গণ-অভ্যুত্থান ১৯৯০ সালেও দেখেছে বাংলাদেশ। তবে সেবার অভ্যুত্থানের পর দেশজুড়ে দেয়ালে-দেয়ালে প্রতিবাদী অঙ্কন দেখেনি। ২০২৪-এর অভ্যুত্থানের একটি বড় স্মারক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে দেশের আনাচে-কানাচে শিক্ষার্থীদের আঁকা দেয়ালচিত্রগুলি।
এই অঙ্কনগুলিকে গ্রাফিতিও বলা হচ্ছে। গ্রাফিতি পশ্চিমা পথশিল্পের জনপ্রিয় একটি ধারা। এ ধরনের দেয়ালচিত্র আর লেখাজোখা দর্শককে আঘাত করবে, বিব্রত করবে, প্রশ্ন করবে আইন-কানুন, সরকার-দেশ-জাতি-রাষ্ট্র-ধর্ম সবাইকেই। জুলাই-আগস্ট ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমাদের দেশেও গ্রাফিতি শব্দটি এখন বহুল আলোচিত।
তবে, এই কথাও উঠছে যে দেশীয় দেয়ালচিত্রের ধারা বা রাজনৈতিক দেয়াললিখনের প্রথাগত চর্চার সঙ্গে এই শিল্পমাধ্যমটির আসলে কি কোনও তফাৎ আছে? প্রকরণগত কিংবা নান্দনিকতার মানদণ্ডে পার্থক্য যা-ই থাকুক না কেন, আমাদের দেয়ালচিত্র আর গ্রাফিতির উদ্দেশ্য যে একই সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। এই দেয়ালচিত্রগুলির বক্তব্য বোঝার একটি চেষ্টায় সকালসন্ধ্যার আয়োজন ‘দেয়ালের ভাষা, বোঝার আশা’।
এই গ্রাফিতিটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের ভাষণের স্মরণীয় একটি বাক্যের ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে মানুষের কথা হয়ে ওঠার দৃষ্টান্ত। ধারণা করা যায় যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় এটি আঁকা হয়েছিল। সেখানে বঙ্গবন্ধুর মুখাবয়ব এঁকে, তার নিচে জুড়ে দেয়া হয়েছিল তার বিখ্যাত সেই বাণী : আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ তার অধিকার চায়।
এই গ্রাফিতিটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের ভাষণের স্মরণীয় একটি বাক্যের ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে মানুষের কথা হয়ে ওঠার দৃষ্টান্ত। ধারণা করা যায় যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় এটি আঁকা হয়েছিল। সেখানে বঙ্গবন্ধুর মুখাবয়ব এঁকে, তার নিচে জুড়ে দেয়া হয়েছিল তার বিখ্যাত সেই বাণী : আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ তার অধিকার চায়।
পরবর্তীতে ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের সময় ‘আজ’-এর পর ‘ও’ বর্ণটি জুড়ে দেয়া হয়; ফলে বাণীটি মিলে যায় জুলাই অভু্যত্থানের আকাঙ্ক্ষার সাথে।
পরবর্তীতে ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের সময় ‘আজ’-এর পর ‘ও’ বর্ণটি জুড়ে দেয়া হয়; ফলে বাণীটি মিলে যায় জুলাই অভু্যত্থানের আকাঙ্ক্ষার সাথে।
কুমিল্লা নগরীসহ জেলার বিভিন্ন এলাকার দেয়ালগুলোতেই শোভা পাচ্ছে ব্যতিক্রমী এ শিল্পকর্ম। শৈল্পিক আঁকিবুকিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নতুন বাংলাদেশের চিত্র। এছাড়াও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মেলবন্ধন এবং প্রতিবাদী গর্জনকে উচ্চকিত করা হয়েছে। বাদ যায়নি মুগ্ধ’র “পানি লাগবে, পানি” বলার সেই হৃদয় নিংড়ানো ডাক।
যে প্রজন্মকে ‘হেইট পলিটিক্স’ বলতে শুনা যেত, সেই প্রজন্মই এখন রাজনৈতিক আলাপ জারি রাখার ঘোষণা দিয়েছে দেয়ালে দেয়ালে। শুধু রাজনৈতিক ভাবনাই নয় রাজনীতিকে শুদ্ধ করে রাষ্ট্র সংস্কারের দূরদর্শী চিন্তাও সঞ্চারিত করছে পথচারীদের মধ্যে।
ছাত্র আন্দোলন দমাতে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে মানুষ হত্যার অভিযোগ রয়েছে র্যাবের বিরুদ্ধে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, হেলিকপ্টার থেকে গুলিতে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে মিলিয়ে অন্তত ১০ জন শিশুও নিহত হয়।
এর মধ্যে একটি খবর ছিল নারায়ণগঞ্জে ছাদে খেলতে গিয়ে সাড়ে ছয় বছর বয়সী শিশু রিয়া গোপ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া। রিয়া তাদের চারতলা বাড়ির ছাদে খেলতে গিয়েছিল। এলাকায় সংঘর্ষ বাঁধলে তার বাবা দ্রুত তাকে ছাদ থেকে নামিয়ে আনতে যান। ছাদেই বাবার কোলে থাকা অবস্থায় বুলেট এসে বিদ্ধ হয় রিয়ার মাথায়। গুলিবিদ্ধ হওয়ার তিনদিন পর হাসাপাতালে মারা যায় রিয়া।
পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শর্মিলা আক্তার বলেন, আমরা পঞ্চগড়ের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩০ জন শিক্ষার্থী মিলে গ্রাফিতি এঁকেছি। ২০২৪-এর ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে নতুন একটি স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি। এর জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। সবকিছু স্মরণীয় করে রাখবে দেয়ালের এই গ্রাফিতি।
প্রাচীন রোমে গ্রাফিতির ব্যবহার ছিল ব্যাপক। সেসময়ও গ্রাফিতির মাধ্যমে মানুষকে রাজনৈতিক মত প্রকাশ করতে দেখা গেছে। প্রাচীন রোমে স্বাধীন সংবাদপত্র বা সোশ্যাল মিডিয়ার মতো আধুনিক যোগাযোগ মাধ্যম ছিল না। ফলে সাধারণ মানুষের পক্ষে তাদের অসন্তোষ বা দাবি জানানো কঠিন ছিল। এ ক্ষেত্রে গ্রাফিতি তাদের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছিল।
প্রবল ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছাড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন দুপুরে সেনাপ্রধান ওয়াকর উজ-জামান টেলিভিশন বক্তব্যে জানান, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ত্যাগ করেছেন।
সেনপ্রধানের ওই বক্তব্যের কিছুক্ষণ পর শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার খবর আসতে থাকে গণমাধ্যমে। বলা হয়, তিনি ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। সেদিনের খবরে তিনি হেলিকপ্টারে দেশ ছাড়ার কথা বলা হয়। তবে পরবর্তী সময়ে জানা যায়, তাকে তার বাসভবন গণভবন থেকে হেলিকপ্টারে ঢাকার তেজগাঁও পুরানো বিমানবন্দরে নেয়া হয়। সেখান থেকে একটি সামরিক বিমানে তাকে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়।
এই গ্রাফিতিটি সেই বিষয়টিকে তুলে ধরতে চেয়েছে। এতে চশমা পরা নারীটির মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। হাসিনা যেহেতু ভারতে আশ্রয় নেন, তাই এই নারীর স্যুটকেসে ভারতের পতাকা আঁকার চেষ্টা হয়েছে। তার পেছনেই দেখা যাচ্ছে একজন সেনাসদস্যকে। অদূরে জনতা ও সেনাবাহিনির উল্লাসের দৃশ্য।
ছবি : হারুন-অর-রশীদ রুবেল, মুক্তাদীর আহমদ, খাইরুল ইসলাম, মহসীন কবির, ইমরান রাজু, রাজীব দত্ত