স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের বিষয়টি সামনে রেখে বর্তমান সরকার অন্তর্ভুক্তমূলক ও টেকসই চাকরির বাজার তৈরি করতে চায় বলে জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম চৌধুরী।
রবিবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এলডিসি গ্র্যাডুয়েশনের প্রস্তুতি নিয়ে ‘সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সবার জন্য মানসম্মত কাজ’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে তিনি এ কথা জানান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমরা খুব শিগগিরই স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে যাচ্ছি। ফলে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ আমরা কী ধরনের পরিবর্তন আনতে যাচ্ছি আমাদের শ্রম খাতে। আমরা অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টেকসই চাকরির বাজার তৈরি করতে চাই। সেই কারণেই সকল অংশীজনদের কথা শোনার জন্য আজকের এই সংলাপ।”
এ সময় তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারের মূল স্লোগান “স্মার্ট বাংলাদেশ : উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে কর্মসংস্থান”-এর কথাও উল্লেখ করেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) যৌথভাবে এই জাতীয় সংলাপের আয়োজন করে।
স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় বাংলাদেশ প্রবেশ করবে ২০২৬ সালে। উত্তরণ ২০২৬ সালে হলেও রপ্তানিতে ২০২৯ পর্যন্ত স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় থাকা সুবিধাগুলো পাবে বাংলাদেশ।
কিন্তু দেশের অভ্যন্তরীণ বেশ কিছু পরিবর্তন হতে হবে সামনের দুই বছরের মধ্যে। এর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হচ্ছে কর্মসংস্থান। জাতিসংঘের শর্ত অনুযায়ী, এ সময়কালে সকল নাগরিকের মানসম্মত কাজ এবং সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বলেন, “শ্রমিকের অধিকার এবং ভালো থাকার নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। বাংলাদেশ শ্রমিকের অধিকার এবং সামাজিক বিচার প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
তিনি বলেন, “আমরা বাংলাদেশকে একটি শান্তির দেশে পরিণত করতে চাই। সরকার বাংলাদেশের প্রত্যেক মানুষের জন্য শালীন কাজ এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। এটা আমাদের এবারের মেয়াদের প্রধান অগ্রাধিকার।”
সংলাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) বাংলাদেশ প্রধান টুমো পৌটিআইনেন বলেন, ২০২৬ সালে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের সময় টেকসই উন্নয়নের জন্য শ্রমখাতের সংস্কার খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, ১৯৭২ সাল থেকে আইএলওর সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক। বাংলাদেশ ৩৬টি আইএলও কনভেনশনে উপস্থিত হয়েছে। আমাদের কনভেনশনের সকল সিদ্ধান্তে তারা ভূমিকা রেখেছে। শ্রম অধিকারের প্রতি তার অঙ্গীকার নিশ্চিত করেছে। একটি মানসম্মত কর্মপরিবেশ এবং শ্রম অধিকার নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সক্রিয়ভাবে আইএলও-এর গভর্নিং বডিতে জমা দেওয়া রোডম্যাপ (২০২১-২০২৬) এবং বাংলাদেশের শ্রম খাতে ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যান (ন্যাপ) সামাজিক অংশীদারদের সাথে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
এই সংস্কারগুলো আইএলও দ্বারা সমর্থিত এবং টেকসই উন্নয়নের ২০৩০ এজেন্ডার সঙ্গে যুক্ত জানিয়ে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সমৃদ্ধির জন্য বর্ধিত শিল্প প্রতিযোগিতার সঙ্গে একটি ন্যায্য এবং লিঙ্গ-প্রতিক্রিয়াশীল শ্রমবাজারকে উৎসাহিত করা বর্তমান সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।
সংলাপে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। তিনি বলেন, নতুন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে, ফলে এটা সবচেয়ে ভালো সময় বিভিন্ন অংশীজনদের সাথে বসার। আমরা এই দশকের শেষে এলডিসি থেকে গ্র্যাডুয়েট হব। ফলে, আমাদের এই গ্র্যাডুয়েশন কীভাবে সুন্দর ও মসৃণ হতে পারে তা নিয়ে সবার পরামর্শের গুরুত্ব আছে।
কর্মসংস্থান বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকার জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের বর্তমান সরকারের কাছে সামনের পাঁচ বছরে কর্মসংস্থান তৈরি করা অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার। যুব এবং নারীদের ফোকাস করে আমরা শালীন কর্মসংস্থান তৈরি করতে চাই।”
অনানুষ্ঠানিক খাতকে ‘বোঝা’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এখনও আমাদের উপর বোঝা হয়ে আছে আমাদের অনানুষ্ঠানিক খাত। এই খাতের শ্রমিকদের আমরা আনুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের কাতারে নিয়ে আসতে চাই। তাতে উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে শ্রমিকদের জীবনমানও বৃদ্ধি পাবে।”