Beta
মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর, ২০২৫

প্রেম ও দাম্পত্য সুখের হলে নারীর ওজন বাড়ে

women gains weigh in relationship
[publishpress_authors_box]

যখন একজন নারী তার সঙ্গীর সাথে নিরাপদ বোধ করেন, তখন স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের মাত্রা কমে যায়। এর বিপরীতে অক্সিটোসিন এবং সেরোটোনিনের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এই সময়ে শরীর শিথিল হয়, শক্তি সঞ্চয় করে এবং সম্ভাব্য গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুত হয়। এই প্রক্রিয়ার সময়, বিপাক ক্রিয়া ধীর হয়ে যায় এবং ক্ষুধা বেড়ে যায়। এই সমস্ত পরিবর্তন প্রাকৃতিকভাবে ঘটে।

উপরের এই অভিমত দিয়েছেন ইনস্টাগ্রামে ‘ডাক্তার ডট নভিক’ নামে পরিচিত কেট নোভায়া। চিকিৎসা বিষয়ক পরামর্শদাতা এই পরামর্শদাতা নিজে একজন ইন্টিগ্রেটিভ ডাক্তার এবং ‘বায়োহ্যাকার’।

এ সংক্রান্ত কেট-এর একটি ইনস্টাগ্রাম পোস্ট ভাইরাল হওয়ার পরপরই অনলাইনে একটি সরব বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

পোস্টে কেট দাাবি করেছেন, নারীরা স্বাস্থ্যকর ও সুখী সম্পর্কে থাকলে তাদের ওজন বাড়ে। তার আরেকটি দাবি হলো, কোনও নারী যদি দাম্পত্য বা প্রেমের সম্পর্কের সময় উল্লেখযোগ্যভাবে ওজন হারান, তবে ৯৯ শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে যে তিনি স্বাস্থ্যকর সম্পর্কে নেই।

কেউ কেউ তার পোস্টের সঙ্গে একমত হলেও, অন্যরা সম্পূর্ণরূপে দ্বিমত পোষণ করে বলেছেন যে আসলে এটি সম্পূর্ণ বিপরীত।

তবে এটি কেট- এর একার পর্যবেক্ষণ নয়। বহু দম্পতির ক্ষেত্রেই এটি দেখা গিয়েছে, সম্পর্কের গভীরতা বৃদ্ধির সাথে সাথে তাদের খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন আসে। যার ফলে ওজন বাড়তে পারে। আমরা অনেকেই সামাজিকমাধ্যমে এমন ভিডিও দেখেছি, যেখানে নারীরা প্রথম ডেট এবং সম্পর্কের এক বছর পরের খাদ্যাভ্যাসের তুলনা করেন।

এটা অনস্বীকার্য যে, সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একে অপরের খাদ্যাভ্যাস প্রভাবিত হয়। অনেকের কাছে, একসঙ্গে খাবার ভাগ করে নেওয়া ভালোবাসার একটি প্রকাশ। মাঝে মাঝে অতিরিক্ত খাবার খাওয়া সম্পর্কে মধুর স্মৃতি যোগ করে। সত্যি বলতে, সঙ্গীর পছন্দের কারণে বা তার সঙ্গে একটু বেশি সময় কাটানোর অজুহাতেও অতিরিক্ত ‘ফাস্ট ফুড’ অর্ডার করার অভিজ্ঞতা আমাদের অনেকেরই আছে।

কিন্তু তারপরও বড় প্রশ্নটি রয়েই যায়- আপনার ওজন কি সত্যিই আপনার সম্পর্কের স্বাস্থ্য নির্দেশ করতে পারে? আপনার ওজন বাড়া বা কমার পরিমাণ কি প্রকাশ করতে পারে যে আপনার সঙ্গী সঠিক বা বেঠিক?

বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, সম্পর্কের কারণে ওজন বৃদ্ধি বাস্তব।

‘এনিটাইম ফিটনেস’- এর ফিটনেস এবং পারফরম্যান্স বিশেষজ্ঞ কুশল পাল সিং এ প্রসঙ্গে বলেন, একটি স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক থাকা কখনও কখনও একজনের ওজন বৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করে, তবে এটি প্রত্যেকের ক্ষেত্রে ভিন্ন হয়।

বিভিন্ন গবেষণার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসবের ফলাফলে দেখা গিয়েছে যে সুখি, সুরক্ষিত দম্পতিদের সম্ভবত বেশি টেকআউট, আরামদায়ক খাবার বা এমনকি কম ব্যায়ামের মতো অভ্যাস থাকতে পারে।

সিংয়ের মতে, এই ঘটনার পেছনে বৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, স্থিতিশীল সম্পর্কে আবদ্ধ ব্যক্তিরা মানসিক ও আচরণগত পরিবর্তনের কারণে ওজন বৃদ্ধি অনুভব করেন।

তিনি আরও বলেন, ‘সম্পর্কের কারণে ওজন বৃদ্ধি’ তত্ত্বটি অনুযায়ী, যখন কেউ একটি সম্পর্কে নিরাপদ বোধ করেন, তখন অবিবাহিত অবস্থার তুলনায় নিজের শরীরের ওজন নিয়ে তার উদ্বেগ কমে যায়। এছাড়াও, একসাথে খাবার খাওয়া এবং খাদ্য ও ব্যায়াম নিয়ে কম চিন্তিত থাকার ফলে ওজন বাড়তে পারে।

এখানে কয়েকটি কারণ রয়েছে-

রূপের দিকে কম মনোযোগ: সম্পর্কের প্রাথমিক পর্যায়ে, আকর্ষণীয় দেখানোর জন্য প্রায়ই বেশি চেষ্টা থাকে। স্থিতিশীল সম্পর্কে জড়ানোর পর আরাম এবং নিরাপত্তা বৃদ্ধির পাশাপাশি সঠিক খাওয়া এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখা কম অগ্রাধিকার পেতে পারে।

বেশি বাইরে খাওয়া: সুখী প্রেমিক যুগল ও দম্পতিরা প্রায়ই ডেটের সময় বাইরে খেতে পছন্দ করেন। বিভিন্ন রন্ধনপ্রণালী এবং রেস্তোরাঁর স্বাদ চেখে দেখাটাও অনেকের অভ্যাস।  

রেস্তোরাঁগুলোতে সাধারণত প্রচুর পরিমাণে খাবার পরিবেশন করা হয়, এবং এই খাবারগুলোতে ক্যালোরির পরিমাণও বেশি থাকে। এই ধরনের খাবার অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে ওজন বাড়তে পারে।

অ্যালকোহল গ্রহণ বৃদ্ধি: ক্যালোরি বেশি আছে এমন কোমল পানীয় সুখী সম্পর্কে বেশি পান করা হয়, যা অতিরিক্ত ক্যালোরি যোগ করে।

শারীরিক কার্যকলাপ হ্রাস: সঙ্গীর সাথে সময় কাটানো কখনও কখনও ব্যায়ামের চেয়ে অগ্রাধিকার পেতে পারে। উচ্চ ক্যালোরি গ্রহণের সঙ্গে শারীরিক কার্যকলাপ হ্রাস ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।

খাদ্যাভ্যাস অভিযোজন: অনেক ব্যক্তি তাদের সঙ্গীর পছন্দের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তাদের খাদ্যাভ্যাস সামঞ্জস্য করে। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার সঙ্গী সকালের নাস্তা বাদ দেন, তবে আপনি আপনার প্রথম খাবারটি নিজেও দেরিতে  খেতে শুরু করতে পারেন। যার ফলে পরে অতিরিক্ত খাওয়া হতে পারে। আবার যদি আপনার সঙ্গী কম পুষ্টিকর খাবার খেতে অভ্যস্ত হন, সেদিকে আপনিও ঝুঁকতে পারেন, যা আপনার সামগ্রিক খাদ্যের গুণমানকে প্রভাবিত করে।

জান্ড্রা হেলথকেয়ারের ওজন হ্রাস বিশেষজ্ঞ এবং ডায়াবেটোলজি প্রধান ডঃ রাজীব কোভিলও এই বিষয়ে একমত যে, একটি নতুন সম্পর্কের কারণে প্রাথমিক ওজন বৃদ্ধি হতে পারে, তবে দম্পতিদের নিশ্চিত করতে হবে যে তারা একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখছেন।

তবে কেট নোভায়ার ভাইরাল ভিডিওতে উল্লিখিত হরমোন সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুখি এবং সুরক্ষিত সম্পর্কে থাকলে শরীর অক্সিটোসিন, ডোপামিন এবং সেরোটোনিনের মতো ভালো লাগার হরমোন নিঃসরণ হয়। এই হরমোনগুলো স্ট্রেস এবং আবেগপ্রবণ খাদ্যাভ্যাস কমাতে সাহায্য করে। স্ট্রেস হরমোনে কর্টিসলের মাত্রা কম থাকলে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। অন্যদিকে, অস্বাস্থ্যকর সম্পর্কে দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেস অতিরিক্ত ক্ষুধা এবং চর্বি জমার কারণে ওজন বাড়াতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সম্পর্কের কারণে ওজন বাড়া অস্থায়ী, স্থায়ী নয়। কারণ স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল নির্ধারণ করে যে সম্পর্কটি স্বাস্থ্যকর কিনা। বৈজ্ঞানিকভাবে, কর্টিসলের মাত্রা বাড়লে ওজনও বাড়ে, যা স্ট্রেস কমের লক্ষণ। কাজেই কেটের পোস্টটি মোটেও ভুল নয়।

দ্য আমেরিকান জার্নাল অব লাইফস্টাইল মেডিসিন (২০১৮)-এর একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব দম্পতি একসঙ্গে ব্যায়াম করেন, তাদের শারীরিক স্বাস্থ্য এবং মানসিক বন্ধন উন্নত হয়। ডঃ কোভিলের মতে, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেজাজ এবং শক্তির মাত্রা উন্নত করে, যা বিরক্তি কমিয়ে ইতিবাচক সম্পর্ক বজায় রাখতে সাহায্য করে।

এছাড়া, গবেষণায় দেখা গেছে নববিবাহিতদেরও ওজন বাড়ে। ৮ হাজার জনেরও বেশি মানুষের ওপর করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বিবাহিত নারীদের বিয়ের প্রথম পাঁচ বছরে গড়ে ২৪ পাউন্ড ওজন বাড়ে। যারা বিয়ে না করে একসঙ্গে থাকেন, তাদের ওজন বাড়ে প্রায় ৮ কেজি। আর যারা সম্পর্কে থেকেও আলাদা থাকেন, তাদের ওজন বাড়ে প্রায় ৬.৮ কেজি। পুরুষদেরও ওজন বাড়ে, তবে বিবাহিত এবং একসঙ্গে বসবাসকারী পুরুষদের মধ্যে তেমন পার্থক্য দেখা যায় না।

গবেষকদের মতে, সুখি দম্পতিদের ওজন বাড়ার কারণ হলো, সঙ্গী আকর্ষণ করার প্রয়োজন না থাকায় তাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রেরণা কমে যায়।

মূল কথা হলো, নববিবাহিত এবং নতুন সম্পর্কে আবদ্ধ দম্পতিদের হরমোনের পরিবর্তন এবং সামাজিক পরিবেশের কারণে ওজন বাড়তে পারে। তবে, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়ামের পরেও যদি ওজন বাড়তে থাকে, তবে এটি সম্পর্কের স্ট্রেস হরমোনের কারণে হতে পারে। সেক্ষেত্রে, সম্পর্কটি পুনর্বিবেচনা করা উচিত।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত