সীমান্তরক্ষীদের বাংলাদেশে প্রবেশের বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া এসব সীমান্তরক্ষীদের ফিরিয়ে নেবে মিয়ানমার।
সোমবার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, “মিয়ানমার সরকার আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ আছে। সকালে মিয়ানমারের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা তাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। ফেরানোর প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা চলছে।”
সীমান্ত সুরক্ষা ও বিজিপি সদস্যদের ফেরানোর বিষয়ে জাতিসংঘের সহায়তা লাগবে কি না, তা জানতে চান এক সাংবাদিক।
জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “সীমান্ত সুরক্ষিত আছে। প্রাণ বাঁচাতে মিয়ানমারে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা পালিয়ে এসেছেন, তাই আমরা আশ্রয় দিয়েছি। সকাল পর্যন্ত ৯৫ জন রেজিস্টার্ড হয়েছেন। মিয়ানমার তাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। ফলে তৃতীয় পক্ষ ডাকার সুযোগ নেই।”
কোন প্রক্রিয়ায় ফেরানো হবে সে বিষয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, “সেটি নিয়ে আমরা আলাপ-আলোচনা করব। তাদের বাই এয়ার (বিমানযোগে) নাকি বাই বোট (নৌকাযোগে) ফিরিয়ে নেওয়া হবে সেটি নিয়ে আমরা আলাপ-আলোচনার মধ্যে আছি। আমাদের একটি পথ খুঁজে বের করতে হবে। এর আগেও ভারতে অনেকে ঢুকে পড়েছিল এবং ভারত থেকে তাদের বিমানযোগে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল।”
মিয়ানমারে বিদ্রোহীদের সঙ্গে সংঘর্ষের মধ্যে রবিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বর্ডার গার্ড পুলিশ-বিজিপি) ৯৫ জন সদস্য পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশে।
এরা অস্ত্রসহ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তমব্রু সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। পরে বিজিবি তাদের নিরস্ত্রীকরণ করে নিরাপদ আশ্রয়ে নেয়।
বিজিপির এসব সদস্যরা যদি ফিরে না যান, তাহলে কী হবে; প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা।
জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “তারা তো অবশ্যই যেতে চাচ্ছে। না হলে মিয়ানমার সরকার আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে কেন? মিয়ানমার তাদের নিয়ে যেতে চায়। তারাই যোগাযোগ করেছে, আমরাও যোগাযোগ করেছি। দুই পাশ থেকেই যোগাযোগ হয়েছে। এটি নিয়ে আমরা কাজ করছি।”
এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পাঠানো জো বাইডেনের চিঠি প্রসঙ্গেও কথা বলেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো। এই চিঠির মাধ্যমে আমাদের সম্পর্ক আরো উন্নত হবে, নতুন উচ্চ মাত্রা পাবে।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনও অস্বস্তি আছে কিনা, তা জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চিঠিতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন, জ্বালানিসহ বৈশ্বিক নানা বিষয়ে একযোগে কাজ চালিয়ে যেতে তার প্রশাসনের আন্তরিক ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। ফলে এই চিঠির পর সব নিরসন হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর কোনও অস্বস্তির কারণ নেই।”
ব্রাসেলস সফর প্রসঙ্গ
বেলজিয়ামে গত ১ ও ২ ফেব্রুয়ারি তৃতীয় ইইউ ইন্দো-প্যাসিফিক মিনিস্টেরিয়াল ফোরামে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এ আয়োজনে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার হওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
ফোরামে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে সুরক্ষা বিষয়ে বক্তৃতার পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভাইস-প্রেসিডেন্ট জোসেপ বোরেলের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়, ইইউ কমিশনার ফর ইন্টারন্যাশনাল পার্টনারশিপস ও কমিশনার ফর ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট এবং ভিয়েতনাম, বেলজিয়াম, চেক, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি, পর্তুগাল, লিথুয়ানিয়া, লুক্সেমবার্গ, দশটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের বিষয়ে জানান হাছান মাহমুদ।
এর আগে সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন লিবিয়ার রাষ্ট্রদূত আব্দুলমুতালিব এস সুলাইমান এবং থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত মাকাওয়াদি সুমিতমোর।
মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত পেলে ব্যবস্থা
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া বিজিপি সদস্যদের ফেরত পাঠানোর বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন বিজিবির কক্সবাজার রিজিয়ন কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোরশেদ আলম।
তিনি বলেন, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত পাওয়ার পরই বিজিপি সদস্যদের ফেরত পাঠানোসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সন্ধ্যায় ঘুমধুম সীমান্তবর্তী বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সড়কে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিজিবির এই কর্মকর্তা। বলেন, “রবিবার সকালে হঠাৎ করে বিজিপি সদস্যরা দেশটিতে সংঘর্ষের কারণে প্রাণ রক্ষায় বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেন। বিষয়টি বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে সে নির্দেশনা অনুযায়ী বিজিপি সদস্যদের অনুপ্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়। তাদের অস্ত্র জমা নিয়ে বিজিবি হেফাজতে নেওয়া হয়।”
পালিয়ে আসা ৯৫ বিজিপি সদস্যের খাবার এবং নিরাপদে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এখনও ৭ জন সদস্য চিকিৎসাধীন।”