Beta
মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর, ২০২৫

‘রাজাকারের নাতি-পুতি’ বলে হামলার বৈধতা তৈরি করা হয় : নাহিদ

২০২৪ সালের ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ; তাতে বহু শিক্ষার্থী আহত হয়। ফাইল ছবি
২০২৪ সালের ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ; তাতে বহু শিক্ষার্থী আহত হয়। ফাইল ছবি
[publishpress_authors_box]

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই গণহত্যার মামলায় সাক্ষ্য দিলেন অভ্যুত্থানের নেতা নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেছেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের নাতি-পুতি’ বলে হামলার বৈধতা তৈরি করেছিলেন শেখ হাসিনা।

জুলাই অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মামলায় ৪৭তম সাক্ষী হিসাবে বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন নাহিদ।

এই আন্দোলনকারীদের ওপর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং সরকার সমর্থকদের হামলার জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হানিাকে সরাসরি দায়ী করেন তিনি।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত বছরের জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হলেও তা সহিংসতায় গড়ায় ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার পর। তার আগের দিনই শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, কোটার সুবিধা মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা পাবে না তো কি রাজকারের নাতি-পুতিরা পাবে?

তার ওই বক্তব্যের পর ১৪ জুলাই রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল বের হয়, যার স্লোগান ছিল- ‘তুমি কে, আমি কে? রাজাকার-রাজাকার’।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তখনকার সমন্বয়ক নাহিদ বুধবার ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেওয়ার পর সাংবাদিকদের বলেন, “রাজাকারের বংশধর, নাতি-পুতি বলে ট্যাগ দেওয়া হয়, তা ছিল শিক্ষার্থীদের জন্য অমর্যাদকর, অপমানজনক। ক্ষুব্ধ হয়ে সারাদেশের শিক্ষার্থীরা রাতে রাস্তায় নেমে এসেছিল। শেখ হাসিনাকে ক্ষমা চেয়ে বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছিল।

“একইভাবে ১৫ জুলাই আমরা দেখেছি যে ওবায়দুল কাদের (আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) বলেছিলেন যে আন্দোলন দমনের জন্য ছাত্রলীগই যথেষ্ট।”

 এর পরপরই ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার বিষয়টি তুলে ধরে নাহিদ বলেন, “সেই সূত্র ধরে কিন্তু ১৫ জুলাই সাধরণ শিক্ষার্থীদের ওপর, বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের ওপর ব্যাপক হামলা চালানো হয়।

“এই বক্তব্য ছিল উসকানিমূলক, নির্দেশনামূলক যে আন্দোলনকারী যারা রয়েছে, তারা রাজাকার, তাদের ওপর আক্রমণ করা, তাদের হত্যা করা বৈধ।”

১৫ জুলাইয়ের হামলার পর আন্দোলন আরও তীব্র হয় এবং সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। পরদিন ঢাকা, রংপুর ও চট্টগ্রামে হামলায় আন্দোলনকারী পাঁচজন নিহত হয়।

‍তাতে ক্ষোভ আরও ব্যাপক হলে শেখ হাসিনার সরকার কারফিউ জারি করে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে। সরকারের দমন নীতিতে কয়েকদিনেই কয়েকশ বিক্ষোভকারী নিহত হয়। তাতে এক দফার আন্দোলন ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আন্দোলনের তোড়ে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা।

এরপর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হলে তাতে উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন নাহিদ। তবে অভ্যুত্থানকারীরা নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি গঠন করলে তার দায়িত্ব নিতে গত ফেব্রুয়ারিতে উপদেষ্টার পদ ছাড়েন তিনি।

বুধবার ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেওয়ার পর নাহিদ বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডগুলো নিয়ে সাধারণ আদালতে যে মামলাগুেলা রয়েছে, সেগুলোর বিচারে গুরুত্ব দিতে হবে।

ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিচার চললেও আন্দোলনের সময় যারা যারা গুলি চালিয়েছিলেন, তার আগে আওয়ামী লীগের শাসনামলে যারা গুমে জড়িত ছিলেন, সবার বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান নাহিদ।

তিনি বলেন, “পুলিশসহ, মিলিটারিসহ অন্যান্য বাহিনীর যারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানসহ গুমের ঘটনায় যুক্ত, তাদেরও যেন বিচারের আওতায় আনা হয়। কোনও বাহিনীর দেখে যেন কেউ পার পেয়ে না যায়।”

নাহিদ যে মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে এ মামলায় বাকি দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।

শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানকে পলাতক দেখিয়ে এই মামলার বিচার চলছে। গ্রেপ্তার মামুন রাজসাক্ষী হয়ে এই মামলায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ বুধবার নাহিদের জবানবন্দি শেষ হয়নি। বৃহস্পতিবারও তিনি জবানবন্দি দেবেন।

গত ১০ জুলাই ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠনের পর মামলাটিতে বিচার শুরুর আদেশ হয়। তখন দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হতে আবেদন করেন আল-মামুন।

জুলাই হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ শাসনকালের গুম-খুন এবং ২০১৩ সালে মতিঝিলে শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে দমন অভিযানের মামলার বিচারও হবে ট্রাইব্যুনালে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত