বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী।
শনিবার নয়া দিল্লিতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন হায়দরাবাদ হাউসে একান্ত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এ প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক্স-এ জানান, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার ঐতিহাসিক বন্ধন আরও দৃঢ় করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে আলোচনা হয়েছে।
তিনি জানান, দুই প্রধানমন্ত্রীর আলোচনায় উন্নয়ন অংশীদারিত্ব, জ্বালানি, পানিসম্পদ, বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বিভিন্ন বিষয় স্থান পেয়েছে।
এদিকে, দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একান্ত বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশকে ভারতের বৃহত্তম উন্নয়ন সহযোগী বলে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, “আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেই। আমি একটি স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ ও প্রগতিশীল বাংলাদেশের যে স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু দেখেছিলেন, তা বাস্তবায়নে ভারতের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি।”
বিমসটেকসহ অন্যান্য আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ফোরামেও বাংলাদেশ ও ভারতের পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কথাও জানান নরেন্দ্র মোদী।
দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে শুক্রবার বিকালে নয়া দিল্লি পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারতের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল এবং বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. মুস্তাফিজুর রহমান নয়া দিল্লির পালাম বিমানবন্দরে শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানান।
লোকসভা নির্বাচনে জয়ী বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠনের পর ভারতে কোনও সরকার প্রধানের এটিই প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর। এটি ১৫ দিনেরও কম সময়ের মধ্যে ভারতের রাজধানীতে শেখ হাসিনার দ্বিতীয় সফর। তিনি গত ৯ জুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন।
শুক্রবার বিকালে নয়া দিল্লি পৌঁছানোর পর সন্ধ্যায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
শনিবার হায়দরাবাদ হাউসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে একান্ত বৈঠকের আগে সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে যান। সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাকে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা জানান। পরে শেখ হাসিনাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয় এবং তিনি গার্ড পরিদর্শন করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজঘাটে ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সেখানে পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন তিনি।
হায়দরাবাদ হাউসে একান্ত বৈঠকের পর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী কয়েকটি সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করেন। এরপর যৌথ বিবৃতি দেন তারা। পরে হায়দরাবাদ হাউসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী আয়োজিত ভোজসভায় যোগ দেন শেখ হাসিনা।
বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখারের সঙ্গে তার সচিবালয়ে সাক্ষাৎ করবেন। সন্ধ্যায় শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি ভবনে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে দেখা করবেন।
স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় প্রধানমন্ত্রী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে পালাম বিমানবন্দর থেকে ভারতের রাজধানী ত্যাগ করবেন এবং রাত ৯টায় ঢাকায় অবতরণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
