বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) অভিযোগ এনে দেওয়া কারণদর্শাও নোটিশের জবাব দিতে বেশি সময় নিলেন না চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়া ফিরে গিয়ে শুক্রবার বিসিবি বরাবর নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের উত্তর দিয়েছেন এই কোচ। লম্বা চিঠিতে বিসিবির বর্তমান বোর্ডের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ এনেছেন তিনি। সকাল সন্ধ্যার পাঠকদের জন্য ওই চিঠির অনুবাদ তুলে দেওয়া হলো –
সংশ্লিষ্টদের প্রতি,
২০২৩ বিশ্বকাপের ম্যাচ চলাকালে একজন খেলোয়াড়কে শারীরিক আঘাত করা। সেই সঙ্গে অনুমতি ছাড়া অতিরিক্ত ছুটি নেওয়ার দাবির তোলা হয়েছে আমার বিরুদ্ধে। যা আমার সততা এবং পেশাদারিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। এই অভিযোগের জবাবে আমি এই চিঠি লিখছি। এই ধরনের অনুমানভিত্তিক অভিযোগের বিপরীতে আমার পক্ষে চুপ থাকা অসম্ভব। আমি বিশ্বাস করি, এই ধরনের বিষয়গুলো স্পষ্ট করা দরকার।
প্রথমত, অভিযুক্ত ঘটনাটি খেলোয়াড়দের ডাগআউট বা ড্রেসিং রুমে ঘটেছিল, যে জায়গায় বিশ্বকাপের ম্যাচ চলাকালে সার্বক্ষণিক নজরদারি থাকে। ৪০ থেকে ৫০টিরও বেশি ক্যামেরা খেলার প্রতিটি মুহূর্ত ধারণ করে। এ সংক্রন্ত যে অভিযোগ আনা হয়েছে আমি কোন পত্যক্ষ সাক্ষীর মুখোমুখি হয়ে যাচাই করার সুযোগ পাইনি বা কোনও সাক্ষীও পাইনি, অবশ্য যদি থেকে থাকে।
ঘটনাটি খুব গুরুত্বের সঙ্গে উপস্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু আসর শেষ হয়ে গেলেও উক্ত ক্রিকেটার টিম ম্যানেজার বা বোর্ডের কাছে এ নিয়ে অভিযোগ তোলেনি। যদি অভিযোগ করাও হয়, তাহলে আমি বিস্মিত যে আমাকে এ ব্যাপারে কিছু জিগাস করা হয়নি আমাকে এ নিয়ে কেউ প্রশ্নও করেনি। প্রশ্ন উঠছে, কেন কয়েক মাস পরে ইউটিউবে একজন ব্যক্তির মাধ্যমে এটা প্রকাশিত হলো?
ছুটি নেওয়ার বিষয়ে আমি স্পষ্ট করতে চাই যে আমি ব্যক্তিগতভাবে ছুটি নেওয়ার বেলায় সবসময় সিইও এবং ক্রিকেট অপারেশন্সের চেয়ারম্যান উভয়ের কাছ থেকে অনুমতি চেয়েছি এবং পেয়েছি। কোনও সময়ই বিসিবি আমাকে বলেনি যে তারা আমার ছুটি নিয়ে অসন্তুষ্ট। বরং আমি যতবারই ছুটি চেয়েছি, বিসিবি তা মঞ্জুর করেছে। তাদের অনুমতি ছাড়া আমি কখনও ছুটিতে যাইনি।
নতুন বোর্ড সদস্যরা অভিযোগ করলো যে আমি অতিরিক্ত ছুটি নিয়েছি। আমার ছুটির মধ্যে পড়া সরকারি ছুটির হিসাব করেনি, যেমন ঈদের দিন, শুক্রবার। আমি যখন সরকারি ছুটির সময় কাজ করেছি সেগুলো তারা গোনায় ধরেনি। বাংলাদেশের শ্রম আইন অনুযায়ী, আমি শুক্রবারে কাজ করার ছুটি পরে পাব। একজন বিসিবি চাকরিজীবী হিসাবে, আমি শুক্রবার ও বৃহস্পতিবারের অর্ধেক দিন মিলিয়ে দেড় দিনের ছুটি পাই।
আরেকটি ব্যাপার হলো, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) সময় বিদেশি কোচদের ছুটি নেওয়াটা একটা সাধারণ রীতি। এটি আমার কাছে ব্যতিক্রম কিছু নয় বরং আমার মেয়াদের আগে অনেক বিদেশি কোচের জন্য এটি স্বীকৃত ব্যাপার।
আমার মনে হচ্ছে এসব অভিযোগ পূর্বপরিকল্পিত। নতুন সভাপতির মেয়াদের প্রথম দিনে, তিনি প্রধান কোচকে অপসারণের ইচ্ছা প্রকাশ করে প্রকাশ্য বক্তব্য দিয়েছিলেন। আরেকজন প্রধান কোচ নিয়োগের মাত্র চার ঘণ্টা আগে শোকজ নোটিশ পেয়ে আমি হতভম্ব। সেখানে বলা হয়েছে যে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য ৪৮ ঘণ্টা দেওয়া হলো। ঘটনার ক্রমধারা এই কর্মকাণ্ডের পেছনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে গুরুতর প্রশ্ন তোলে।
উদ্ভুত পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে আমার নিরাপত্তা শঙ্কায় আমাকে বাংলাদেশ ছাড়তে বলা হয়েছে। এসব অভিযোগ, দ্রুত নতুন প্রধান কোচের নিয়োগ এবং যথাযথ প্রক্রিয়ার অভাব নতুন ম্যানেজমেন্টের উদ্দেশ্য এবং বিসিবির ভেতরের কর্মীদের আচরণের ব্যাপারে গুরুতর উদ্বেগ তৈরি করছে।
আমি আমার সম্মান রক্ষা করতে সংকল্পবদ্ধ এবং এই বিষয়ে যে কোনও তদন্তে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করবো। শেষ পর্যন্ত সত্যের জয় হবে, এবং আমি আমার ভালোবাসার খেলাতে ইতিবাচকভাবে অবদান রাখতে পারবো।
এ বিষয়ে আপনাদের সবার দৃষ্টির জন্য ধন্যবাদ
নিবেদনে
চন্ডিকা হাথুরুসিংহে