টানা দাবদাহে রংপুর জেলার বেশিরভাগ বাগানেই ঝরেছে আম; সময়মতো সেচ, কীটনাশক স্প্রে করেও কোনও লাভ হয়নি।
এ পরিস্থিতিতে আমচাষিদের আশঙ্কা, রংপুরে এবার হাঁড়িভাঙ্গা আমের ফলন অর্ধেকে নেমে আসতে পারে।
তারা বলছে, বাগানের গাছগুলোতে ছোট ছোট যে আম এসেছে রোদের তীব্রতায় সেগুলোও ঝরে পড়ছে। এমন পরিস্থিতি রংপুর জেলার বেশিরভাগ বাগানেই। সুস্বাদু এ ফল বাজারে আসবে জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে। ফলন কম হওয়ার অজুহাতে অসাধু ব্যবসায়ীরা যেন এই আমের দাম বাড়িয়ে না দেয়—সেজন্য বাজার তদারকির দাবিও জানিয়েছে বাগান মালিকরা।
ফলন ধরে রাখতে প্রতিদিন সেচ দেওয়ার পাশাপাশি বাগান পরিচর্যার পরামর্শ দিয়েছে কৃষি কর্মকর্তারা।
হাড়িভাঙ্গা আমকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পদাগঞ্জ ইউনিয়নে জমে ওঠে বিশাল হাট। আর রংপুর নগরীর আমের পাইকারি বাজার বসে টার্মিনাল আম আড়তে।
টার্মিনাল আম আড়তের ব্যবসায়ীরা বলছে, বাগানে বেশি আম না থাকায় এবার ব্যবসা বেশিদিন করা যাবে না। কিন্তু ইজারাদাররা দোকান ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই ‘একূল অকূল দুই কূলই’ যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে এই পাইকারি ব্যবসায়ীরা। একই কারণে দুশ্চিন্তায় আছে অনলাইন ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরাও।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২১ সলে রংপুর জেলায় ১ হাজার ৮৭৫ হেক্টর জমিতে হাঁড়িভাঙ্গা আমের আবাদ হয়; ফলন হয় প্রায় ২৭ হাজার ৯২৫ টন। ২০২২ সালে ১ হাজার ৮৬৫ হেক্টর জমিতে হয় ৩০ হাজার মেট্রিক টন আম। গত বছর ১ হাজার ৯০৫ হেক্টর জমিতে হয় প্রায় ৩৫ হাজার মেট্রিক টন হাড়িভাঙ্গা আম। এবারও গতবারের মতো ১ হাজার ৯০৫ হেক্টর জমিতে হাড়িভাঙ্গা আমের আবাদ হয়েছে।
সম্প্রতি জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার হাড়িভাঙ্গা আমের বিভিন্ন বাগান ঘুরে দেখেছে সকাল সন্ধ্যার এই প্রতিবেদক। কোনও বাগানেই গতবারের মতো ফলন চোখে পড়েনি । অনেক বাগানে হাতেগোনা কিছু আম দেখা যায়। আমচাষীদের কপালে দেখা গেছে দুশ্চিন্তার ভাঁজ।
তাদের একজন মিঠাপুকুর উপজেলার রানীপুকুরের আমচাষী আলতাফ হোসেন। তিনি বলছেন, এবারের মতো অবস্থা হয়নি অনেক বছর। এবার লোকসান হবেই।
সকাল সন্ধ্যাকে আলতাফ হোসেন বলেন, “টানা খরা ও দাবদাহে এবার লোকসানের মুখে পড়ব। অনেক বছর এরকম অবস্থা হয়নি। এবার বৈশাখ মাসে কোনও বৃষ্টি হয়নি। তাই গাছে আম বেশি আটকায়নি।”
গুটি রক্ষায় বাগানে সময়মতো সেচ, কীটনাশক স্প্রে করেও কোনও লাভ হয়নি বলে বলছে অনেক আমচাষী। তাদের একজন মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়গাছ ইউনিয়নের জারুল্লাপুর গ্রামের লিটন মিয়া।
সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “আমার বাগানগুলোতে মুকুল ভালোই এসেছিল। বাগান পরিচর্যাও সঠিক সময়ে সঠিকভাবেই করেছি। কিন্তু রোদের তীব্রতা বেশি হওয়ায় আমের গুটি ধরে রাখতে পারি নাই।”
ফলন কম হওয়ার অজুহাতে এবার যেন অসাধু ব্যবসায়ীরা আমের দাম বাড়িয়ে না দেয়—সেজন্য বাজার তদারকির দাবি জানান এই বাগান মালিক।
‘দুই কূল যাওয়ার’ শঙ্কায় আড়তের ব্যবসায়ীরা
রংপুর নগরীর টার্মিনাল আমের আড়ৎ ঘুড়ে লোকজনের আনাগোনা দেখা গেছে। জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে এই আম বাজারে আসবে বলে জানান আমজাদ নামের এক ব্যবসায়ী।
তিনি বলেন, “প্রতি বছর এখানে দোকান দেই। এবারও দোকানঘর নেওয়ার জন্য ঘুরছি। বাগানে বেশি আম নেই। এবার ব্যবসা বেশিদিন করা সম্ভব না। কিন্তু ইজারাদাররাও এখানে ভাড়া বাড়িয়েছে। এবার একূল অকূল দুই কূল যাবে মনে হচ্ছে।”
অনলাইন ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা দুশ্চিন্তায়
রংপুরের বিখ্যাত এই আমকে কেন্দ্র করে জেলার বাইরের ব্যবসায়ীও আসে। অনলাইন ও মৌসুমি ব্যবসায়ী আছে দুইশ থেকে আড়াইশ। এবার তাদের ব্যবসায়ও ভাটা পড়তে পারে বলে মনে করছে অনেকে।
তাদের একজন মঞ্জুরুল, যিনি গত বছর অনলাইনে ১২ লাখ টাকার আম বিক্রি করেন।
সকাল সন্ধ্যাকে মঞ্জুরুল বলেন, “এবার আমের ফলন কম। তাই আমের দাম বেশি হতে পারে। দাম বেশি হলে ব্যবসায় ভাটা পড়বে। আর খুব বেশিদিন মার্কেটে আমও পাওয়া যাবে না।”
হাঁড়িভাঙ্গা আমের এমন অবস্থার কারণ জানতে চাইলে রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, এবার মৌসুমের শুরুতেই ঝড়-বৃষ্টি। পরে টানা তাপপ্রবাহে আমের গুটি কিছুটা কম হয়েছে।
ফলন ধরে রাখতে প্রতিদিন সেচ দেওয়ার পাশাপাশি বাগান পরিচর্যার পরামর্শ দিয়েছেন রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন।