হজের খুতবায় সাধারণত ধর্মীয় বিষয়ের পাশাপাশি মুসলিম উম্মাহর সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা বলা হয়। এবারের খুতবায় প্রাধান্য পেয়েছে ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা ও পরাধীনতার বিষয়টি।
এবারের হজের খুতবায় ফিলিস্তিনিদের মুক্তির জন্য দোয়া করা হয়। হাজিদেরসহ পুরো মুসলিম বিশ্বের কাছেও তাদের জন্য দোয়ার আহ্বান জানানো হয়।
গত শনিবার হয়েছে হজের প্রধান আনুষ্ঠানিকতা। এদিন সূর্যদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সৌদি আরবের মক্কা নগরীর আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করেন প্রায় ২০ লাখ হাজি।
আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা হজের গুরুত্বপূর্ণ ও অন্যতম কাজ। হজের তিন ফরজের মধ্যে এটি অন্যতম। আর সেখানেই দেওয়া হজের খুতবা বা ভাষণ।
আরাফাতের ময়দানে অবস্থিত মসজিদে নামিরা থেকে শনিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে হজের খুতবা দেন মক্কার মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব শায়েখ মাহের আল মুয়াইকিলি।
ফিলিস্তিন নিয়ে খুতবায় বলা হয়, “আমাদের ফিলিস্তিনি মুসলিম ভাইদের জন্য দোয়া করুন। তারা দুঃখ-দুর্দশায় নিপতিত। শত্রুদের আঘাতে তাদের রক্ত ঝরছে। তাদের ঘরবাড়ি ও ভূখণ্ড শত্রুদের ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় ওষুধপথ্য, খাবার পানি ও বস্ত্র থেকে তাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে।
“আমাদের দোয়া পাওয়ার ব্যাপারে তারা বেশি হকদার। হে আল্লাহ, মুসলিমদের ভূখণ্ডকে নিরাপদে রাখুন। অভাব থেকে তাদের মুক্ত করুন। তাদের সব বিষয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করুন। মুমিনদের তাদের দেশে নিরাপদ রাখুন। তাদের রিজিক ও সব বিষয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করুন।”
প্রতি বছর আরাফাতের ময়দানে হাজিদের কান্নাভেজা হৃদয় বিগলিত দোয়ার বিভিন্ন দৃশ্য প্রকাশ পায়। যা পুরো বিশ্বের মুসলমানদের হৃদয়কে আন্দোলিত করে।
হাজিরাও এবার আরাফাতের ময়দানে দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে পাপমোচন, জীবন আর ভবিষ্যতের শান্তি কামনার পাশাপাশি ফিলিস্তিনিদের মুক্তির জন্য দুহাত তুলে কেঁদে কেঁদে দোয়া করেন।
ফিলিস্তিনের গাজায় টানা ৮ মাসেরও বেশি সময় ধরে আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরায়েল। মাটি ও আকাশ থেকে তাদের অব্যাহত বোমা হামলায় ধ্বংসস্তূপ ও মৃত্যু উপত্যাকায় পরিণত হয়েছে প্রায় পুরো গাজা।
গাজার প্রায় ২৪ লাখ বাসিন্দার বেশিরভাগই (প্রায় ৮০ শতাংশ) বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ইতিমধ্যে নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩৭ হাজার। আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৮৫ হাজার।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের এক ভয়াবহ হামলার পর থেকে গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। হামাসের ওই হামলায় প্রায় ১২০০ ইসারয়েলি নিহত হয়।
খুতবায় যুদ্ধ ও রক্তপাতের বিষয়ে বলা হয়, আল্লাহতায়ালা মানুষের প্রাণরক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেছেন এবং রক্তপাতের বিষয়ে সীমালঙ্ঘন নিষিদ্ধ করে বলেছেন, তোমরা অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করো না। আল্লাহ আরও বলেছেন, তোমরা নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু। আল্লাহ মানুষের জীবনকে রক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন।
শনিবার আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের পর রবিবার (১০ জিলহজ) মিনায় গিয়ে শয়তানকে পাথর মারার পর পশু কোরবানি দিয়ে হাজিরা ঈদুল আযহা উদযাপন করেন। এরপর হজের সর্বশেষ আনুষ্ঠানিকতা কাবাঘর তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করবেন তারা। ১১ থেকে ১২ জিলহজ (সোমবার থেকে মঙ্গলবার) সূর্য ডোবার আগেই কাবাঘর তাওয়াফ করতে হবে।
তথ্যসূত্র: সৌদি গেজেট, আরব নিউজ, সিয়াসাত ডেইলি