হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার সময় কোনও গাফিলতি হলে, কারও মৃত্যু হলে সে বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন বলে জনিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি জানান, এ কাজে আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে অভিযান শুরু হবে।
রবিবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ বার্তা দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শনিবার দেখা করেছেন জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে সামন্ত লাল সেন বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছেন, এ ব্যাপারে তুমি ‘জিরো টলারেন্স’।
“কোনও রকম অনিয়ম, কোনও রকম গাফিলতির জন্য কোনও বাচ্চা যদি মারা যায়, তুমি তোমার মতো ব্যবস্থা নেবে। এরকম কড়া নির্দেশ উনি আমাকে দিয়েছেন।”
খৎনা করাতে গিয়ে গত দুই মাসে দুই শিশুর মৃত্যুতে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী এ নির্দেশনা পেয়েছেন বলে জানান।
গত ৩১ ডিসেম্বরে রাজধানীর সাঁতারকুলের ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খতনার জন্য অজ্ঞান করার পর আর জ্ঞান ফেরেনি শিশু আয়ান আহমেদের। অবস্থা খারাপ হওয়াতে আয়ানকে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে সাত দিন লাইফসাপোর্টে রাখা হয়। এরপর ৭ জানুয়ারি তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। সেই ঘটনার রেশ না কাটতেই গত ২০ জানুয়ারি রাতে মালিবাগে অবস্থিত জেএস ডায়াগনস্টিক সেন্টারে খতনা করতে এসে মারা যায় ১০ বছরের আহনাফ তাহমিদ আয়হাম।
এর প্রক্ষিতে তাৎক্ষণিকভাবে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং জেএস ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে সিলগালা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এরপর গত ২২ ফেব্রুয়ারি দেশের সব বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিককে ১০ নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) স্বীকৃত নন এমন কোনও অবেদনবিদ বা অ্যানেস্থেসিওলজিস্টকে দিয়ে এখন থেকে আর অস্ত্রোপচার সংক্রান্ত কাজ করানো যাবে না। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোনও অবস্থাতেই লাইসেন্স প্রাপ্ত বা নিবন্ধিত হাসপাতাল ও ক্লিনিক ছাড়া চিকিৎসকের চেম্বারে অথবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়া যাবে না। আবার যিনি অ্যানেস্থেসিয়া দেবেন তাকে অবশ্যই বিএমডিসি স্বীকৃত বিশেষজ্ঞ অবেদনবিদ হতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “আপনারা জানেন, কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে, সেটার পর্যালোচনা করে আমরা সবাই আলাপ-আলোচনা করলাম, কীভাবে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা যায়। ইতোমধ্যেই আপনারা জানেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, কীভাবে ক্লিনিক পরিচালনা করবে, কী কী ক্রাইটেরিয়া থাকা লাগবে।”
“এটি (স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা) গত বৃহস্পতিবার আমরা দিয়েছিলাম আজ রোববার। আমরা তিন চার দিন সময় দিয়েছিলাম, দেখি কী করে। আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, এটা আমি নিজে মনিটর করব।”
এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী চিকিৎসকদের উদ্দেশে বলেন, “আমার চিকিৎসক ভাই-বোনদের বলতে চাই, আমরা সেই জায়গায় অপারেশন করব… অপারেশন করার আগে আমাদের দেখতে হবে সেখানে সাপোর্টিং জিনিস আছে কি না। সেটা অপারেশন করার জায়গা নাকি জায়গা না।”
“আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেক অপারেশন করেছি” বলেন ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি বলেন, “সুতরাং আমি জানি কোথায় কী কী লাগে, কী কী ক্রাইটেরিয়া লাগে অপারেশন করার জন্য। সেগুলো না থাকলে কোনও অবস্থাতেই এটা করা যাবে না।
“যদি কেউ একটা ভায়োলেট করে, আমাদের যতরকম আইন অনুযায়ী…”
তিনি বলেন, “বিএমডিসি হচ্ছে আমাদের ( চিকিৎসকদের) সর্বোচ্চ আদালত। ইতোমধ্যে আমি বিএমডিসির সঙ্গে কথা বলেছি, এই তিনটি (অ্যানেসথেসিয়া দিয়ে খৎনা ও অ্যান্ডোসকপি করাতে গিয়ে মারা যাওয়ার ঘটনা) বিষয় ইনভেস্টিগেশন করার জন্য এবং যদি কেউ দোষী সাব্যস্ত হয়, তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। আমার কথা চিকিৎসকদের সুরক্ষা দেব, রোগীদেরকেও সুরক্ষা দেব।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া ১০ দফা নির্দেশনার বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজেই বিষয়টি মনিটর করবেন বলে জানান।
তিনি বলেন, “আমি আপনাদের আগেও বলেছি, এখনও বলছি, আমি এ ব্যাপারে জিরো টলারেন্স। আমি এ ব্যাপারে কোনও ছাড় দেব না, যার যেখানে যে যোগ্যতা, সেই যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ করবে, এর বাইরে কাজ করতে পারবে না। এটা ক্লিয়ার।”
অবৈধ ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “অবৈধ ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান। অতীতে কী হয়েছে সেটা… আমি তো বলছি, এটা আমি চলমান রাখব।”
নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমি সেদিন ময়মনসিংহ গিয়েছিলাম, আসার সময় ডানে-বাম কত ক্লিনিক। এটাতো আমার একার পক্ষে সম্ভব না, এটার জন্য সবার, আপনাদের ভূমিকা লাগবে, স্থানীয় সংসদ সদস্যদের ভূমিকা লাগবে। সামগ্রিকভাবে যদি এটার বিরুদ্ধে অভিযান চালানো যায়, এটা সম্ভব।”