইয়া বকুল গত ২৬ আগস্ট জার্মানির ডুসেলডর্ফ বিমানবন্দরে নামার পর হাছান মাহমুদকে গাড়িতে তুলে বেলজিয়ামে পৌঁছে দেন, যা বকুল নিজেই সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

এরপর প্রকাশ্যে দেখা না গেলেও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছিলেন হাছান মাহমুদ।

গত ৩১ মার্চ হাছান মাহমুদকে লন্ডনে ঈদের জামাতে দেখা যায়। লন্ডনের গ্যাংসহিল এলাকার আল-কালাম মসজিদে ঈদের নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন তিনি।

প্রবাসী সাংবাদিক সৈয়দ আনাস পাশা জানান, হাছান মাহমুদ বেলজিয়ামে থাকলেও তার ছেলে পড়াশোনা করেন লন্ডনে, তার সঙ্গে ঈদ করতেই এসেছিলেন তিনি।

সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক কোথায় আছেন, সে বিষয়ে নিশ্চিত কোনও খবর পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি দেশে আছেন বলে এতদিন অনেকে ধারণা করছিল।

গত ফেব্রুয়ারিতে গাজীপুরে মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা হয়। সেসময় স্থানীয়দের সঙ্গে হামলাকারীদের সংঘর্ষও বাধে।

সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের মোহাম্মদপুরের বাড়িতে অভ্যুত্থানের পর ২২ আগস্ট অভিযান চালানো হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। নানকও ভারতে পালিয়েছেন বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু নিশ্চিত কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।

সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সেপ্টেম্বরে সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যান বলে খবর এসেছে। তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়াও ছিলেন।

তারপর নওফেল বারাসাতে গিয়ে ওঠেন বলে খবর মিললেও এখন কোথায় আছেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাকে প্রকাশ্যে দেখাও যায়নি।

সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু ভারতে রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে খবর এসেছে যে তিনি দেশে থাকা তার গুলশানের প্লটসহ কিছু সম্পত্তি বিক্রি করতে ক্রেতা খুঁজছেন।

বিপু প্রকাশ্যে আসছেন না অভ্যুত্থানের পর থেকেই। এক ব্যবসায়ী কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, বিদেশ থেকে বিপু তাকে ফোন করে তার গুলশান ও মাদানী এভিনিউর জায়গা কেনার অনুরোধ করেন।

সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাতকে আটকের খবর ছড়িয়েছিল গত বছরের আগস্টের শেষ দিকে, পরে দেখা যায় তা নিছক গুজব।

শুরুতে কিছুদিন কোনও খবর না পাওয়া গেলেও আরাফাতকে এখন বক্তৃতা-বিবৃতিতে সক্রিয় দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে কথা বলছেন তিনি। আওয়ামী লীগের ফেইসবুক পাতায় শুক্রবারও তার একটি অডিও প্রকাশ করা হয়েছে।

আরাফাত কোনও এক সময় বিদেশে পাড়ি জমান। তবে কখন তিনি গেলেন, এখন আছেন কোথায়, তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।

শেখ হাসিনার ভাস্তে ডিএসসিসির সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস সরকার পতনের আগেই বিদেশে গিয়েছিলেন, তারপর আর ফেরেননি।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৩ আগস্ট সপরিবারে সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলেন তাপস। সেখান থেকে পরে তিনি চলে যান যুক্তরাজ্যে। এখন তিনি লন্ডনেই রয়েছেন।

তবে তাপসকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি একবারও।

শেখ রেহানার দেবর, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক কোথায় রয়েছেন, সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু জানা যায়নি। তাকে কোথাও দেখা যাওয়ার খবরও মেলেনি।

তারেকের ভাবি শেখ রেহানা বোন শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতে যাওয়ার পর সেখান থেকে লন্ডনে চলে যান। এখন সেখানেই রয়েছেন তিনি। তার ছেলে-মেয়েরাও সেখানে।

সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ দেশ ছেড়েছিলেন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময়ই। যখন তার অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান শুরু হয়, তার ঠিক আগে দেশ ছাড়েন তিনি।

গত বছরের ৪ মে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে বেনজীর সপরিবারে দেশ ছাড়েন বলে খবর আসে। তবে তারপর তিনি সিঙ্গাপুরেই আছেন, নাকি অন্য কোনও দেশে পাড়ি দিয়েছেন, সে বিষয়ে কোনও তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।

কেউ কেউ বলছেন, বেনজীর এখন আছেন দুবাইয়ে। আবার তার তুরস্কে অবস্থানের কথাও শোনা যাচ্ছে।

রেড নোটিসে কী হবে

আদালত, রাষ্ট্রপক্ষ অথবা তদন্ত সংস্থার অনুরোধে পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি শাখা ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারির আবেদন করে থাকে। সেই আবেদন বিবেচনায় নিয়ে ইন্টারপোল এই রেড নোটিস জারি করে।

প্রথম আলো জানিয়েছে, শেখ হাসিনা ও বেনজীর আহমেদ ছাড়া অন্য ১০ জনের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে এনসিবি থেকে ইন্টারপোলের কাছে আবেদন করা হয় ১০ এপ্রিল।

শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করতে রেড অ্যালার্ট জারির জন্য ইন্টারপোলের কাছে আবেদন করা হয় গত বছরের নভেম্বরে।

বেনজীরের বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারি করতে ইন্টারপোলের কাছে আবেদন করা হয় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে।

এনসিবি যে ১২ জনের বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারির আবেদন করেছে, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আদালত থেকে বিভিন্ন মামলায় ওয়ারেন্ট বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে।

বিদেশে পালিয়ে থাকা আসামিদের অবস্থান শনাক্ত করতে ইন্টারপোল সহযোগিতা করে থাকে। অন্যদিকে বিদেশে পলাতক ব্যক্তিদের সম্ভাব্য অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেলে সেটিও সংশ্লিষ্ট দেশ ইন্টারপোলকে জানায়।

ইন্টারপোল যেসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারি করে, তা তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে। ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে এখন ৬২ জন বাংলাদেশির নামে রেড নোটিস জারি রয়েছে।

তাদের মধ্যে রয়েছে- সম্প্রতি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দুবাইয়ে পলাতক রবিউল ইসলাম আরাভ খান, শীর্ষ সন্ত্রাসী ফেরদৌস জাহাঙ্গীর ওরফে কালা জাহাঙ্গীর, শীর্ষ সন্ত্রাসী জাফর আহমেদ মানিক, শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ, শীর্ষ সন্ত্রাসী প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক অভির নাম।

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি আব্দুর রশীদ, শরিফুল হক ডালিম, রাশেদ চৌধুরী, যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত আবুল কালাম আজাদের (বাচ্চু রাজাকার) নামও রয়েছে এই তালিকায়।

ইন্টারপোলের সহায়তায় কাউকে গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশে ফেরত আনার নজির নেই।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আনতে নানা চেষ্টা করেও সফল হয়নি।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করেও টিকিয়ে রাখতে পারেনি আওয়ামী লীগ সরকার।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত