বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবিরে গেলেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস; শুনলেন তাদের কষ্টগাথা, দেখলেন তারা কীভাবে থাকে, জানলেন তাদের কী চাওয়া।
শুক্রবার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরে গিয়ে শরণার্থীদের অবস্থা দেখার পাশাপাশি প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে জাতিসংঘ মহাসচিব ইফতার করেন বলেও বাসস জানিয়েছে।
চার দিনের সফরে বাংলাদেশে আসার পরদিন শুক্রবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে কক্সবাজারে যান গুতেরেস।
নিপীড়নের মুখে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ১২ লাখের মতো রোহিঙ্গার অধিকাংশই সীমান্ত জেলা কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার শরণার্থী শিবিরে থাকছে বছরের পর বছর।
দুপুরে বিমানের একটি ফ্লাইটে কক্সবাজার জেলা শহরে যাওয়ার পর সড়ক পথে উখিয়া যান জাতিসংঘ মহাসচিব। সেখানে তিনি রোহিঙ্গা লার্নিং সেন্টার, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও পাটজাত পণ্যের উৎপাদন কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার পর জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, “আজ আমি অনেকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি এবং তাদের সাহসে অনুপ্রাণিত হয়েছি। তাদের সংকল্প আমাকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। অনেকেই মিয়ানমারে তাদের যন্ত্রণা এবং তাদের এখানে আসার গল্প শেয়ার করেছেন।”
রোহিঙ্গাদের যেন আর শরণার্থী জীবনে আসতে না হয়, সেজন্য মিয়ানমারের সব পক্ষকে সহিংসতা ছেড়ে সংযত হওয়ার আহ্বান জানান গুতেরেস।
মিয়ানমার পরিস্থিতি এখন সঙ্কটময় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “যতক্ষণ না রাখাইনে সংঘাত এবং ব্যবস্থাগত নির্যাতন শেষ হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের তাদের (রোহিঙ্গা) সাহায্য করতে হবে। আমরা একটি গভীর মানবিক সংকটের দ্বারপ্রান্তে আছি। আর্থিক সহায়তায় কাটছাঁটের কারণে একটি অবর্ণনীয় বিপর্যয় হবে। মানুষ কষ্ট পাবে এবং মানুষ মারা যাবে।”
রোহিঙ্গার জন্য বৈশ্বিক মানবিক সহায়তার পরিমাণ কমে আসায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন জাতিসংঘ মহাসচিব।
লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিলেও বাংলাদেশের সীমাবদ্ধতার দিকটি তুলে ধরে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের জনগণ বিশাল সহায়তা করেছে। তারা তাদের ভূমি, বন, সীমিত পানি এবং অপ্রচলিত সম্পদ ভাগ করে নিয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এখন সময় এসেছে সহায়তার।”
পর্তুগিজ গুতেরেস ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সফরে এসেও রোহিঙ্গা সঙ্কট অবসানে বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
একই আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, “এর আগে ২০১৮ সালে আমি কক্সবাজারে এসেছিলাম। এই শিবিরগুলো জলবায়ু সঙ্কটের সম্মুখীন। গ্রীষ্মে তাপমাত্রা অত্যন্ত গরম এবং আগুনের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ঘূর্ণিঝড় এবং বর্ষা মৌসুমে বন্যা এবং বিপজ্জনক ভূমিধস ঘরবাড়ি এবং জীবন ধ্বংস করে দেয়।
“আবশ্যক খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি, এখানে মানুষের শিক্ষার, দক্ষতা উন্নয়ন প্রয়োজন। জাতিসংঘের সংস্থাগুলো, যেমন মানবিক এবং উন্নয়ন সংস্থাগুলোও, বিশাল বাজেট কাটছাঁটের মুখোমুখি। এটি মানুষের উপর সরাসরি এবং মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।”
রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধানের জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানানোর পাশাপাশি তিনি বলেন, শরণার্থীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি না হওয়ার পর্যন্ত তিনি এনিয়ে কথা বলে যাবেন।
শরণার্থী শিবির পরিদর্শনের পর জাতিসংঘ মহাসচিব প্রায় ১ লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতারে অংশ নেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস এই ইফতারের আয়োজন করেন।