রক্তাক্ত অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো শেখ হাসিনা জেল হত্যা দিবস স্মরণ করতে গিয়ে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরবর্তী অবস্থার সঙ্গে তুলনা করেছেন।
তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর কুচক্রী মহল দেশের যে পরিস্থিতি করেছিল বর্তমানে তেমন পরিস্থিতিই বিরাজ করছে।
“বাংলাদেশ আজ অবরুদ্ধ এবং কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে পরিণত হয়েছে, যেখানে মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই, শোক পালনের অধিকার নেই।”
অভ্যুত্থানের পর গণহত্যার মামলা নিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার এই বিবৃতি তার দলের ভেরিফাইড ফেইসবুক পেইজে শনিবার প্রকাশিত হয়েছে।
৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবসের কর্মসূচি পালনে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের নির্দেশও দিয়েছেন শেখ হাসিনা।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর খোন্দকার মোশতাক আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত সরকার বন্দি করে জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামানসহ আওয়ামী লীগের বহু নেতাকে।
তিন মাস পর ৩ নভেম্বর কারা হেফাজতে হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতাকে। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ এই চারজন তার অনুপস্থিতিতে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
কারাগারের অভ্যন্তরে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বিবৃতিতে বলেন, “কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ড ছিল জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার ধারাবাহিকতা।”
বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার খুনিদের তৎকালীন সরকারের দায়মুক্তি দেওয়ার বিষয়টিও বিবৃতিতে তুলে ধরেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতাকে হত্যা শুধু ব্যক্তি খুন নয়, বাংলাদেশকে পুনরায় পাকিস্তানের ভাবধারায় ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টার অংশ বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
তিনি বলেন, “এই ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি ও দেশবিরোধী চক্র বাংলার মাটি থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, প্রগতিশীল রাজনীতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নাম চিরতরে মুছে ফেলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস এবং বাঙালি জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করার অপচেষ্টা চালিয়েছিল।
“স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি বরাবরই দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে দেশের গণতান্ত্রিক ধারা ব্যাহত করতে এবং স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করতে বারবার হামলা করেছে। কিন্তু দিনশেষে ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হয়নি এবং ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে।”
স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির যেকোনও ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের ধারা সমুন্নত রাখবেন বলে আমি বিশ্বাস করি। জাতীয় চার নেতার জীবন ও কর্মের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর এটাই উৎকৃষ্ট পন্থা।”
মুক্তিযোদ্ধারা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিল– এ প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “ইতিহাসের নির্মম বাস্তবতা হলো, সময়ের পরিক্রমায় একদিন সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা হবে। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশের চেতনা চির জাগরূক থাকবে এবং জাতীয় চার নেতার অবদান জাতি চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।”