Beta
বুধবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
বুধবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৪

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কী চলছে

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হলে পারমাণবিক বোমায় ধ্বংস হয়ে যাবে পৃথিবী।
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হলে পারমাণবিক বোমায় ধ্বংস হয়ে যাবে পৃথিবী।
[publishpress_authors_box]

ইউক্রেন-রাশিয়ার চলমান যুদ্ধকে ঘিরে বিশ্বে পড়েছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ছায়া। সুইডেন, ডেনমার্ক ও নরওয়ের মতো দেশগুলোকে তাদের নাগরিকদের যুদ্ধ থেকে সুরক্ষার নির্দেশিকা দিতে দেখা গেছে।

সম্ভাব্য বোমা হামলা থেকে বাঁচতে পশ্চিমা দেশগুলোর অনেকেই বাংকার তৈরি করছে। অনেক প্রতিষ্ঠান আবার বাণিজ্যিকভাবে বাংকার বিক্রিও করছে।

উত্তেজনা শুধু ইউক্রেন-রাশিয়া নিয়ে নয়। গাজা, ইসরায়েল, লেবানন, ইরান ও ইরাকেও যুদ্ধ পরিস্থিতি চলছে। পর্যবেক্ষকদের কেউ কেউ মধ্যপ্রাচ্যকে ঘিরে বিস্তৃত যুদ্ধের শঙ্কা করছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সমস্যা দেখা গিয়েছিল। বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমানেও সেসব লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।

প্রেক্ষাপট ইউক্রেন-রাশিয়া

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া দূরপাল্লার মিসাইল দিয়ে রাশিয়ায় হামলা চালায় ইউক্রেন। রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের এক হাজার দিন পূর্ণ হওয়ার আগের দিন (১৯ নভেম্বর, মঙ্গলবার) ইউক্রেন এই হামলা শুরু করে। পাল্টা রাশিয়াও পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম মাঝারি পাল্লার হাইপারসনিক মিসাইল হামলা চালায় কিয়েভে।

মস্কোর ওই হামলার পরেই নড়েচড়ে বসে পশ্চিমা দেশগুলো। শুরু হয় নতুন রুশ মিসাইল নিয়ে আলোচনা। তবে কি পরমাণু হামলা হতে পারে যেকোনও সময়? এমন প্রশ্ন ঘুরেফিরে আসতে থাকে মিডিয়াগুলোতে।

ওরেশনিক নামের নতুন প্রজন্মের ওই হাইপারসনিক মিসাইলটি ঘণ্টায় ৫ হাজার কিলোমিটার বেগে আঘাত হানতে সক্ষম। পশ্চিমা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ফাঁকি দিয়ে পারে লক্ষ্যবস্তুকে গুড়িয়ে দিতে।

যুদ্ধের ময়দানে নতুন এই মিসাইলের আগমনে ২০২২ সালে শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি অস্থির হয়ে ‍উঠেছে। এমন আবহে কথা উঠেছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে।

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র প্রথম বিষয়টি নিয়ে কথা তোলেন।

সোশাল মিডিয়ায় এক পোস্টে তিনি বলেন, “মনে হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শিল্প আমার বাবার শান্তি স্থাপন করার এবং মানুষের জীবন বাঁচানোর সুযোগ পাওয়ার আগেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিশ্চিত করতে চায়।”

ইউক্রেনের সাবেক সেনাপ্রধান ভেলারি জালুঝনি।

ট্রাম্পের ছেলের পর তার সমর্থকরাও অভিযোগ করেন, ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার আগেই বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বাইডেন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাধিয়ে যেতে চাচ্ছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বজুড়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে গুঞ্জন উঠেছে।

এর মধ্যেই গত শুক্রবার তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়ে গেছে বলে দাবি করেছেন ইউক্রেনের সাবেক সেনাপ্রধান ভেলারি জালুঝনি। এ প্রসঙ্গে তিনি যুদ্ধে রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি উত্তর কোরিয়া ও ইরানের যোগদান এবং সামরিক সহায়তার উল্লেখ করেন।

ইউক্রেইনসকা প্রাভদার এক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বক্তৃতার সময় জালুঝনি বলেন, “আমরা বলতে পারি এরই মধ্যে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে।”

বর্তমানে যুক্তরাজ্যে ইউক্রেনের প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত জালুঝনি রাশিয়ার মিত্রদের সরাসরি সম্পৃক্ততাকে যুদ্ধের বৈশ্বিক বিস্তারের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “উত্তর কোরিয়ার সৈন্যরা ইউক্রেনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ইতোমধ্যে ইউক্রেনে ইরানের ‘শাহেদি’ ড্রোন বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করছে, একদম প্রকাশ্যে, কোনও লজ্জা ছাড়াই।”

উত্তর কোরিয়ার সৈন্য ও চীনের অস্ত্র এখন সক্রিয়ভাবে যুদ্ধে জড়িয়েছে। রাশিয়া কুরস্ক অঞ্চলে উত্তর কোরিয়ার ১০ হাজার সেনা মোতায়েন করেছে। এমনকি ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদেরও ভাড়া করে এনেছে মস্কো, এখন খবরও পশ্চিমা মিডিয়াগুলো বলছে।

এমন পরিস্থিতিতে জালুঝনি ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্রদেরকে সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নিতে এবং সংঘাতকে দেশের সীমানার বাইরে ছড়িয়ে পড়া রোধে আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, “ইউক্রেনের ভূখণ্ডে এটি এখনও বন্ধ করা সম্ভব। কিন্তু কিছু কারণে, আমাদের অংশীদাররা এটি বুঝতে চায় না। এটা স্পষ্ট যে ইউক্রেনের অনেক শত্রু রয়েছে।”

প্রসঙ্গত, যুদ্ধে কৌশল নিয়ে মতবিরোধ এবং জালুঝনির ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার জেরে গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জেনারেল জালুঝনিকে বরখাস্ত করেন।

জালুঝনি ২০২২ সালে প্রথম দফার রুশ আক্রমণ প্রতিহত ও পিছু হটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। তবে গত বছরের পাল্টা আক্রমণের ব্যর্থতার কারণে তার সাফল্য ম্লান হয়ে যায়।

তার স্থলাভিষিক্ত হন জেনারেল ওলেক্সান্ডার সিরস্কি। তিনি প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।

মুখোমুখি রাশিয়া ও পশ্চিমা বিশ্ব

বিশ্লেষকরা বলছেন, বাস্তবে ইউক্রেনের জন্য যা জাতীয় প্রতিরক্ষার যুদ্ধ, পুতিনের জন্য তা বিজয়ের জন্য যুদ্ধ। আর ন্যাটো দেশগুলোর জন্য এটি ইউরেশীয় প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে পরোক্ষ যুদ্ধ।

পুতিন উত্তর কোরিয়ার গোলাবারুদ ও তাদের সৈন্যদের ব্যবহার করছেন। একে ইউক্রেন যুদ্ধের বৈশ্বিক রূপ নেওয়ার একটি লক্ষণ হিসেবে দেখছেন অনেকে।

এখনো হয়তো এটি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নয়, তবে একে বলা যেতে পারে ‘বিশ্বযুদ্ধ জি (Z)’, আমেরিকান উচ্চারণে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরুর সময় রুশ সেনাদের যুদ্ধ যানগুলোতে আঁকা একটি প্রতীক ছিল ‘জেড’। এটি রুশ শব্দ ‘জাপাড’ এর সংক্ষিপ্ত রুপ, যার অর্থ ‘ওয়েস্ট’।

ইউক্রেনের পক্ষে যুদ্ধ করতে পশ্চিমা দেশগুলো থেকে স্বেচ্ছাসেবীরা যোগ দিয়েছেন। পাশাপাশি জর্জিয়ার মতো রুশবিরোধী মনোভাবসম্পন্ন সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলো থেকেও অনেকে ইউক্রেনে যুদ্ধ করতে গেছে।

এমনকি কিছু পুতিনবিরোধী রুশ নাগরিকও এতে অংশ নিয়েছে। এই বিদেশি সৈন্যদের সংখ্যা তুলনামূলক কম হলেও যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের প্রভাবকে বাড়িয়ে দেখানো হয়।

অন্যদিকে, রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করছে প্রায় ১০ হাজার উত্তর কোরীয় সৈন্য। তারা ইউক্রেনের সেনাদের দখল করা রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলের ভূখণ্ড পুনর্দখলের পাল্টা অভিযানে অংশ নিচ্ছে। উত্তর কোরীয় সৈন্যদের এই উপস্থিতি যুদ্ধের আন্তর্জাতিক রূপ আরও গভীর করছে।

ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের সিদ্ধান্তকে বড় পরিবর্তন হিসেবে দেখানো হলেও, এর কিছু সম্ভাব্য সমস্যার দিক বিবেচনায় রাখা হয়নি।

প্রথমত, পেন্টাগনের কাছে এই উন্নত অস্ত্রের সংখ্যা কম। প্যাট্রিয়ট অ্যান্টি-মিসাইল ব্যবস্থার মতোই, এই অস্ত্রগুলো পেন্টাগনকে অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার জন্য সংরক্ষণ করতে হয়। বিশেষত তাইওয়ান এবং দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের কার্যক্রম মোকাবেলার জন্য।

ইউক্রেন যুদ্ধ ১ হাজার দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরও পশ্চিমা দেশগুলো এখনো এই উন্নত অস্ত্র উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ায়নি। রাশিয়া অল্প সময়ের মধ্যেই এই আঘাত সামলে উঠবে এবং নিজস্ব উন্নত গ্লাইড বোমা ও হাইপারসনিক মিসাইল উৎপাদন বাড়িয়ে পাল্টা আঘাত করতে সক্ষম হবে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ইউক্রেনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে কিনা তা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, ট্রাম্প পুতিনের ওপর জো বাইডেনের চেয়ে বেশি চাপ সৃষ্টি করতে পারেন। তবে, ট্রাম্পের দল থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের এই হঠাৎ নীতিগত পরিবর্তন পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনাকে ব্যাহত করতে পারে।

ট্রাম্প হয়তো পুতিনকে ক্রিমিয়া উপদ্বীপসহ ইউক্রেনের দখলকৃত এলাকাগুলো ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে যুদ্ধ বন্ধের প্রস্তাব দেওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। কিন্তু বাইডেন ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে সেই উদ্যোগকে ছাপিয়ে গেছেন।

ট্রাম্প সমর্থকদের অনেকেই বাইডেনের শেষ মুহূর্তের এই সিদ্ধান্তকে গভীর সন্দেহের চোখে দেখছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়রও এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে ইঙ্গিত দিয়েছেন, বাইডেনের এই পদক্ষেপ তার বাবার “শান্তি পরিকল্পনা” ব্যাহত করার উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ডেমোক্র্যাটরা আবার রাশিয়াগেট অভিযোগ সামনে এনেছেন। এতে ট্রাম্পকে পুতিনের “পুতুল” হিসেবে অভিহিত করা হয়।

ইউক্রেন যুদ্ধের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির এই জটিল সংযোগ থেকেই বোঝা যায় সেখানে একটি পরোক্ষ বৈশ্বিক যুদ্ধ চলছে। যেখানে একদিকে রাশিয়া ও তার মিত্ররা এবং অন্যদিকে পশ্চিমা দেশগুলো একে অপরের মুখোমুখি।

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কি অনিবার্য?

অনেক পশ্চিমা রাজনীতিবিদই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করেন, ইউক্রেন ছাড়াও তাইওয়ান প্রণালী, কোরীয় উপদ্বীপ, দক্ষিণ চীন সাগর এবং মধ্যপ্রাচ্যসহ সমগ্র এশিয়ার ওপর সংঘাতের ছায়া পড়তে শুরু করেছে। কেউ কেউ রাশিয়া, চীন এবং ইরানকে ‘নতুন অক্ষশক্তি’ হিসাবেও অভিহিত করেছেন।

এটা সত্য যে, বর্তমান বিশ্ব একটি পরিবর্তনশীল ও অস্থির সময় অতিক্রম করছে। এই পরিস্থিতির সঙ্গে অতীতের দুটি বিশ্বযুদ্ধের আগের সময়ের কিছু মিল লক্ষ্য করা যায়।

উন্নত দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ সমস্যা, যেমন অর্থনৈতিক মন্দা, এখন অন্য দেশগুলোতেও প্রভাব ফেলছে। আধিপত্য বিস্তারের জন্য যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া ও ভারতের মতো বড় শক্তিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। আঞ্চলিক সংঘাতগুলো নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে, যা বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সম্ভাবনাকে তীব্র করছে।

পশ্চিমা বিশ্বে জনতুষ্টিবাদ, সংরক্ষণবাদ এবং চরম ডানপন্থী আদর্শের উত্থান দেখা যাচ্ছে। বড় দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস এবং সমন্বয়ের অভাব আন্তর্জাতিক অস্থিতিশীলতা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার কার্যকারিতা ক্ষতিগ্রস্ত করছে। ফলে অনেক দিক থেকেই আরেকটি বিশ্বযুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

চীনের গ্লোবাল টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র আঞ্চলিক সংঘাতে আগুন আরও উস্কে দিচ্ছে। আর তাদের সামরিক-শিল্প যুদ্ধ থেকে বিপুল মুনাফা করছে। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো বর্তমান ইউক্রেন সংকট। যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহকে নিজের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির উপায় এবং দ্বিমুখী লাভ হিসেবে দেখছে। এটি তারা অব্যাহত রাখতে চায়।

চীনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্র ও অংশীদারদের ‘সমন্বিত প্রতিরোধ’ ধারণার মাধ্যমে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে। তারা ‘এশিয়া-প্যাসিফিক ন্যাটো’ তৈরির প্রচারণা চালাচ্ছে, ‘আজ ইউক্রেন, কাল তাইওয়ান’ এই প্রচারণা চালাচ্ছে।

এই পদক্ষেপগুলো আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়াচ্ছে এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তাকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলছে।

এই নেতিবাচক কারণগুলো বিবেচনায় নিলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কি সত্যিই অনিবার্য?

ইতিবাচক দিক

আসলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা সত্ত্বেও, কিছু ইতিবাচক বিষয় এখনও যুদ্ধ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

শান্তি ও উন্নয়নের জন্য সক্রিয় শক্তি ক্রমাগত বাড়ছে। বহুমেরুর বিশ্বব্যবস্থা এবং অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের প্রবণতা দেশগুলোর মধ্যে গভীর সংযোগ তৈরি করছে। একটি যৌথ ভবিষ্যতের ধারণা জোরদার করছে। এই আন্তঃসম্পর্ক বিশ্বযুদ্ধের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হতে পারে।

বিশ্বজুড়ে যুদ্ধবিরোধী মনোভাব এখনো শক্তিশালী। আলবার্ট আইনস্টাইন একবার বলেছিলেন, “আমি জানি না তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে কী অস্ত্র দিয়ে লড়াই হবে, তবে চতুর্থ বিশ্বযুদ্ধ হবে লাঠি ও পাথর দিয়ে।”

দুটি বিশ্বযুদ্ধ আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে যে, সংঘাত সমাধানের জন্য যুদ্ধ কোনো কার্যকর উপায় নয়। পৃথিবী আরেকটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ব যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ সহ্য করতে পারবে না। কারণ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হলে তাতে পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যাপক ব্যবহারে পুরো পৃথিবী ধ্বংসস্তুপে পরিণত হবে।

তাই বিশ্ব যত বেশি অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে, ততই স্থিতিশীলতার প্রতি মানুষের আকাঙ্ক্ষা বাড়ছে। এই আকাঙ্ক্ষা এবং শান্তির প্রতি প্রবল চাহিদা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনা প্রতিরোধে কার্যকর হতে পারে।

আন্তর্জাতিক শান্তি ব্যবস্থা শক্তিশালী হয়েছে। জাতিসংঘ গত কয়েক দশক ধরে বৈশ্বিক শাসন ব্যবস্থার মূল ভিত্তি হয়ে রয়েছে। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছু সংশয়ী কণ্ঠ শোনা গেছে। তথাপি জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা রক্ষা, অস্ত্র কমানোর প্রচেষ্টা এবং বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে।

বিশ্ব গুরুতর ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি এবং অস্থিতিশীলতার মুখোমুখি হলেও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা, পরস্পর অর্থনৈতিক নির্ভরতা এবং পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের মহাবিপদ সম্পর্কে সচেতনতা বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনাকে কমিয়ে রাখছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত