তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে আনা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট।
এ সংক্রান্ত রিট আবেদনের শুনানি শেষে সোমবার বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল চেয়ে রবিবার আবেদনটি দায়ের করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, ড. তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজ উদ্দিন খান, জবিরুল হক ভুইয়া ও জারাহ রহমান।
আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী রেদওয়ানুল করিম। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করে আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “শুনানিতে আমরা চারটি পয়েন্টে বক্তব্য দিয়েছি। তার মধ্যে যখন পঞ্চদশ সংশোধনী করা হয়, তখন সংবিধানে একটি অনুচ্ছেদে বলা ছিল, সংবিধানের অনেকগুলো অনুচ্ছেদের সংশোধনী করতে হলে গণভোটের দরকার হবে। কিন্তু তারা সেই গণভোট না করে পঞ্চদশ সংশোধনী করেন, যা অসাংবিধানিক।”
দ্বিতীয় পয়েন্টে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের আইন প্রণয়নের ক্ষমতাকে খর্ব করার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে জানিয়ে শরীফ ভূঁইয়া বলেন, “সংবিধান সংশোধন করতে হলে দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন প্রয়োজন। কিন্তু আবার অনেকগুলো অনুচ্ছেদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, কোনও সংসদ এই অনুচ্ছেদ সংশোধন করতে পারবে না। এখন কথা হলো, এটা করে জনগণের সাংবিধানিক অধিকারকে খর্ব করা হয়েছে। তার কারণ জনগণ তার প্রয়োজন অনুসারে সংবিধান সংশোধন করবে। এতে কেউ বাধা সৃষ্টি করতে পারে না। এটা জনগণের সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী।”
তৃতীয়ত পয়েন্টে পঞ্চদশ সংশোধনীকে সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর পরিপন্থী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে জানিয়ে এই আইনজীবী বলেন, “মৌলিক কাঠামের মধ্যে একটা হলো গণতন্ত্র, আরেকটি হলো নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচন। দুটি একটি আরেকটির পরিপূরক। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এই দুটিকে খর্ব করা হয়েছে। তার কারণ হলো তত্ত্ববধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে অবাধ, নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচন থেকে মানুষকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এতে করে গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। আজকে এ অবস্থার জন্য দায়ী এই সংশোধনী।
“চতুর্থ হলো, ত্রয়োদশ সংশোধনীর মামলায় আপিল বিভাগ একটি রায়ে বলেছিলেন– পরবর্তী দুটি নির্বাচন তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধীনে হতে হবে, কিন্তু পঞ্চদশ সংশোধনী করে সেই সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।”
শরীফ ভূঁইয়া বলেন, “আদালত আমাদের বক্তব্য শুনে রুল জারি করেছেন। আগামী আট সপ্তাহের মধ্যে সরকার, আইন সচিব, সংসদ সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।”
২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয়। এরপর একই বছরের ৩ জুলাই তাতে অনুমোদন দেন রাষ্ট্রপতি।
এই সংশোধনীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এ ছাড়া জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হয় পঞ্চদশ সংশোধনীতে।