ঈদের পর ঢাকার কাঁচাবাজারগুলোতে ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। রাজধানীবাসীর চাহিদার কথা মাথায় রেখে সবজির সরবরাহও বাড়িয়েছেন পাইকাররা। ফলে বাজারে সবজির সরবরাহ পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসছে। দামও আগের মতোই রয়েছে।
তবে কাঁচা মরিচের কেজি গত এক মাস ধরে ২৪০ টাকা বা তার ওপরে রয়েছে। ঈদের আগে-পরে সপ্তাহ খানেক ঢাকার কোথাও কোথাও ৪০০ টাকা পর্যন্ত দাম উঠেছিল এই কৃষি পণ্যটির।
অবশ্য গত বছরের এই সময়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কাঁচা মরিচ রেকর্ড ১ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। পরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমোদন দেওয়ার পর গত আগস্টের শেষ দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসতে শুরু করে। এরপর থেকে কাঁচা মরিচের কেজি ১৬০-২০০ টাকার মধ্যেই ওঠানামা করে। মাস খানেক ধরে এই দাম ২৪০-২৮০ টাকার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।
শনিবার ঢাকার নর্দা এলাকার মোড়ল কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, সেখানে বেশিরভাগ দোকানি ২৫০ গ্রাম কাঁচা মরিচ ৬০ টাকা (এক কেজি ২৪০ টাকা) দরে বিক্রি করছেন।
ওই বাজারে ১০ টাকার কাঁচা মরিচ কিনতে গিয়ে বিক্রেতা ও অন্যান্য ক্রেতাদের কাছে হাসির পাত্র হন এক নারী ক্রেতা। বিক্রেতারা ১০ টাকার কাঁচা মরিচ বিক্রি করতে চান না। তাদের দাবি, ১০ টাকার কাঁচা মরিচ পরিমাপ করা ঝামেলার কাজ।
অন্যদিকে, ওই ক্রেতার বক্তব্য– সবার তো একই রকম সামর্থ্য থাকে না।
তিনি বলেন, “আমার যতটুকু লাগবে ততটুকুই নেব। এমনিতেই কেউ যাতে হাসাহাসি না করে, তাই ১০ টাকার কাঁচা মরিচ কিনে সঙ্গে সঙ্গে ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলি। তারপরও এ নিয়ে হাসাহাসির মুখে পড়তে হয়।”
অতিরিক্ত গরমের কারণে এবছর মরিচ গাছ তেমন বাড়তে পারেনি। অনেক গাছ মরে গেছে। এখন আবার গত কয়েকদিন বৃষ্টি হওয়ায় মরিচের গাছের গোড়া পঁচতে শুরু করেছে। ফলে উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এজন্য দামও বাড়ছে বলে দাবি করছেন কৃষকরা।
বগুড়ার মরিচচাষি নজরুল ইসলাম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “দাম যে খুব বেশি বেড়েছে তাও না। আমরা এখানে ১১০-১১৫ টাকা কেজি দরে নিজেদের ক্ষেতের কাঁচা মরিচ বিক্রি করেছি। এই বৃষ্টির মৌসুমে এটা খুব বেশি দাম না।”
ওই মরিচগুলোই আবার ঢাকার কারওয়ান বাজারে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, এক হাজার টাকা পাল্লা (৫ কেজিতে এক পাল্লা) কিনে ২৪০ টাকা করে কেজি বিক্রি না করলে পোষায় না। তাছাড়া কেজি দরে মরিচ কিনলেও বেশির ভাগ ক্রেতা আধা পোয়া, এক পোয়া (২৫০ গ্রাম) কাঁচা মরিচ কেনেন। খুচরা পরিমাণ ওজন করতে গেলে কিছু বেশি যায়।
কাঁচা মরিচ আমদানিতে অনুমতি লাগে
স্থানীয় কৃষিপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে কাঁচা মরিচের আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে গত কয়েক বছর এই সময়ে কাঁচা মরিচ আমদানির জন্য আলাদাভাবে অনুমোদন দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এবছরও বাজারে কাঁচা মরিচের সংকট কাটাতে আমদানি খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি মো. ইমরান মাস্টার। তাদের দাবি ছিল, বাজার বেড়ে যাওয়ার আগে আমদানির উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
পরে সেই অনুমোদন দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি শুরু হয়েছে।
হিলি বাজারের কাঁচা মরিচ বিক্রেতা মো. ফারুক বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে প্রচণ্ড রোদের কারণে কাঁচামরিচ উৎপাদন কমে যায়। তাই বাজারে সরবরাহ কম ছিল। এখন ভারতীয় কাঁচামরিচ আমদানি শুরু হয়েছে।
সবজির সরবরাহ দাম আগের মতোই
ঢাকার বিভিন্ন বাজারে কচুরমুখী প্রতি কেজি ৮০ টাকা, বেগুন ৫০- ৬০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
পেঁপে ৫০ টাকা, ধুন্দল ৫০-৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, ঝিঙা ৬০ টাকা ও সজনে ১৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি।
লাউ প্রতিটি ৪০-৫০ টাকা পিস দরে বিক্রি হচ্ছে। পাকা টমেটোর কেজি প্রকারভেদে ৭০-৮০ টাকা ও গাজর ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
লেবুর হালি ১০ থেকে ৪০ টাকা, ধনে পাতার কেজি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা কলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৫০ টাকা।
এ ছাড়া বাজারগুলোতে লাল শাকের আঁটি ১৫ টাকা, লাউ শাক ৪০ টাকা, মুলা শাক ১৫ টাকা, পালং শাক ১৫-২০ টাকা, কলমি শাক ১০ টাকা, পুঁই শাক ৩০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
শুক্রবারও ঢাকার কারওয়ান বাজার, রামপুরা কাঁচাবাজার, মালিবাগ ও মগবাজার এলাকার কাঁচাবাজারগুলোতে এই দামেই শাক-সবজি কিনতে দেখা গেছে স্থানীয় ক্রেতাদের।
প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়, আর আলুর দাম ৬৫ টাকা প্রতিকেজি। গত দুই সপ্তাহ ধরে এই দুটি পণ্য একই দামে বিক্রি হচ্ছে।