আগামী ২০-২৩ নভেম্বর বাহরাইনে হবে ডেভিস কাপ এশিয়া-ওশেনিয়া অঞ্চলের গ্রুপ-৫ এর প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতার জন্য বাংলাদেশের ৬ সদস্যের খেলোয়াড় তালিকাও চূড়ান্ত। আগামী ১৮ নভেম্বর ডেভিস কাপ খেলতে ঢাকা ছাড়বে বাংলাদেশ দল।
এই দলে সুযোগ পেয়েছেন জারিফ আবরার, মোহাম্মদ হানিফ মুন্না, মোহাম্মদ রুস্তম আলী, মোহাম্মদ দীন ইসলাম ও রঞ্জন রাম। এই দলের নন প্লেয়িং ক্যাপ্টেন হিসেবে যাচ্ছেন খালেদ আহমেদ।
বাংলাদেশ দলের এই তালিকা এরই মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে ডেভিস কাপের ওয়েবসাইটে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে দ্বিতীয় বাছাই খেলোয়াড় হানিফ মুন্নাকে।
গত ৪-১৭ অক্টোবর রমনা টেনিস কমপ্লেক্সে হয়েছে বাছাই টুর্নামেন্ট। যেখানে ৯টি ম্যাচের মধ্যে ৮টিতেই জয় পেয়েছেন হানিফ। শুধু শীর্ষ বাছাই জারিফের কাছে একমাত্র ম্যাচে হেরেছেন তিনি। এর আগে সর্বশেষ একটি ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় দ্বৈতে হন রানার আপ, এককে সেমিফাইনাল খেলেন হানিফ। আর আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় হয়েছিলেন চ্যাম্পিয়ন।
কিন্তু হানিফের পারফরম্যান্সের এমন ধারবাহিকতা সত্ত্বেও তাকে বাদ দিচ্ছে বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশন।
হানিফের অভিযোগ, ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ মোহাম্মদ হায়দারের ক্ষোভের শিকার তিনি। অন্যায়ভাবে তাকে এই দল থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে।
তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “ ১৫ দিন আগে খালেদ আহমেদ স্যার জোর করে আমাদের ৪ খেলোয়াড়কে হায়দার সাহেবের বাসায় নিয়ে যান। ওখানে গিয়ে শুনি আমরা নাকি ক্রীড়া পরিষদের ডাইরেক্টরের কাছে স্যারের নামে উল্টাপাল্টা বলেছি। এজন্য আমাদের বকাঝকা করেন। উনার বাসায় ২ ঘন্টা বসিয়ে রেখেছিলেন। উনি বলেন, তোমরা খেলতে গিয়ে কোনও লাভ হবে না। এসব বলে আমাদের মন ভেঙে দিয়েছেন উনি।”
প্রায় ২ বছর টেনিস ফেডারেশনে তাকে ঢুকতে দেওয়া হতো না এমন অভিযোগও করলেন হানিফ, “উনি আমাদের খেলতে দেয়নি ২ বছর। ফেডারেশনের গেটে তালা মেরে রাখতো। ঢুকতে দিত না। তার ইচ্ছা মতো চলে ফেডারেশন। আমরা রিসেপশনে পরিচয় দিলেও ঢুকতে দেওয়া হতো না। এমনকি ন্যাশনাল গেমের সার্টিফিকেটও দেয় না আমাদের।”
দলের সঙ্গে যাওয়া রঞ্জন রামের বাছাই প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি, “ এমনিতেই আমাদের কোনও কোচ নেই। নিজেরা নিজেদের মধ্যে খেলি। এর ওপর এই দলে বাছাই প্রক্রিয়া ঠিক নেই। রঞ্জন রাম ৬টা ম্যাচে ওয়াকওভার দিয়েছে। হেরেছে আরও কয়েকটা ম্যাচ। সে কিভাবে এই দলে সুযোগ পায়?”
শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে হানিফকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে জানালেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ মোহাম্মদ হায়দার, “ওর বিরুদ্ধে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন নেওয়া হচ্ছে। অনেকগুলো অভিযোগ আছে ওর নামে। আম্পায়ার ও সিনিয়র খেলোয়াড়দের সঙ্গে বাজে ব্যবহার, লাইন কলগুলো না মানা এরকম অভিযোগ আছে। বিদেশে গিয়ে সে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করবে। যাতে দলে এর কোনও প্রভাব না পড়ে সে জন্য বাড়তি আরেকজনকে নেওয়া হবে।”
ফেডারেশনের বিরুদ্ধে কথা বলায় কি এমন শাস্তি পেতে যাচ্ছে হানিফ? বিষয়টিকে উড়িয়ে দিয়ে হায়দার বলেন, “আমাদের খেলোয়াড়দের খেলার মান কি সেটার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ যুব সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে তারা যোগ্য কিনা। এগুলো মনগড়া কথা। এ অভিযোগ সত্যি না। আমরা কখনও কাউকে ঢুকতে বাধা দিইনি ফেডারেশনে। এমন কথা যাতে না হয় এজন্য সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিয়েছি গেটে।”
এরপর তিনি যোগ করেন, “যদি মাদকসেবী কেউ ঢোকার চেষ্টা তাদের ঠেকানো হয়। ছেলেটার বিরুদ্ধে আমার কাছে মাদক সেবন করারও অভিযোগও আছে। বাছাই কমিটির টুর্নামেন্ট ডিরেক্টরের লিখিত অভিযোগ আছে আমার কাছে। তারা লিখেছে কেন মুন্নাকে বাদ দেওয়া উচিত। সেই লিখিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই আমরা তাকে বাদ দিয়েছি। অন্তত ৬-৭ টা অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।”
একটা সময় বাংলাদেশ ডেভিস কাপের এশিয়া-ওশেনিয়া অঞ্চলে গ্রুপ ৩ এ নিয়মিত খেলতো। কিন্তু পারফরম্যান্সের অবনতিতে গ্রুপ ৪ এ নেমে যায়। ধারাবাহিক অবনতির কারণে বর্তমানে বাংলাদেশকে খেলতে হবে ডেভিস কাপের গ্রুপ ৫ এ। যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে পাচ্ছে বাহরাইন, ব্রুনাই, ভুটান, লাওস, ম্যাকাও, মালদ্বীপ ও মঙ্গোলিয়াকে।