টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলতে হলে নিষেধাজ্ঞা এড়াতে হবে ভানিন্দু হাসারাঙ্গাকে। এজন্য অবসরে ভেঙে টেস্টে ফিরেছেন। ক্রিকেটবিশ্বে এই আলোচনা যখন তুঙ্গে তখন শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট (এসএলসি) জানিয়েছে, হাসারাঙ্গার টেস্টে ফেরার সঙ্গে নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর সম্পর্ক নেই। তাদের দাবি, এই স্পিনার টেস্টে ফেরার ইচ্ছার কথা আগেই জানিয়েছিলেন।
ক্রিকইনফো শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, গত ১৬ মার্চ এক ইমেইল বার্তায় টেস্টে ফেরার কথা জানিয়েছিলেন হাসারাঙ্গা। যদিও এসএলসির নির্বাচক কমিটির সদস্য অজন্থা মেন্ডিস দাবি করেছেন, এই স্পিনার টেস্টে ফেরার ইচ্ছা কথা জানিয়েছিলেন আরও আগে।
ক্রিকইনফোকে মেন্ডিস বলেছেন, “প্রায় দুই সপ্তাহ আগে সে (হাসারাঙ্গা) আমাদের বলেছে যে আবার টেস্ট খেলতে চায়। আমরা জানি এখন ব্যাপারটি কেমন মনে হচ্ছে। তবে শেষ ওয়ানডের আগেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
প্রায় এক বছর প্রথম শ্রেণি ক্রিকেট থেকে বাইরে থাকা খেলোয়াড় কেন হঠাৎ লাল বলের ক্রিকেট ফিরতে চাইলেন, সেই রহস্য অবশ্য উন্মোচিত হয়নি। যদিও ক্রিকইনফোর খবর, সাম্প্রতিক সময়ে ফিটনেসের উন্নতি হওয়ায় ২০২৩ সালের আগস্টে অবসরে যাওয়া হাসারাঙ্গা আবার ফিরতে চেয়েছেন টেস্টে।
কিন্তু এমন সময় তিনি অবসর ভাঙতে চেয়েছেন, যখন শুরু হচ্ছে আইপিএল। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্টে খেলতে যেখানে অনেক ক্রিকেটার দেশের খেলা থেকে ছুটি নেন, সেখানে খেলা মিস করে হাসারাঙ্গার টেস্টে ফেরাটা বড় রহস্যজনকই মনে হয়েছে অনেকের কাছে। রহস্য আরও বাড়ে যখন ক্রিকইনফো জানাচ্ছে, হাসারাঙ্গা যে টেস্টে ফেরার পরিকল্পনা করছেন, সে ব্যাপারে কিছু জানতো না তার দল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ।
শ্রীলঙ্কার টি-টোয়েন্টির দলের বর্তমান অধিনায়ক হাসারাঙ্গা। যদিও বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ খেলতে পারেননি তিনি। চোটসংক্রান্ত কোনও ঝামেলা ছিল না, ছিল শৃঙ্খলাজনিত সমস্যা। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে শাস্তি পেয়েছিলেন এই লেগ স্পিনার। বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ চলাকালীন আবারও নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছেন হাসারাঙ্গা। আর এই নিষেধাজ্ঞা শেষ করতে চতুরতার সঙ্গে হাসারাঙ্গাকে টেস্ট ক্রিকেটে ফিরিয়েছে শ্রীলঙ্কা!
এবারও আম্পায়ারের সঙ্গে অসদাচরণে শাস্তি পেয়েছেন তিনি। বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডের সিরিজের শেষ ম্যাচে আম্পায়ারিং নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করায় আইসিসির কোড অব কন্ডাক্টের ২.৮ নম্বর ধারা ভেঙেছেন হাসারাঙ্গা। ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছে, শাস্তি হিসেবে ম্যাচ ফি’র ৫০ শতাংশ জরিমানা করা হয়েছে তাকে। একই সঙ্গে তার নামের পাশে যোগ হয়েছে তিনটি ডিমেরিট পয়েন্ট।
এ নিয়ে ২৪ মাসে আটটি ডিমেরিট পয়েন্ট হলো হাসারাঙ্গার। আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, ২৪ মাস সময়ের মধ্যে কোনও খেলোয়াড় আটটি ডিমেরিট পয়েন্ট পেলে সেটি চারটি নিষেধাজ্ঞা পয়েন্টে রূপান্তর হবে। সেই শাস্তি হিসেবে ওই খেলোয়াড় দুই টেস্ট কিংবা চার ওয়ানডে কিংবা চার টি-টোয়েন্টিতে নিষিদ্ধ হবেন। যে সংস্করণের খেলা আগে, নিষেধাজ্ঞা সেই সংস্করণে কার্যকর হবে। হাসারাঙ্গার ক্ষেত্রে ঠিক এই বিষয়টিই ঘটেছে।
এই জায়গাতেই ‘মাস্টার প্ল্যান’ সাজিয়েছে শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই টেস্টেই যেন হাসারাঙ্গার শাস্তি শেষ হয়ে যায়, সেকারণে অবসর ভাঙিয়ে এই লেগ স্পিনারকে টেস্ট দলে ফিরিয়েছে তারা। মঙ্গলবার টেস্ট সিরিজের দল ঘোষণা করেছে শ্রীলঙ্কা। ২০২৩ সালের আগস্টে টেস্ট থেকে অবসর নেওয়া হাসারাঙ্গাকেও তারা রেখেছে ১৭ সদস্যের স্কোয়াডে।
সামনেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এর আগে আর কোনও আন্তর্জাতিক ম্যাচ নেই শ্রীলঙ্কার। ফলে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এই স্পিনারকে হারানোর শঙ্কা ছিল তাদের। কারণ টেস্ট দলে না থাকলে শাস্তি হিসেবে চারটি টি-টোয়েন্টিতে নিষিদ্ধ হবেন হাসারাঙ্গা। বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে শ্রীলঙ্কার ম্যাচ চারটি। পরের রাউন্ডে না গেলে অধিনায়ককে পাওয়া সম্ভব ছিল না তাদের। সেকারণেই বাংলাদেশের বিপক্ষে অবসর ভেঙে টেস্টে ফিরেছেন হাসারাঙ্গা। যাতে দুই ম্যাচের টেস্ট দিয়েই শাস্তি শেষ করতে পারেন!
