ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত থাকার কথা জানিয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস।
শুক্রবার এক ভিডিও বার্তায় গাজার শাসকদল হামাসের সশস্ত্র শাখার মুখপাত্র আবু ওবেইদা এ কথা জানান বলে আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
আবু ওবেইদা বলেন, ‘আগ্রাসন যত দীর্ঘই হোক বা আগ্রাসনের ধরন যেমনই হোক’ গাজার রাফা ও অন্যান্য স্থানে ইসরায়েলি স্থল অভিযানের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিরা লড়াই অব্যাহত রাখবে।
তিনি বলেন, “আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে এই আগ্রাসন বন্ধ করার পূর্ণ ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আমরা শত্রুর বিরুদ্ধে দীর্ঘ শক্তিক্ষয়ী যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত রয়েছি।”
গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজার দক্ষিণাঞ্চল থেকে ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় হামাস। ওই হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়। এছাড়া হামাসের যোদ্ধারা ২৫৩ জন ইসরায়েলিকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায়।
ওই ঘটনার পর থেকেই গাজায় পাল্টা হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। শুরুতে গাজার উত্তরাঞ্চলে হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। পরে তাদের আগ্রাসন ছড়ায় গাজার দক্ষিণাঞ্চলেও।
ইসরায়েলি এই আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ৩৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, যাদের বেশিরভাই নারী ও শিশু।
ব্যাপক ইসরায়েলি আগ্রাসনে বাস্তুচ্যুত লাখ লাখ ফিলিস্তিনি গাজার দক্ষিণাঞ্চলে রাফায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। সর্বশেষ সেখানেও অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের আগ্রাসনের মুখে এ পর্যন্ত ছয় লাখের বেশি ফিলিস্তিনি রাফা ছেড়ে পালিয়েছে।
রাফায় ইসরায়েলি হামলা শুরুর বিরোধিতা করছে তাদের ঘনিষ্ট মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেন, রাফায় ব্যাপক অভিযান চালিয়েও ইসরায়েল হামাসকে পুরোপুরি নির্মূল করতে পারবে না।
রাফায় সর্বাত্মক ইসরায়েলি হামলা অরাজকতা উস্কে দিতে পারে– এমন আশঙ্কা জানিয়ে ব্লিনকেন উল্লেখ করেন, হামাসের যোদ্ধারা ইতোমধ্যে গাজার উত্তরাঞ্চলে নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় ফিরে এসেছে, যেগুলো এর আগে ‘মুক্ত’ করার দাবি করেছিল ইসরায়েল।
এমন পরিস্থিতিতে ভিডিও বার্তায় ইসরায়েলের প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়ে হামাসের মুখপাত্র আবু ওবেইয়দা বলেন, “তাদের (ইসরায়েলি সেনাদের) এমন স্থানে তাড়িয়ে নিয়ে যাব, যেখানে সৈন্যদের মৃত্যু ও কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার হওয়া ব্যাতীত কিছুই তারা অর্জন করতে পারবে না।”
তিনি বলেন, “এটি এই কারণে নয় যে আমরা অনেক বড় কোনও শক্তি, বরং এই কারণে যে আমরা এই ভূমির বাসিন্দা ও বৈধ মালিক।”
হামাসের সশস্ত্র শাখার এই মুখপাত্র জানান, হামাসের যোদ্ধারা ট্যাঙ্ক, সৈন্যদের বহনকারী গাড়ি ও বুলডোজারসহ শতাধিক ইসরায়েলি সামরিক যান ধ্বংস করেছে।
এর পাশাপাশি সুরঙ্গ উড়িয়ে দিয়ে, রকেট ও মর্টার সেল ছুড়ে এবং স্নাইপার ও মুখোমুখি লড়াইয়ের মাধ্যমে ইসরায়েলি সেনাদের হতাহত করেছে বলেও দাবি করেন তিনি।