বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানির তারিখ পিছিয়ে ২৭ নভেম্বর ধার্য করেছে আদালত।
বুধবার শুনানি শেষে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক মো. আবু তাহের এ তারিখ ধার্য করেন বলে জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী আব্দুল হান্নান ভূঁইয়া।
এদিন খালেদা জিয়াসহ ৭ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানির দিন ধার্য ছিল। আব্দুল হান্নান ভূঁইয়া তার পক্ষে হাজিরা দেন।
দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির ঠিকাদার নিয়োগে অনিয়ম ও ১৫৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি মামলাটি করা হয়। বাদী ছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তৎকালীন সহকারী পরিচালক মো. সামছুল আলম। মামলায় খালেদা জিয়া ও তার মন্ত্রিসভার সদস্যসহ ১৩ জনকে আসামি করা হয়।
আসামিদের মধ্যে জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। আরেক আসামি ব্যারিস্টার আমিনুল হক ২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল মারা যান।
এই মামলার আসামি বিএনপি নেতা ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী এম কে আনোয়ার ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর, সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম শামসুল ইসলাম ২০১৮ সালের ২৬ এপ্রিল এবং সাবেক জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশারফ হোসেন ২০২০ সালের ১৭ অক্টোবর মারা যান।
অন্য আসামিদের মধ্যে আছেন- সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন, মো. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, হোসাফ গ্রুপের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন, সাবেক জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ সচিব নজরুল ইসলাম এবং পেট্রোবাংলার সাবেক পরিচালক মঈনুল আহসান।
গত ৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা মওকুফ করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। তবে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জানান, এ দুটি মামলাসহ সব মামলা খালেদা জিয়া আইনিভাবে মোকাবেলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
৭৯ বছর বয়সী সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, আর্থ্রাইটিস, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। বিভিন্ন সময়ে ঢাকার এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে তাকে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনেকবার অসুস্থ খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসার জন্য নিতে চেয়েছে তার পরিবার। কিন্তু কোনোবারই সরকারের ছাড়পত্র মেলেনি। আইনের মারপ্যাঁচে দেশেই চিকিৎসা নিতে হয়েছে তাকে।
নতুন সরকার আসার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে লন্ডনে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয় ২০১৮ সালে। এর দুবছরের মাথায় ২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারি শুরু হলে খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করে তার পরিবার।
এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সেসময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার নির্বাহী আদেশে শর্ত সাপেক্ষে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়। শর্ত ছিল যে, তাকে নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে এবং তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না।
মহামারি শেষ হলেও এরপর অবশ্য খালেদা জিয়াকে আর কারাগারে যেতে হয়নি। নিয়মিতভাবে সাময়িক মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়।