Beta
রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫

শেখ হাসিনার এবারের ভারত সফরের গুরুত্ব যেখানে

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
[publishpress_authors_box]

দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে আলোচনার অনেক বিষয় রয়েছে- তিস্তা চুক্তি ঝুলে আছে এক যুগ হলো, সীমান্তে হত্যা থামেনি; তবে এসব ছাপিয়ে শেখ হাসিনার এবারের ভারত সফরটিকে রাজনৈতিক কারণে গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে বিশ্লেষকের চোখে।

দুই দিনের সফরে শুক্রবার নয়া দিল্লি যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের পর এটাই হতে যাচ্ছে তার প্রথম দ্বিপক্ষীয় ভারত সফর।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে এই সফর করছেন তিনি। মোদী টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর এটাই হতে যাচ্ছে কোনও সরকারপ্রধানের প্রথম সফর।

আর এই বিষয়টিতেই সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, এ দফায় সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার প্রথম বিদেশ সফর ভারতে করছেন। কূটনীতি এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে থেকে এ সফরের উল্লেখযোগ্য দিক এটাই।

শেখ হাসিনা ও মোদী তারা দুজনই দীর্ঘদিন ধরে নিজ নিজ দেশে ক্ষমতায়। আর এই সময়ে প্রতিবেশী দুই দেশের সম্পর্ক নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে বলে উভয়ের তরফে দাবি করা হচ্ছে।

এই সফরে কী নিয়ে আলোচনা হতে পারে, সে বিষয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে দুই নেতা দুই দেশে ক্ষমতায় আছেন। সঙ্গত কারণেই কিছু বিষয় আলোচনায় আসবে।

“ভারতীয় ঋণচুক্তি বাস্তবায়নের গতি খুব ধীর। এ বিষয়ে নিশ্চয়ই কথা হবে। আর তিস্তা পরিকল্পনার বিষয়টিও আসতে পারে। আর কমন কিছু বিষয় তো আছেই।”

বছরের শুরুতে নতুন সরকার গঠনের পর শেখ হাসিনার প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর ভারতে হবে, না কি চীনে হবে, তা নিয়ে কূটনৈতিক মহলে ছিল আলোচনা। শেষমেষ তা ভারতেই হতে যাচ্ছে।

ভারতের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ধরে রেখেই ঢাকা এগোতে চায়, এমন কথা সফরের আগেই বলে রেখেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “ভারতের সঙ্গে কম্প্রিহেনসিভ পার্টনারশিপ করছি বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থেই। জাতীয় স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে কারও সঙ্গে সম্পর্ক করব না। ভারতের সঙ্গে বৈরিতা আমরা করতে চাই না। বন্ধুত্বপূর্ণ, ভারসাম্যমূলক ও সম্মানজনক পারস্পরিক কূটনীতি চাই।”

এবিষয়ে তৌহিদ হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, “দুই দেশের মধ্যে এখন যে সম্পর্ক আছে, তাতে ভারত হয়ত ভাবতে পারে যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকট সামাল দিতে চীনের সহযোগিতা দরকার, কারণ চীন যা দিতে পারে, সেটি দেওয়ার সক্ষমতা ভারতের নেই।

“এমনটি হলে তিস্তা পরিকল্পনার কাজ চীনকে দেওয়ার বিষয়ে অগ্রগতি হলেও হতে পারে। আরও নতুন কোনও বিষয় আলোচনায় আসে কি না, সেটি দু দেশের যৌথ বিবৃতি বা ঘোষণা আসলে জানা যাবে।”

শুক্রবার নয়া দিল্লি পৌঁছলেও শেখ হাসিনার গুরুত্বপূর্ণ সব কর্মসূচিই থাকছে পরদিন। শনিবার রাষ্ট্রপতি ভবনে শেখ হাসিনাকে দেওয়া হবে লাল গালিচা সংবর্ধনা; সেখানে তাকে অভ্যর্থনা জানাবেন মোদী।

সেদিনই হায়দরাবাদ হাউসে ঢাকা-দিল্লি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে নিজ নিজ দেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন শেখ হাসিনা ও মোদী। সেখানে একান্ত বৈঠকও করবেন তারা। তারপরই আসবে যৌথ ঘোষণা।

নয়া দিল্লিতে গত ৯ জুন নরেন্দ্র মোদীর নতুন সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার মেয়ে শেখ সায়মা ওয়াজেদও ছিলেন। ছবি : পিটিআই

চুক্তি-এমওইউ কী নিয়ে

এই সফরকে ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ দেখিয়ে ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে উভয় দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি বিনিময়ের কথা বলা হয়েছে। তবে কোন কোন বিষয়ে সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি হবে, তা বলা হয়নি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও কিছু বলা হয়নি এনিয়ে।

তবে বিবিসি বাংলা বিভিন্ন কর্মকর্তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে লিখেছে, ভারতের সঙ্গে আগে হওয়া ঋণচুক্তির দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সমঝোতা স্মারক বা চুক্তি সই হতে পারে।

এছাড়া পেঁয়াজ বা চিনির মতো জরুরি দরকারি খাদ্যপণ্য আমদানির সুযোগ যাতে নিরবচ্ছিন্ন থাকে, ভারতের কাছ থেকে সেই নিশ্চয়তা চাইতে পারে ঢাকা।

গত এক দশক ধরে আলোচনায় থাকা তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা এবারও হতে পারে বলে কর্মকর্তারা ধারণা দিয়েছেন।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা নতুন করে আলোচনায় আসার প্রেক্ষাপটে দুই প্রধানমন্ত্রীর আলোচনাতেও এটি আসতে পারে।

তিনি একইসঙ্গে বলেন, “এখানে চূড়ান্তভাবে কী হবে, বলা মুশকিল। হয়তো বাংলাদেশে চীনের ফুটপ্রিন্ট বেড়ে যাচ্ছে, এনিয়ে ভারতের তরফ থেকে উদ্বেগও আসতে পারে।

“আবার বাংলাদেশ হয়ত ভারতকে বুঝিয়ে বলতে পারে যে এনিয়ে ভারতের নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের কোনও কারণ থাকবে না। সেক্ষেত্রে একটা লিমিটেড ওয়েতে চীনকে তিস্তা পরিকল্পনায় কাজ করতে দিতে উভয় পক্ষ একমতও হতে পারে।”

সরকারের একটি উচ্চপর্যায়ের সূত্রকে উদ্ধৃত করে প্রথম আলো জানিয়েছে, সফরে দুই দেশের মধ্যে ১০টির বেশি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই ও নবায়ন হতে পারে। এসব চুক্তি ও এমওইউ জ্বালানি, সংযুক্তি, অর্থনীতিসহ সহযোগিতার নানা ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত।

পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন প্রথম আলোকে বলেন, “ভবিষ্যতে দুই দেশের এই সম্পর্ককে কোথায় নিয়ে যেতে চান, তার একটি দিক-নির্দেশনা থাকবে দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকে।

“একধরনের রূপকল্পের কথা উঠে আসবে তাদের আলোচনায়। যার ধারাবাহিকতায় ব্যাপকতর অর্থে সংযুক্তি, পরিবেশ, মহাকাশসহ নতুন নতুন কোন ক্ষেত্রগুলোতে ভবিষ্যতে আমাদের সহযোগিতা এগোবে, তার একটা নির্দেশনা থাকবে।”

তিস্তা চুক্তির বিষয়ে মাসুদ বিন মোমেন প্রথম আলোকে বলেন, “তিস্তা চুক্তিটি যে পর্যায়ে আছে, খুব শিগগির এতে ইতিবাচক কিছু ঘটবে, এমন কোনও পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে না। তবে আশার দিকটি হচ্ছে, তিস্তা ঘিরে উন্নয়ন প্রকল্প বা সংরক্ষণের বিষয়ে সম্প্রতি ভারত আগ্রহ দেখাচ্ছে।”

গত ৯ জুন নরেন্দ্র মোদীর শপথ গ্রহণের মঞ্চে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর পাশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অন্য অতিথিরা। ফাইল ছবি

ব্যবসায়ীদের যা চাওয়া

প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে ভারত যাচ্ছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম। তার নেতৃত্বে ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধি দল যাচ্ছে বলে এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি আমিন হেলালী সকাল সন্ধ্যাকে জানান।

সফরের সময় কম হওয়ায় এবার ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি দলটিও অন্যবারের তুলনায় ছোট বলে জানান তিনি।

আলোচনার বিষয় নিয়ে হেলালী বলেন, ভারতের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্কে নতুন মাত্রা আনতে চায় বাংলাদেশ। সেই বিষয়গুলো নিয়েই ভারতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা হবে।

সীমান্ত এলাকায় ব্যবসা উপযোগী আধুনিক স্থাপনা, পাটসহ বিভিন্ন পণ্যের অ্যান্টি-ডাম্পিং বাধা দূর এবং ভারতে ব্যবসায়ীদের সহজে ভিসা পাওয়ার ওপর জোর দেবে এফবিসিসিআই নেতারা জানান।

হেলালী বলেন, একই সঙ্গে ভারতে পাটের যে উন্নত বীজ তৈরি হয়েছে, তা বাংলাদেশও ব্যবহার করতে চায়। সে বিষয়ে তারা আলোচনা তুলবেন।

দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য এখনও ভারতের দিকেই ঝুঁকে আছে। ভারতের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের প্রবেশাধিকার দেওয়া হলেও শুল্ক ও অশুল্ক বাধা রয়েই গেছে। ব্যবসায়ীরা চান বাণিজ্য ভারসাম্য আনার ক্ষেত্রে এসব বাধা যেন দূর হয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত