জুলাই অভ্যুত্থানে আহতরা সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনের দাবিতে বিক্ষোভে নামার প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে যে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সরকার আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
রবিবার বিকালে আহতরা যখন ঢাকার শ্যামলীতে সড়কে বিক্ষোভ করছিল, তখন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক সায়েদুর রহমান, আহতদের চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন।
অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, “আমরা স্পষ্ট করতে চাই যে আহতদের যথাযথ চিকিৎসার ব্যাপারে আমাদের পক্ষ থেকে আন্তরিকতার কোনও ঘাটতি নেই।
“যথাসাধ্য সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা তাদের দিয়েছি। এছাড়া তাদের মানসিক কষ্ট এবং যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, সেখানে আমরা মনোযোগ দিয়েছি এবং দিচ্ছি।”
গত বছরের জুলাইয়ে শেখ হাসিনা সরকার হটানোর আন্দোলনে ১৩ হাজারের বেশি আহত হন। তাদের অনেকে এখনও হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েই আহতদের সুচিকিৎসার বিষয়টিতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া নির্দেশ দিয়েছিল।
“আমাদের চেষ্টা ছিল যে ছেলেগুলো হাত, পা, চোখ হারিয়েছে, তাদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবাটা দেওয়া।”
আহতদের মধ্যে ৩০ জনকে ব্যাংকক এবং সিঙ্গাপুরে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, “মুসা নামের এক শিশুর জন্য ইতোমধ্যেই ৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। তার আরও অস্ত্রোপচার হবে। হাসান নামের এক আহতের জন্য খরচ হয়েছে ৩ কোটি ৩৬ লাখের বেশি, সে এখনও কোমায় রয়েছে। কবে নাগাদ সুস্থ হবেন সেটাও অনিশ্চিত।”
“আমরা কখনও অর্থের কথা চিন্তা করিনি, আহতদের সুস্থ করে তোলা ছিল লক্ষ্য,” বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সায়েদুর বলেন, আহতদের চিকিৎসার জন্য জখম বিবেচনায় শ্রেণীভেদ করা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে এ, বি, সি, ডি নামে চারটা শ্রেণী ঠিক করা হয়েছে।
“মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলতে চাই, এটা বিজ্ঞানসম্মতভাবে তৈরি করা হয়েছে। আহতদের সে নিয়ে আপত্তি থাকলে তারা রিভিউ করতে পারে এবং আমরা এক্সপার্ট টিম দিয়ে সেটাও বিবেচনা করব।”
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠাতে অনেকের যে দাবি রয়েছে, তাও বিবেচনার মধ্যে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বিদেশে গমন এবং উচ্চতর চিকিৎসার ব্যাপারে যে সকল আবেদন থাকবে, সেগুলো বিশেষজ্ঞরা বিশ্লেষণ করার পর ব্যবস্থা নেব।”
পুনর্বাসনের দায়িত্ব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নয় জানিয়ে তিনি বলেন, তারপরও সব ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সহযোগিতা করবে।
আহতরা শনিবার রাত থেকে পঙ্গু হাসপাতালে বিক্ষোভ করছিল। রবিবার সকালে তারা শ্যামলীতে শিশুমেলার সামনের সড়ক অবরোধ করে। ফলে সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া নাঈম শেখ নামে একজন বলেন, ছয় মাস পরও তারা সুচিকিৎসার আশ্বাসই শুধু পেয়েছেন। তবে সেই আশ্বাসের বাস্তবায়ন হয়নি।
বিক্ষোভকারীরা সুচিকিৎসা, পুনর্বাসন ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে দিনভর সড়কে অবস্থান নিয়ে স্লোগান চালিয়ে যায়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলনের পর সন্ধ্যায় তারা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে রওনা হয়। তবে ইন্টার কন্টিনেন্টাল সংলগ্ন ভিআইপি সড়কের মুখে তাদের আটকে দেয় পুলিশ।