ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, উভয় দেশের স্বার্থে একটি টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে ডিজিটাল এবং সবুজ অংশীদারত্বের জন্য যৌথ দৃষ্টিভঙ্গিতে সম্মত হয়েছেন তারা।
নয়া দিল্লিতে শনিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একান্ত বৈঠক এবং দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে নেতৃত্ব দেওয়ার পর যৌথ বিবৃতিতে তিনি একথা বলেন বলে বাসস জানিয়েছে।
নরেন্দ্র মোদী তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর প্রথম সরকারপ্রধান হিসাবে আমন্ত্রিত হয়ে শুক্রবার নয়া দিল্লি পৌঁছান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
শনিবার সকালে দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে লাল গালিচা সংবর্ধনা নেওয়ার পর রাজঘাটে গান্ধীর সমাধি সৌধে ফুল দিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর হায়দরাবাদ হাউজে যান শেখ হাসিনা। সেখানেই দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পাশাপাশি মোদীর সঙ্গে একান্ত আলোচনা করেন তিনি।
বৈঠকে অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, নিরাপত্তা ও বাণিজ্যের বিষয়গুলো নিয়ে দুই দেশের সরকার প্রধানের আলোচনা হয় বলে বাসস জানিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “উভয় দেশই একটি শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে আমাদের পথ দেখানোর জন্য ‘রূপকল্প ঘোষণা’ অনুমোদন করেছে। আমরা টেকসই ভবিষ্যতের জন্য ‘ডিজিটাল অংশীদারিত্ব’ এবং ‘সবুজ অংশীদারিত্ব’ বিষয়ক দুটি সমন্বিত রূপকল্পকে সামনে রেখে কাজ করতে সম্মত হয়েছি।”
বৃহত্তম প্রতিবেশী দেশ ভারতকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু এবং আঞ্চলিক অংশীদার অভিহিত করে শেখ হাসিনা বলেন, “১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে সৃষ্ট সম্পর্ককে বাংলাদেশ সবসময়ই বিশেষ গুরুত্ব দেয়। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ক্রমাগত বিকশিত এবং দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে।”
বৈঠকের আলোচনা নিয়ে তিনি বলেন, “আজ আমাদের দুই পক্ষের মধ্যে অত্যন্ত ফলপ্রসূ বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে আমরা অন্যান্য পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ের মধ্যে রাজনীতি ও নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও সংযোগ, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, জ্বালানি ও শক্তি এবং আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করেছি।
“আমরা আমাদের দু’দেশের এবং জনগণের কল্যাণের জন্য আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করার বিষয়ে সম্মত হয়েছি।”
ভারতে মোদী যেমন টানা তৃতীয়বার সরকার গঠন করেছেন, তেমনি বাংলাদেশেও শেখ হাসিনা বছরের শুরুতে টানা চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন। এরপর দুজনই প্রথম দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হলেন শনিবার।
নতুন সরকার গঠনের মাধ্যমে ঢাকা ও দিল্লি নতুনভাবে পথচলা শুরু করেছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “সেই ধারাবাহিকতায় আমরা ‘রূপকল্প-২০৪১’ এর মাধ্যমে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা এবং ‘বিকশিত ভারত ২০৪৭’ অনুসরণ নিশ্চিত করার জন্য ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করেছি।”
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দু’দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়সহ উচ্চপর্যায়ের মধ্যে যোগাযোগ ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কথা বলেন শেখ হাসিনা। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে সাতটি নতুন সমঝোতা স্মারক সই এবং তিনটি নবায়নের কথাও বলেন তিনি।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতে দ্বিপাক্ষিক সফর করেছিলেন শেখ হাসিনা। পরের বছর নয়া দিল্লিতে জি ২০ সম্মেলনে আমন্ত্রিত হয়ে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। এই জুন মাসের শুরুতে মোদীর শপথ অনুষ্ঠানেও আমন্ত্রণ পেয়ে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।
সেই প্রসঙ্গ ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি এই একই জুন মাসে অভূতপূর্ব দ্বিতীয়বারের মতো নয়াদিল্লি সফর করছি। এসবই আমাদের দু’দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠভাবে একে অপরের সঙ্গে কাজ করার প্রমাণ বহন করে।”
মোদীর সঙ্গে এবারের বৈঠক নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, এই আলোচনা আমাদের একে অপরকে সহযোগিতার উন্নততর পথ নিরূপণে গুরুতপূর্ণ দিক-নির্দেশনা দেবে।”
এই সফরে উষ্ণ আতিথেয়তার জন্য ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে জীবন বিসর্জন দেওয়া ভারতীয় সৈন্যদের কথাও স্মরণ করেন তিনি।