দুর্নীতি দমন কমিশনের আবেদনে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার পরিবারের সদস্যদের ১২৪টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছে আদালত।
এই আদেশের ফলে শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং তাদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ১২৪টি ব্যাংক হিসাবে কোনও লেনদেন করা যাবে না।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে এখন ভারতের আশ্রয়ে রয়েছেন। তার বোন রেহানা রয়েছেন যুক্তরাজ্যে।
শেখ হাসিনার মেয়ে পুতুল রয়েছেন ভারতে। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক। তার দপ্তর দিল্লিতে। জয় রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে।
দেড় দশক ধরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা শেখ হাসিনা ক্ষমতা থেকে উৎখাতের পর তার ও পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে নামে দুদক।
সেই অনুসন্ধানের অংশ হিসাবে দুদকের উপ-পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম তাদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ চেয়ে ঢাকার আদালতে আবেদন করেন।
তিনি আবেদনে বলেন, অভিযোগ-সংশ্লিষ্টরা অস্থাবর সম্পদ অন্যত্র হস্তান্তর, স্থানান্তর বা বেহাত করার চেষ্টা করছেন। সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে এসব ব্যাংক হিসাব অবিলম্বে অবরুদ্ধ করা আবশ্যক।
সেই আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত ১২৪টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেন।
এদিকে শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, জয়, পুতুল, রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ও আজমিনা সিদ্দিক এবং ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশও দেন একই বিচারক।
দুদকের উপপরিচালক মনিরুল ইসলাম এই আবেদন করেছিলেন। তাতে মঙ্গলবার জাকির হোসেন গালিবের আদালত আদেশ দেয় বলে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম জানিয়েছেন।
শেখ হাসিনা পরিবারের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের নামে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের একটি অভিযোগ নিয়ে দুদক অনুসন্ধান করছে। এজন্য পাঁচ সদস্যের একটি অনুসন্ধান দলও গঠন করা হয়েছে।
তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে করা আবেদনে বলা হয়েছে, “অনুসন্ধানকালে বিশ্বস্ত সূত্রের মাধ্যমে জানা যায়, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ সপরিবারে গোপনে দেশ ত্যাগ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তারা দেশ ত্যাগ করে বিদেশে পালিয়ে গেলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডপত্র প্রাপ্তিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। তাছাড়া সার্বিক অনুসন্ধানকাজে বিঘ্ন সৃষ্টিসহ সমূহ ক্ষতির কারণ রয়েছে। এ অবস্থায় অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধান কার্যক্রমের স্বার্থে তাদের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা একান্ত প্রয়োজন।”
অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে, তারা সবাই রয়েছেন বিদেশে। সেক্ষেত্রে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চাওয়ার কারণ জানতে চাইলে দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, তাদের বিদেশে অবস্থানের বিষয়টি আদালত আনুষ্ঠানিকভাবে জানে না। তাই আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি জানার ক্ষেত্র তৈরি করতে এই আবেদন করা হয়।