রাজনীতিক, অভিনয় শিল্পী, নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসা বিদেশি অতিথি কিংবা আন্দোলনকারী; কেউই যেন বাদ পড়েন না অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশীদের আপ্যায়ন থেকে। তবে নিজের বাসায় নয় বরং ডিএমপির গোয়েন্দা শাখায় নিজের কার্যালয়ে এই আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেন তিনি।
সম্প্রতি সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের সমন্বয়কদের ‘তুলে নেওয়ার’ অভিযোগ ওঠে ডিবির বিরুদ্ধে। তা নিয়ে আলোচনা আর স্বজন-সহআন্দোলনকারীদের উৎকণ্ঠার মধ্যেই সমন্বয়কদের নিয়ে এক টেবিলে বসে ডিএমপির ডিবি প্রধান হারুনের খাওয়া-দাওয়ার ছবি প্রকাশ পায়।
আর এই ঘটনাকে ‘জাতির সঙ্গে মশকরা’ বলে অভিমত দেয় হাইকোর্ট। সোমবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের বেঞ্চে এক রিট আবেদনের ওপর চলা শুনানিতে এ প্রসঙ্গ ওঠে।
তখন একজন বিচারক বলেন, “জাতিকে নিয়ে মশকরা করবেন না। যাকে খুশি তাকে ধরে নিয়ে খাবার টেবিলে বসিয়ে দেন। ছবি তুলে আবার সেটি প্রচার করেন।”
হাইকোর্টের এই উষ্মা প্রকাশ সম্পর্কে অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বক্তব্য জানতে চেয়েছিলেন সাংবাদিকরা। তবে এ বিষয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য করেননি তিনি।
মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে তিনি বলেন, “হাইকোর্টের বক্তব্য জেনে এ বিষয়ে পরে বলতে পারব।”
এর আগেও হারুন অর রশীদ ডিবি কার্যালয়ে অনেকের খাওয়া-দাওয়ার ছবি ভাইরাল হয়। যার মধ্যে অন্যতম বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
গত বছরের ২৯ জুলাই ঢাকার ধোলাইখাল মোড়ে পুলিশের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষে জড়ান বিএনপির নেতাকর্মীরা। এসময় গুরুতর আহত হন গয়েশ্বর। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। সেখান থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে নেওয়া হয় ডিবি কার্যালয়ে। ওই কার্যালয়েই তার সঙ্গে দুপুরের খাবার খান হারুন। যার ছবি কিছুক্ষণের মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এই ঘটনাকে সেই সময় গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ‘খাইয়ে খোটা দেওয়ার’ সঙ্গে তুলনা করেছিলেন।
এছাড়া আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিরো আলম, চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস, গানবাংলা টিভির সিইও কৌশিক হোসেন তাপস, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি এ কে এম শামীম ওসমানসহ নির্দিষ্ট সময়ের আলোচিত অনেকের সঙ্গেই হারুনকে খাওয়া-দাওয়া করতে দেখা গেছে।
এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেটিজেনরা ‘হারুনের ভাতের হোটেল’ নামে আখ্যা দিয়ে তা নিয়ে ‘ট্রল’ও করে থাকেন।
সোমবারের ব্রিফিংয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কের হেফাজত ও মুক্তির বিষয়ে কথা বলেন। দাবি করেন, সমন্বয়কদের কাছে থেকে জোর করে বিবৃতি নেওয়া হয়নি।
ডিবি হেফাজত থেকে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ভিডিও বার্তা ৬ সমন্বয়কের
হারুন অর রশীদ বলেন, “যারা জোর করে বিবৃতি নেওয়ার গুজবটি ছড়িয়েছেন, তাদের উদ্দেশ্যে আমি বিনীত অনুরোধ করব- গুজব ছড়াবেন না। ডিবি একটি আস্থার জায়গা। এখানে কাউকে জোর করে রাখা হয় না। কারও প্রতি অন্যায়-অত্যাচার করা হয় না। জোর করে কোনও বিবৃতি নেওয়া হয়নি।
“আমি মনে করি তারা রিয়েলাইজ (অনুধাবন) করেছে। তারা আমাদের কাছে লিখিতভাবে বলেছে যে, তাদের দাবি পুরোটাই সরকার মেনে নিয়েছে। সে কারণে তারা তাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিয়েছে।”
সমন্বয়কদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখছেন জানিয়ে হারুন বলেন, “আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলছি, তাদের পরিবারের সঙ্গেও কথা বলছি। আমরা মনে করি, তারা শিগগিরই তাদের পরিবারের কাছে চলে যাবেন।”
পরিবারের সদস্যরা সোমবারও সমন্বয়কদের সঙ্গে দেখা করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, তারা ভালো আছেন দেখে পরিবারের সদস্যরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তারা আমাদের ধন্যবাদও দিয়েছেন।
ডিবি কার্যালয় একটি আস্থার জায়গা উল্লেখ করে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, “এখানে কারও প্রতি অন্যায় আচরণ বা হেনস্তা করা হয় না। ভবিষ্যতেও করা হবে না। মানুষ যখন কোনও বিপদে পড়ে আমাদের কাছে আসে বা আমরা নিয়ে আসি। মূলত তাদের সিকিউরিটির জন্যই আমরা কাজটা করে থাকি।”
সমন্বয়কদের নিরাপত্তার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আপনারা জানেন কোমলমতি সাধারণ ছাত্ররা কোটা সংস্কারের আন্দোলন করেছিল। তাদের ভেতরে জামায়াত-বিএনপি গোষ্ঠী ঢুকে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ধ্বংসাত্মক কাজ করেছে।
“তারা আমাদের পুলিশ সদস্যকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, তারা সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। তারা বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় আগুন লাগিয়েছে। আমরা মনে করি, এই সমন্বয়কদেরও নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদের একটু দেখা দরকার।”