Beta
সোমবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
সোমবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২৪

এসএ গেমসে সাইক্লিংয়ে সোনা উপহার দিতে চাই

এসএম ঈমাম হোসেন সোহাগ।
এসএম ঈমাম হোসেন সোহাগ।
Picture of ক্রীড়া প্রতিবেদক

ক্রীড়া প্রতিবেদক

[publishpress_authors_box]

দেশের অপ্রচলিত খেলাগুলোর একটি সাইক্লিং। অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা নেই সাইক্লিস্টদের। তাদের সারা জীবনের আক্ষেপ ভেলোড্রামের। মাঠে নিয়মিত খেলা নেই দীর্ঘদিন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এরই মধ্যে ৯টি ফেডারেশনে অ্যাডহক কমিটির ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু সাইক্লিস্টরা কবে মাঠে নামবে সেটা জানে না কেউ। বর্তমানে দেশের সাইক্লিংয়ের কি অবস্থা, কোথায় উন্নতি প্রয়োজন, সঙ্কট ও সমাধানের জায়গা কোথায়- এসব নিয়ে আলাপচারিতায় সকাল সন্ধ্যার মুখোমুখি সোনাজয়ী সাবেক সাইক্লিস্ট এসএম ঈমাম হোসেন সোহাগ। অ্যাডহক কমিটির দায়িত্ব পেলে তিনি এগিয়ে নিতে চান বাংলাদেশের সাইক্লিং।

সকাল সন্ধ্যা : আপনার সাইক্লিং ক্যারিয়ার কত বছরের? সাফল্যই বা কেমন ছিল?

এসএম ঈমাম হোসেন সোহাগ:  বাগেরহাট জেলা ক্রীড়া সংস্থার হয়ে প্রথম জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিই ১৯৯৬ সালে। এরপর বাংলাদেশ আনসার ও বিজেএমসিতে খেলেছি। ২০০৭ সালে অবসর নেওয়ার আগে ৮টি সোনার পদক জিতেছি।

সকাল সন্ধ্যা : আপনি তো সাইক্লিং ফেডারেশনের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন।

সোহাগ : আমি  ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সাইক্লিং ফেডারেশনের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলাম। সেবারই প্রথম কমিটিতে কাজ করার সুযোগ হয়।

সকাল সন্ধ্যা: কেন সাইক্লিং নিয়ে আবারও কাজ করার আগ্রহ। সরকার আপনাকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিলে কোথায় নিয়ে যেতে চান বাংলাদেশের সাইক্লিংকে?

সোহাগ : সত্যি বলতে আমাদের সাইক্লিংয়ে সঠিক দিক নির্দেশনা দেওয়ার লোকের অভাব। ৪ বছর কমিটিতে থেকে দেখেছি, সাইক্লিস্টরা কি চায়। আমাদের দীর্ঘ মেয়াদী কোনও ক্যাম্প হয় না। যখন কমিটিতে ছিলাম তখন এসএ গেমসের আগে ৭ মাস ক্যাম্প করিয়েছি সাইক্লিস্টদের।

সকাল সন্ধ্যা: কিন্তু সর্বশেষ ২০১৯ সালের কাঠমান্ডু এসএ গেমসে তো সাইক্লিং কোনও পদকই জেতেনি।

সোহাগ : এটা সত্যি পদক জেতেনি সাইক্লিং। কিন্তু পদক থেকে টাইমিংয়ের পার্থক্য ছিল ন্যানো সেকেন্ডের। আগে এত কম টাইমিং ছিল না। আগে পদক জেতা দেশ থেকে ১০ মিনিট বা আধা ঘন্টা পেছনে থাকতাম আমরা। অথচ এসএ গেমসে সোনা জেতার মত সামর্থ্য আছে আমাদের। আমি দায়িত্ব পেলে সেটা প্রমাণ করতে চাই।

সকাল সন্ধ্যা : সাইক্লিং বাংলাদেশে সবচেয়ে অবহেলিত ফেডারেশন। একবার যুব গেমসে তাদের ছাড়াই আয়োজন করেছে বিওএ। এত উপেক্ষা কেন?

 সোহাগ : আমরা ক্রীড়া রাজনীতির শিকার। যে কারণে বিভিন্ন জায়গায় সাইক্লিং অবহেলিত থাকে। অথচ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে ২১ নম্বরে অবস্থান আমাদের। ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠা হওয়া ফেডারেশনকে পক্ষপাতিত্বের কারণে পেছনে থাকতে হচ্ছে। উঁচু স্বরে কথা বলার মতো সংগঠক নেই আমাদের।

দেশের অপ্রচলিত খেলা সাইক্লিংয়ে উন্নতির রেখা নেই। ছবি: সংগৃহীত

সকাল সন্ধ্যা : বিশ্ব সাইক্লিংয়ে বাংলাদেশ কতটা পিছিয়ে?

সোহাগ : অনেক পিছিয়ে। দক্ষিণ এশিয়াতে ভারতের সঙ্গে তুলনায় অনেক পেছনে। আসলে পারফরম্যান্স নির্ভর করে আপনি ট্রেনিংয়ে কতটা সুযোগ সুবিধা দিচ্ছেন সেটার ওপর। আমাদের সাইক্লিস্টদের অনেকের নুন আনতে পানতা ফুরোনোর অবস্থা। তাছাড়া এটা ব্যয়বহুল খেলা। ভারতের যে প্র্যাকটিস সুবিধা, যেসব সরঞ্জামাদি তা আমাদের নেই। খাবারেও গুরুত্ব দিতে পারি না। যে ক্যালরি ঘাটতি হয় সেটা রিকভারি হয় না।

সকাল সন্ধ্যা : স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও বাংলাদেশে একটা ভেলোড্রাম নেই। এই দায় বা ব্যর্থতা কার?

সোহাগ : এই ব্যর্থতা আমাদের সংগঠকদের। আমরা উঁচু স্বরে কথা বলিনি কখনও। সংগঠকদের বোকামি, অবহেলা আর সদিচ্ছার অভাবের কারণে ভেলোড্রাম হয়নি। সরকারের এখানে কোনও দায় নেই।

সকাল সন্ধ্যা : সাইক্লিংয়ের বিশ্ব নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইউসিআই থেকে কি অনুদান পায় বাংলাদেশ?

 সোহাগ : আমাদের ফেডারেশনের যত সাইকেল আছে সবই ইউসিআইয়ের অনুদানের।

সকাল সন্ধ্যা: ইউরোপে জনপ্রিয় ইভেন্ট টুর ডি ফ্রান্স হয়। বাংলাদেশে তেমন কিছু করার পরিকল্পনা আছে?

সোহাগ: টুর ডি বাংলাদেশ ১৯৯২ সালে ও ২০১৮ সালে হয়েছে। সদিচ্ছার অভাবে এটা নিয়মিত মাঠে গড়ায় না। তবে সুযোগ পেলে নিয়মিত এই আয়োজন করতে চাই।

পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ঈমাম হোসেন সোহাগ।

সকাল সন্ধ্যা : সর্বশেষ টুর ডি বাংলাদেশ থেকে প্রাপ্তি কি?

সোহাগ: সেবার অনেক অনিময় হয়েছে। শুনেছি ৭৫ লাখ টাকার স্পনসর ছিল । কিন্তু আয়োজন ছিল বিশৃঙ্খলায় ভরা। কোনও প্রাপ্তি ছিল না। যতদূর জেনেছি ১৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছিল। বাকিটা কর্মকর্তারা নিজেদের পকেটে ভরে।

সকাল সন্ধ্যা : বর্তমানে সাইক্লিংয়ে কতটি দল রয়েছে?

সোহাগ : মাত্র ৩টা। আনসার, বিজিবি ও সেনাবাহিনী। এছাড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে অপ্র্যতাশিতভাবে কেউ যদি উঠে আসে।

সকাল সন্ধ্যা : বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় কোনও সাইক্লিস্ট আছে যিনি এসএ গেমসে পদক জিততে পারেন?

সোহাগ: অবশ্যই এসএ গেমসে পদক জেতার মতো সম্ভাবনাময় খেলোয়াড় আছে।

সকাল সন্ধ্যা: দেশে কি সাইক্লিংয়ের জন্য পর্যাপ্ত কোচ ও জাজেস আছে?

সোহাগ : নেই। যারা আছে তারাও পুরনো ঘরানার। এখন সময় এসেছে নতুনদের সুযোগ দেওয়ার। এর আগে আশরাফুল ইসলাম কোচ হিসেবে কাজ করে আনসার ও সেনাবাহিনীকে হারিয়েছে। কাজের সুযোগ দিলে আমরা নতুনরাও দেখিয়ে দিতে পারি।

সুযোগ পেলে সাইক্লিংয়ের উন্নতি করতে চান ঈমাম হোসেন সোহাগ।

সকাল সন্ধ্যা: তাহলে আপনি সুযোগ পেলে কি করবেন?

সোহাগ: আমি আগেও বলছি। আবারও বলছি এসএ গেমেসে সোনা উপহার দিতে চাই। এটা বলতে পারি এসএ গেমসে শ্রীলঙ্কা, ভারত, নেপালের মতো বাংলাদেশও একটা ফ্যাক্টর হবে। সেক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী ক্যাম্প করাবো। ৪-৫ মাস পরপর গেম হবে। যত অনুশীলনে থাকবে পারফরম্যান্স ততোই উন্নতি হবে।

সকাল সন্ধ্যা : আপনি তো আইন মন্ত্রণালয়ে চাকরি করেন। কিভাবে সময় দেবেন সাইক্লিংয়ে?

সোহাগ: আমাদের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকবে। বার্ষিক ক্রীড়াপঞ্জী থাকবে। সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় রাখতে হবে। সময় নিয়ে সমস্যা হবে না।

সাইক্লিস্টদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হাসান ঈমাম সোহাগের।

প্রশ্ন: এরই মধ্যে ৯টা ফেডারেশনে অ্যাডহক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। দ্রুতই নিশ্চয় সাইক্লিংয়েরও কমিটি দেখতে চান?

সোহাগ : খেলোয়াড়রা সব সময় বলছে, আমরা মাঠে আসতে পারছি না। সব থেকে বেশি চাওয়াটা ওদের, সেটা হলো একজন ভালো লোক যেন দায়িত্বে আসে। অনেকে এমনও বলে, আপনি এলে সাইক্লিংয়ে উন্নতি হবে। আসলে সাইক্লিস্টরা আমাকে চায়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত