ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস বলেছে, কোনও পক্ষ থেকে নতুন করে কোনও শর্ত আরোপ না করে যুক্তরাষ্ট্রের আগের প্রস্তাবের ভিত্তিতে গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে তারা রাজি।
এ লক্ষ্যে তারা প্রস্তুত রয়েছে বলে বুধবার এক বিবৃতিতে জানায় হামাস।
সংগঠনটি বলেছে, তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা খলিল আল-হাইয়ার নেতৃত্বে তাদের প্রতিনিধি দল বুধবার কাতারের দোহায় মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেছে।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল থানি এবং মিশরের গোয়েন্দা প্রধান আব্বাস কামেলসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের শীর্ষ কর্মকর্তারাও বৈঠকে ছিলেন।
গাজায় ১১ মাসের বেশি সময় ধরে চলমান যুদ্ধের অবসান ঘটাতে কোনও আলোচনাই এ পর্যন্ত সফল হয়নি। মিশর সীমান্তের ফিলাডেলফি করিডোরের নিয়ন্ত্রণসহ কয়েকটি বিষয়ে বিরোধের জেরে ইসরায়েল-হামাস সমঝোতা আটকে রয়েছে।
গাজা বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান আলোচক সিআইএ পরিচালক উইলিয়াম বার্নস শনিবার বলেন, গাজা যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবটি আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আরও বিশদ আকারে উপস্থাপন করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যে প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছিলেন তাতে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে তিন-ধাপে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ছিল।
গত মে মাসে প্রথম যুক্তরাষ্ট্র গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবটি দেয়। প্রস্তাবটি হামাস মেনে নিলেও ইসরায়েল মেনে নেয়নি। ফলে যুদ্ধবিরতি আলোচনা আর এগোয়নি।
গত ১৫ আগস্ট কাতারের রাজধানী দোহায় নতুন করে আলোচনা শুরু হলে ‘ব্রিজিং প্রপোজাল’ বা ‘সেতুবন্ধনের প্রস্তাব’ নামে নতুন একটি প্রস্তাব দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
এবার ইসরায়েল প্রস্তাবটি মেনে নিলেও হামাস মেনে নেয়নি। কারণ প্রস্তাবে ইসরায়েল নতুন কিছু শর্ত যোগ করে।
হামাসের যুক্তি ছিল, নতুন কোনও প্রস্তাব নিয়ে এখন আলোচনা করতে গেলে শুধু সময় নষ্ট হবে। এতে গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যাও চলতে থাকবে। এর চেয়ে বরং ইসরায়েলকে আগের প্রস্তাব অনুযায়ীই আলোচনায় বাধ্য করা উচিৎ।
হামাস নতুন প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করে এটিকে ইসরায়েলকে গণহত্যা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রচেষ্টা বলে অভিহিত করে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের আগের প্রস্তাবে ফিরে যাওয়ার আহ্বানও জানায়।
এরপর গত বুধবার ফের আলোচনা হয়। আর এখন যুক্তরাষ্ট্র বলছে, আবারও নতুন করে যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার একটি বিশদ প্রস্তাব হাজির করবে তারা।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে এক নজিরবিহীন হামলা চালায় হামাস। ওই হামলায় প্রায় ১২০০ ইসরায়েলি নিহত হয়। এ ছাড়া হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েল থেকে ২৫০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায়।
হামাসের ওই হামলার পরপরই গাজায় প্রথমে আকাশ পথে এবং পরে স্থলপথেও আগ্রাসন শুরু করে ইসরায়েল।
ইসরায়েলের বিমান ও স্থল হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৪২ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও অন্তত ১ লাখ মানুষ আহত হয়েছে। এছাড়া ইসরায়েলের হামলায় গাজার প্রায় ৮০ শতাংশ বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। উদ্বাস্তু হয়েছে ২০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি।