ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
রবিবার বিএফআইইউ থেকে ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়ে হারুন ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা তোলার ওপর এক মাসের স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়।
চিঠিতে বলা হয়, অর্থপাচার প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর নির্দেশনা অনুযায়ী হারুন অর রশীদ ও শিরিন আক্তারের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন এক মাসের জন্য স্থগিত করা হলো। এই ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাব থেকে যেকোনো ধরনের লেনদেন সংঘটিত হয়ে থাকলে সেই তথ্যও বিএফআইইতে পাঠাতে হবে।
ডিএমপির ডিবির দায়িত্বে থাকা হরুন অর রশীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অত্যাচারসহ নানা ধরনের অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
সবশেষ সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে গোয়েন্দা কার্যালয়ে হেফাজতে রাখায় বড় সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।
হেফাজতে থাকা শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের খাবার টেবিলে বসিয়ে খাওয়ানো নিয়ে উষ্মাও প্রকাশ করেছিল উচ্চ আদালত। এর পরপরই গত ৩১ জুলাই ডিবির দায়িত্ব থেকে সরিয়ে তাকে ডিএমপি’র অপরাধ ও পরিচালন বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনারের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
তীব্র ছাত্র-গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এরপর দেশ ছাড়েন আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী ও সরকার ঘনিষ্ট কর্মকর্তারা। কেউ কেউ গা ঢাকা দেন।
তবে এরপর থেকে হারুন অর রশীদকে আর দেখা যায়নি। কেউ কেউ বলছেন, তিনি দেশেই আত্মগোপনে রয়েছেন। আবার এমন গুঞ্জনও রয়েছে যে, তিনি অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
তবে এর কোনেটিরই সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি।
পুলিশের এই কর্মকর্তা প্রথম আলোচনায় উঠে আসেন ২০১১ সালে বিএনপির হরতালের সময় সংসদ ভবনের সামনে তৎকালীন বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের সঙ্গে তর্কাতর্কি এবং তাকে টেনে হিঁচড়ে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে। তখন হারুন ছিলেন ডিএমপির লালবাগ জোনের উপকমিশনার।
এরপর গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালনকালেও হারুনকে নিয়ে নানা সমালোচনা ওঠে। ডিএমপিতে আবার ফেরার পরও সমালোচনা তার পিছু ছাড়েনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের সাবেক ছাত্র হারুনের বাড়ি কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে। ২০তম বিএসএস ব্যাচের কর্মকর্তা হিসাবে পুলিশে যোগ দেন তিনি।
২০১৬ সালে গাজীপুরে পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালনের সময় নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতার পর ইসির নির্দেশে তাকে ওই জেলা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। পরে অবশ্য আবার তাকে সেখানে ফেরায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এরপর নারায়ণগঞ্জে এসপির দায়িত্ব পালনের সময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব ছিল আলোচনায়। ওই সময় পারটেক্স গ্রুপের মালিক আবুল হাসেমের পুত্রবধূ ও নাতিকে ঢাকার বাড়ি থেকে রাতে তুলে নিয়ে বিপাকে পড়েছিলেন হারুন। তখন তাকে নারায়ণগঞ্জ থেকে সরিয়ে আনা হয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তরে।
পরে ঢাকা মহানগর পুলিশে অতিরিক্ত কমিশনারের দায়িত্ব পালনের সময় ডিবি কার্যালয়ে বিভিন্নজনকে তার আপ্যায়নের বিষয়টি নিয়ে শুরু হয় আলোচনা।
২০২৩ সালের ২৯ জুলাই বিএনপির কর্মসূচিতে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে পেটানোর পর তুলে ডিবি অফিসে নিয়ে খাওয়ানোর ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল।
রাজনীতিক থেকে অভিনয়শিল্পী, এমনকি নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসা বিদেশি অতিথি কিংবা আন্দোলনকারী, নানাজনকে ডিবি কার্যালয়ে আপ্যায়ন করতে দেখা গেছে হারুনকে। নেটিজেনরা তা নিয়ে ‘হারুনের ভাতের হোটেল’ বলে ট্রলও করে আসছিলেন।